স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রহসনের বিচার বন্ধ এবং তাদের দ্রুত মুক্তির দাবিতে সেইভ বাংলাদেশ নামক ইউরোপভিত্তিক একটি সংগঠনের সংগঠনটি লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন ঘেরাও এবং স্মারকলিপি দিয়েছে। এর আগে ‘আলেম বাঁচাও ঈমান বাঁচাও’ এই শ্লোগানে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। গণবিরোধী এই সরকারের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তড়িঘড়ি করে বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তারই অংশ হিসেবে জামায়াতের অন্যতম নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের নামে প্রহসনের কাজ দ্রুত সম্পাদনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
সংগঠনের আহবায়ক ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই স্মারকলিপি প্রদানপূর্ব সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবুবকর মোল্লা, বাংলাদেশ সেন্টার ফর সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট এর চেয়ারম্যান মুহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক, খেলাফত মজলিশ যুক্তরাজ্যর আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের সালেহ, জমিয়াতুল ওলামা ইউরোপের সভাপতি মুফতি শাহ সদরুদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোট যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি ও জমিয়াতুুল ওলামা ইউরোপের সেক্রেটারি মাওলানা শোয়েব আহমদ, সাবেক শিবির নেতা মোঃ আব্দুল মুকিত রাজিব, ফ্রি মাওলানা সাঈদী ফেডারেশনের আহবায়ক আখতার হোসাইন কাওসারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ থেকে সংগঠনের আহবায়ক ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ হাইকমিশনে স্মারকলিপি পেশ করেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকার বিদেশী প্রভুদের খুশি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। এই সরকারের লক্ষ্য কেবল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দেয়া নয়, বরং প্রকৃত বাংলাদেশীদের কণ্ঠরোধ করে দেয়া। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রহসনের বিচারকে ত্বরান্বিত করে এই সরকার একটি বিষয়ই প্রমাণ করতে চাইছে আর তাহলো ইসলাম নিয়ে যারা সোচ্চার তাদের কন্ঠকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া। বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ইসলামপ্রিয়। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ইসলামের একজন একনিষ্ঠ প্রচারক। তার কুরআনের তাফসীরের কারণে মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জেনেছে। অনেকে মুসলমান হয়েছেন। মূলতঃ জনগণের মাঝ থেকে ইসলামকে মুছে ফেলতেই সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে বিচারের নামে প্রহসন করা হচ্ছে।
তারা বলেন, সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ৪০ বছর আগে মীমাংসিত কথিত যুদ্ধাপরাধকে ইস্যু বানিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করছে। যে আইনে জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিচারের কথা বলা হচ্ছে সে আইন সংবিধান বিরোধী ও মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। ইতোমধ্যেই ইউরোপ, আমেরিকার প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে কালো আইন বলে আখ্যায়িত করেছে। মূলত এই আইন প্রণীত হয়েছিল ১৯৫ জন বিদেশী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য। কথিত বিচারের নামে সরকার যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তাও আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজনদের দিয়ে। মূলত: সরকার ঘাদানিকদের দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের নামে তামাশা করছে। আসলে সরকার জাতীয় নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন করতে চায়। কিন্তু এই আদালতের বিচার জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। তারা বিচারের নামে নাটক বন্ধ করে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
দেশের মানাবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখ করে তারা বলেন, আজ পুরো দেশ একটি কারাগারে পরিণত হয়েছে। পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। মূলত দেশে এখন বাকশালতন্ত্র চলছে। এই অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে দেশের জনগণকে সোচ্চার হবার জন্য নেতৃবৃন্দ আহবান জানান। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইট ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে আবারও শেখ মুজিবের একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে নেয়া হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর চালানো হচ্ছে হামলা আর মামলার নীতি। মূলত: আড়াই বছরের শাসনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ এই সরকার এখন নির্যাতনের মুখে টিকে থাকার খায়েশ নিয়ে কাজ করছে। তবে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা ভেবে থাকলে ভূল করবে বর্তমান সরকার। অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়ানোর ইতিহাস বাংলাদেশী জাতিসত্ত্বার মধ্যে নেই। সময় থাকতেই গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির দিকে ফিরে আসার জন্য আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতি তারা আহবান জানান।