বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ২৩ জনের কফিননেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ আজ সকালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করেছে নেপাল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস এ তথ্য জানিয়েছেন। দূতাবাসের আঙ্গিনায় লাশের কফিনগুলো সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর আত্মীয়-স্বজন এবং দূতাবাস কর্মীরা মিলে নিহতদের জানাজা পড়েন। কফিনে আপনজনের নাম লেখা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। রাষ্ট্রদূত জানান, ২৩ জনের লাশ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সকাল ৯টায় জানাজা শেষে নাম লেখা কফিনের পাশে স্বজনরা কিছুক্ষণ থাকার সুযোগ পান। এরপর সোয়া ৯টার দিকে বিমানবন্দরে নেওয়ার উদ্দেশে গাড়িতে তোলা হয় কফিন।
রোববার সন্ধ্যায় নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস জানান, নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ আজ দেশে আনা হচ্ছে। বাকি তিনজনের মরদেহ এখনও শনাক্ত হয়নি। এ তিনজনের ক্ষেত্রে যদি ডিএনএ টেস্ট করাতে হয় তাহলে সময় লাগবে ১০ থেকে ২১ দিন।
কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে আলিফউজ্জামান, পিয়াস রায় ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের লাশ এখনও শনাক্ত হয়নি।’
কফিনে আপনজনের নাম দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা (ছবি-রামীম হাসান)সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘ডিএনএ টেস্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সময় লাগবে ১০ দিন, আর নেপালিরা বলেছেন তিন সপ্তাহের কথা। সে অনুযায়ী ১০ থেকে ২১ দিন সময় লাগবে বলা যায়।’
তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সিভিল এভিয়েশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। নেপাল এরই মধ্যে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। আমাদের তিন সদস্যের টিম তাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন। সবকিছু হবে নিয়ম মেনে। এক্ষেত্রে দূতাবাস সম্পৃক্ত নয়। যদি দূতাবাসের দরকার হয় তাহলে আমরা সেটুকু করবো।’
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুই দেশের তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে আমরা সেটাকেই সত্য ধরে নেবো। এ ক্ষেত্রে অনুমানের কোনও সুযোগ নেই।’
ইউএস-বাংলা ক্ষতিপূরণ কীভাবে দেবে বা কখন দেবে, এ ব্যাপারে আপনার কাছে কী তথ্য আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এখনই বলা কঠিন। এ বিষয়ে বেশ কিছু নিয়ম মেনে কাগজপত্র তৈরি করতে হয়। দীর্ঘসূত্রতার ব্যাপার আছে। যদি কোনও পক্ষ দূতাবাসের সহায়তা চায়, তাহলে আমরা অবশ্যই সহায়তা করবো।’
নেপালি ছয় সদস্যের তদন্ত দলের প্রধান ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব নেপালের সাবেক প্রধান যজ্ঞ প্রাসাদ গৌতম জানান, এখন পর্যন্ত তারা যত নথি হাতে পেয়েছেন তাতে এই ইঙ্গিতই আছে বিমানের অবতরণ ঠিক ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে দোষারোপ করছি না… তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর পরিষ্কার হয়ে যাবে কী কারণ, দায়ী কে।’
১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগ-মুহূর্তে বিধ্বস্ত হওয়ায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন নিহত হন। ৬৭ যাত্রী ও চারজন ক্রুসহ ৭১ আরোহীর মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৬ জন।
নিহতদের মধ্যে নেপালের ২২ জন ছাড়া চীনের একজন যাত্রী রয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি, ১২ জন নেপালের ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক।
নিহত বাংলাদেশিরা হলেন, ফয়সাল আহমেদ, আলিফউজ্জামান, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, মো. রকিবুল হাসান, সানজিদা হক, মো. হাসান ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, এফ এইচ প্রিয়ক, তামাররা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, পিয়াস রায়, উম্মে সালমা, অনিরুদ্ধ জামান, মো. নুরুজ্জামান ও মো. রফিকুজ্জামান, ফ্লাইটের পাইলট আবিদ সুলতান, পৃথুলা রশীদ, শারমীন আক্তার নাবিলা ও খাজা হুসাইন।