মোঃ মাহবুব আলী খানশূর , লন্ডন থেকে
লন্ডনে হাসিনা হোটেলের সামনে বিএনপি আওয়ামী লীগে মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পালায়ন। যুক্তরাজ্যে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে হোটেলে অবস্থান করছেন সেই তাজ হোটেলের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার লন্ডন সময় বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়।
স্থানীয় সময় বিকেলে ৭টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করে। ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তৃতীয় দিনের মতো প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানরত তাজ হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করে যুক্তরাজ্য ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। বিরোধীজোটের নেতাকর্মীরাদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে রোববার লন্ডনে পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা। আবারো প্রতিবাদ আবারো শেখ হাসিনার ইমেজ সংকট। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নসহ গুম-খুন ইস্যুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তাপ এবার ছড়িয়ে পড়েছে লন্ডনেও।
বুলগেরিয়ায় অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল উইমেন লিডারস ফোরামে যোগ দিতে ইউরোপ সফরে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাত দিনের ওই সফরের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য বিএনপি তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। মঙ্গলবার ঘোষিত কর্মসূচির শেষ দিন ছিল।
লন্ডনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মীদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়ে জীবন বাঁচাতে শেখ হাসিনার গাড়ী অতিদ্রুত তাজ হোটেলের ভিতরে ঢুকে পড়ে।
২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মীরা বৃষ্টির মতো হাসিনার হোটেলেকে লক্ষ্য করে বোতল, পঁচা ডিম, ঝাড়ু, জুতা, ঢিল ছুড়ে মারতে থাকে। এইবারের লন্ডন সফরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতা হাসিনা বৃদ্ধি করে বৃটিশ বাংলাদেশীদের বিক্ষোভের মুখে থেকে বাঁচতে কিন্তু ফলাফল উল্টে হলো অতীতের যেকোনো বিক্ষোভ থেকে এবারের বিক্ষোভে বেশি পরিমাণে ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মী ছাড়াও বৃটেন প্রবাসী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষ অংশ গ্রহণ করে ।
ওয়েস্ট মিনিস্টারের তাজ হোটেলের সামনে আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকে। পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাঁচ শতাদিক বৃটিশ পুলিশ খিমশিম খায়।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে ওয়েস্ট মিনিস্টারের তাজ হোটেলের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইউকে বিএনপি’র সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, যুক্তরাজ্য বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ্, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপের মূখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, জমিয়তে ওলামা ইউকের সভাপতি মুফতি শাহ সদর উদ্দিন, বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরে আলম দিদার, সাবেক শিবির নেতা নাওশীন মোস্তারী মিঞা সাহেব,সাইফুল ইসলাম, মোঃ সালাহ উদ্দিন, মোঃ ফয়েজ উল্লাহ, আব্দুল কাদের জিলানী, কাজী মুহম্মদ আল আমিন, মুহম্মদ মুহিবুল্লাহ, আলী শাহাজাদা , তরিকুল ইসলাম, মোঃ রিফাত মাহমুদ ভূঁইয়া,মোঃ রাসেল মাহমুদ, ছাত্রনেতা হাসিবুল হাসান, যুবদল নেতা মোঃ সাকোয়াত হোসেন,মুহম্মদ এবি সেলিম, সাবেক ছাত্রদল নেতা আল নাহিয়ান বিন মুরাদ, মনিরুল হক, মোঃ তানজিল ইসলাম, খুলনা জেলা বিএনপি‘র সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুর হাসান, অনলাইন একটিভিসট শরিফুজ্জামান তপন, মোজাহিদ আলী, বিএনপি নেতা শাহিন আহমেদ, মনজুরুল ইসলাম, সাইফুর রহমান,মানবাধিকার কর্মী এসকে তরিকুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রদল নেতা মোঃ আব্দুল্লা আল মামুন, মোঃ তোফাজ্জল হোসাইন , এ এ ওয়াহিদুল ইসলাম, মোঃ কবির উদ্দিন, মোঃ আব্দুস সামাদ, সাবেক শিবির নেতা সায়েম আহমেদ, আব্দুল আলীম, সেচ্ছাসেবক দলের মোঃ আরিফুর রহমান খান, মোহাম্মাদ সাদেকুর রহমান, সালমান সাদী, মোঃ মহিন উদ্দিন, সৈয়দ তারেক আহমদ, কমিউনিস্ট পার্টি নেতা মোঃ ইলিয়াস শাহ্, মো: আব্দুল মুকিত রাজিব, হাসান মোর্শেদ, মোঃ মিজানুর রহমান ফারমান, যুবদল নেতা কাজী তাজ উদ্দিন আহমেদ, ফজলে রহমান পিনাক,মাহবুবুর রহমান, শাহাদ আলম, মাসুদ রানা, অলিউর রহমান, আমিনুল ইসলাম, শরফুজ্জামান শরফু, আব্দুল মতিন প্রমূখ।
বাংলাদেশে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, হত্যা, হামলা, মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও বিচারিক হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য বিএনপি এ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে। প্রতিবাদকারীরা হাসিনার পতন দাবি করে স্লোগান দিতে থাকে। এছাড়াও, বিভিন্ন ব্যঙ্গ বিদ্রুপ পূর্ণ ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে। গনতান্ত্রীক দেশ বৃটেনে কোনো স্বৈরাচারের জায়গা হবেনা। যেখানেই হাসিনা সেখানেই প্রতিরোধ এই মর্মে শপথ নিয়ে কর্মসূচী সফল করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অবিলম্বে হাসিনাকে পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপের মূখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, ক্ষমতা দখলের পর থেকেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম ও নির্যাতনের যে স্টিম রোলার চালাচ্ছেন তা ১৯৭১ সালের পাক বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানায়। অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়ে কোনো সরকারই টিকে থাকতে পারেনি আর শেখ হাসিনাও পারবেন না। বাংলাদেশের জনগণ তাকে টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাবে।
জমিয়তে ওলামা ইউকের সভাপতি মুফতি শাহ সদর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন শেখ হাসিনা। তাই গণতন্ত্রের পাদপীঠ ব্রিটেনে তার বিরুদ্ধে আমরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অন্চল থেকে সেইভ বাংলাদেশের ব্যানারে জামায়াত শিবিরের সহস্রাধিক নেতাকর্মী যোগ দেয়। এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় যুক্তরাজ্য অনেক প্রবাসী নাগরিক । আমীরে জামায়াত মাওলানা নিজামীর ফাসির নামে হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়। ব্যানার ও ফেস্টুন উঁচু করে প্রতিবাদ জানায়।
সমাবেশে বক্তারা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যুক্তরাজ্যের যেখানে শেখ হাসিনা সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। তারা অবিলম্বে শেখ হসিনাকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ফরমান , হাসান মোরসেদ, শাহাদ আলম, মাসুদ রানা, সালমান সাদি, তানজিল ইসলাম, সায়েম আহমদ, নাওশীন মোস্তারী মিঞা সাহেব, আব্দুল আলিম, এ এ ওয়াহিদুল ইসলাম