সরকার মনে করেছিল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বন্দী করে বিএনপিকে তছনছ করে দেবে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা বুমেরাং হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া এখন ‘দেশনেত্রী’ থেকে ‘বিশ্বনেত্রীতে’ পরিণত হয়েছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক জনসভায় এ মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের নুর আহমেদ সড়কে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এই জনসভার আয়োজন করে। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বিএনপি জনসভার ডাক দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন লালদীঘির পরিবর্তে কাজীর দেউড়ির নুর আহমেদ সড়কে জনসভা করার অনুমতি দেয়।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেমের সঞ্চালনায় জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জনসভায় বক্তব্য দেন মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার কথা বলতে চায় না। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ভর করেছে।
ফখরুল আরও বলেন, খালেদা জিয়া রাজপথে নামলে সরকারের তখতে তাউস তছনছ হয়ে যাবে বলেই তাঁকে অন্যায়ভাবে নির্জন প্রকোষ্ঠে বন্দী রাখা হয়েছে। আজ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লুট হয়ে গেছে। জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে লুট হওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার মনে করেছিল খালেদা জিয়াকে বন্দী করে বিএনপিকে তছনছ করে দেবে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা বুমেরাং হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া এখন ‘দেশনেত্রী’ থেকে ‘বিশ্বনেত্রীতে’ পরিণত হয়েছেন। মোশাররফ সমাবেশে খালেদা জিয়াকে ‘দেশমাতা’ উপাধি দিয়ে সবাইকে দুই হাত তুলতে বলেন। নেতা-কর্মীরা হাত তুলে তাতে সমর্থন দেন। এরপর মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে এবং আগামী দিনে সরকার গঠন করবে।
বিপদে বন্ধুর পরিচয়, কিন্তু ভারত এ পরিচয় দেয়নি
মওদুদ আহমদ বলেন, যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, সে দেশে আইনের শাসন থাকে না। সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভার এই চট্টগ্রামবাসীর ওপর পড়বে। তিনি বলেন, বিপদে বন্ধুর পরিচয়। কিন্তু বাংলাদেশের এ বিপদে ভারত বন্ধুর পরিচয় দেয়নি। এ সরকার না চাইতে ভারতকে অনেক কিছু দিয়েছে। অথচ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা ভারতের সমর্থন পায়নি। মওদুদ জাতিসংঘের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি কারও কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি ভিক্ষা চায় না। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছে, তাঁদেরও মুক্তি আমরা চাই না। গণতন্ত্রকে মুক্ত করার পর আমরা সবাইকে মুক্ত করে আনব।’
আবদুল মঈন খান বলেন, জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনও চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলো।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৬ কোটি মানুষ খালেদা জিয়ার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে। বর্তমান সরকার স্বৈরতন্ত্র ও বাকশালের পথে হাঁটছে। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। এ কারণেই আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়াকে ভয় পায়, জনগণকে ভয় পায়।