স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় তাকে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আব্দুল্লাহ আল জাবির । তিনি ২০১৩-১৪ সেশনের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের বিভাগের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, মারধরের ঘটনায় হল ছাত্রলীগের সভাপতি দারুস সালাম শাকিল ও সেক্রেটারি ইয়াজ আল রিয়াদ এর নির্দেশে ছাত্রলীগ নেতা বরিকুল ইসলাম বাধন, ফয়সাল খান, আলামিন হুসাইন, আকমল হোসেন, ইলিয়াস হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী জড়িত।
নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সন্ধ্যা ৭ টায় শিবির সন্দেহে আব্দুল্লাহ আল জাবিরকে হলের ২২০ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যায় হল ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি । সেখানে তাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করা হয় ওইদিন সকালের প্রোগ্রামে অংশ গ্রহন না করার কারন কি ? তখন জাবির জানায়, সে অসুস্থ ছিলো । পরে তার মোবাইল নিয়ে চেক করে সেখানে শিবিরের প্রোগ্রামে ছবি পায় ছাত্রলীগের নেতারা। এছাড়া শিবিরের অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে তার টেক্সট ম্যাসেজ আদানপ্রদান পাওয়ায় তাকে মারধর করতে শুরু করে হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তাকে জেরা করতে থাকে, হলে তার সাথে আর কে বা কারা শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত। তাদের নাম প্রকাশ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে । জাবির কারো নাম প্রকাশ না করায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তার পা এবং হাত একসাথে বেধে উল্টো করে সিলিং এর সাথে ঝুলিয়ে পেটানো শুরু করে। মারের একপর্যায়ে তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরা শুরু করলে মারা বন্ধ করে আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে কিন্তু সে কারো নাম প্রকাশ না করায় তাকে আবারো বাঁশ ও কাঠ দিয়ে পেটানো শুরু করে। একপর্যায়ে তার ফোন থেকে তার মাকে ভিডিও কল দিয়ে তাকে মারার দৃশ্য দেখানো হয় । তার মা ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করে বলে, দরকার হলে তিনি তাদেরকে টাকা দিবেন । পরে ওই কল কেটে দিয়ে মোবাইলটি বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা ।
এভাবে নির্যাতনের এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তখন তারা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ছাত্রলীগের কর্মীরা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মফিজুর রহমানকে ডেকে তাকে দেখান জাবির নামে ওই শিবির কর্মী সরকার বিরোধী কাজে জড়িত। জাবির সে সময় অধ্যাপক মফিজুরকে পেয়ে অনুনয় বিনয় করতে থাকেন তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি তার কথা না শুনে ছাত্রলীগের কথামতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম ডেকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য থানায় নিয়ে যেতে বলেন।
পরে জাবিরকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে পুলিশ তাকে থানায় না রেখে পুলিশ ভ্যান দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীর সারা শরীর জুড়ে মারধরের চিহ্ন । বিশেষ করে পুরো পিঠ জুড়ে মারের কালশিটে দাগ ও ছোপছোপ রক্ত।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ছাত্রলীগের আজকের সকালের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ না করার কারনে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো কিন্তু তাকে মারা হয়নি । তখন তার শরীরের জখমের কারন জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানান , সেটা তারা জানেন না।
ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ আল জাবির বলেন, গতকাল সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগেরপ্রোগ্রাম ছিলো । সেখানে অংশগ্রহণ না করার সূত্র ধরে তারা আমাকে হলের ২২০ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার ফোন চেক করে এবং আমার উপরে রাতভর শারিরীক নির্যাতন চালায়। সবচেয়ে বেশি মারধর করে আলআমিন, ইলিয়াস ও ফয়সাল। অভিযুক্ত দারুস সালাম শাকিল ও আলআমিন ইসলাম বলেন, সে (জাবির) শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত । তার ফোনে ক্যাম্পাসের বাইরে সরকার বিরোধী তৎপরতার প্রমান পেয়ে আমরা হলের প্রভোস্টকে জানাই। প্রভোস্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মফিজুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি তার ব্যস্ততা দেখিয়ে বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়ে জানান এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে এরকম শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয় অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা হলগুলোতে তাদের সিট থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলিগের কারনে অবস্থান করতে পারছেনা সব হল গুলোতেই বর্তমানে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য চলছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব নিরবে হজম করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভয়ে। আর সবকিছু জেনেও হল প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বিক ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে।