তিন দশক আগে পরিবারে আর্থিক হাল ফেরাতে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব এক মহিলা। কিন্তু পথ হারিয়ে দিল্লির বদলে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজস্থানে— অজমেঢ় শরিফে।
এরপর কেটে গিয়েছে ৩৫টা বছর। নন্দকুমার থানার শ্রীধরপুর গ্রামে তাঁর পরিজনেরাও তাঁকে প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। কিন্তু কলকাতার ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’র উদ্যোগে বৃদ্ধাবস্থায় সোমবার নিজের দুই ছেলের কাছে ফিরলেন নিখোঁজ মাজেদা বিবি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শ্রীধরপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজেদার স্বামী শেখ ইয়াকুব পেশায় শ্রমিক ছিলেন। পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে দিল্লিতে গিয়ে তিনি কাজ করতেন। দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়িতেই থাকতেন মাজেদা। কিন্তু আর্থিক অনটনে এক সময় তিনিও দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই মতো বাড়ি থেকে বেরিয়েও ছিলেন। কিন্তু হাওড়া থেকে ভুল ট্রেনে উঠে তিনি রাজস্থানে পৌঁছন।
ভাষাগত সমস্যা ও বিভিন্ন কারণে মাজেদার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। অজমেঢ় শরিফে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন কাটাতেন। বছর ছয়েক আগে তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয় ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’র সদস্যেরা। চিকিৎসায় মাজেদা সুস্থ হলেও নিজের পরিচয়, ঠিকানা বলতে পারেননি। তবে বাংলা ভাষায় কথা বলায় তাঁকে কলকাতার ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’র আশ্রমে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি মাজেদা নিজের নাম-ধাম জানান। এর পরেই ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’র পক্ষ থেকে নন্দকুমার থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ দিন বিকেলে ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’র সদস্যরা মাজেদাকে নিয়ে নন্দকুমার থানায় যান। পুলিশের সহায়তায় দুই ছেলের হাতে তুলে দেওয়া হয় ওই বৃদ্ধাকে।
দুই ছেলে শেখ মুস্তাফা এবং শেখ মুরতাজা পেশায় শ্রমিক। ২০ বছর আগে স্বামী শেখ ইয়াকুব মারা গিয়েছেন। মাজেদার আত্মীয় সফি মহম্মদ বলেন, ‘‘মাজেদা আমার মাসি হন। ৩৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক খুঁজেও সন্ধান পাইনি। এতদিন পরে যে ওঁকে ফিরে পাব ভাবতেও পারিনি।’’