কথায় বলে ‘অসির চেয়ে মসি বড়’ যা ইংরেজি প্রবাদ ‘পেন ইজ মাইটার দ্যান সোর্ড’ এর ভাবানুবাদ। আর জ্ঞানের এক শক্তিশালি অস্ত্র হল কলম। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই কলম কিন্তু একদিনে আবিষ্কার হয়নি। এর আছে বিস্তৃত ইতিহাস।
কলম মানে লেখনী। ইংরেজি পেন (pen) শব্দ এসেছে ল্যাটিন শব্দ পেন্না (penna) থেকে, যার মানে হল পাখির পালক। এক কালে পালকের কলম ব্যবহার করা হত। কলম বা লেখনী বা পেন প্রধানত লেখালেখির কাজে ব্যবহৃত একটি উপকরণ।
এর ইতিহাস প্রায় ৫ হাজার বছরের। প্রাচীন মিসরীয়রা সম্ভবত প্রথম কলম দিয়ে লেখা শুরু করে। সে সময় অবশ্য কোনো কাগজ ছিল না। তারা লিখত বিভিন্ন গাছের পাতা ও বাকলের ওপর। কলম হিসেবে ব্যবহার করা হতো নলখাগড়া, শর বা বেণু বাঁশের কঞ্চি অথবা ফাঁপা খণ্ড। এসব খণ্ড কলমের মতো করে কেটে সূচালো করে তা কালির মধ্যে চুবিয়ে লেখা হতো। কালিও ছিল গাছের কষ ও নানা রকম প্রাকৃতিক উপাদানে প্রস্তুত।
এভাবে চলে বহু শতাব্দী। ৫ শতক থেকে কঞ্চি বা নলখাগড়ার জায়গা দখল করে পাখির পালক। রাজহাঁসের পালক ছিল সে যুগে কলম তৈরির প্রধান উপকরণ। পালককে শক্ত করে তার গোড়া বা মাথা সূক্ষ্মভাবে সূচালো করা হতো যাতে লিখতে আরাম হয়।
কলমের আবিষ্কার ও ইতিহাস: আদিম অবস্থায় মানুষ যখন গুহায় ভিতরে বাস করত তখন গুহার ভিতরের দেওয়ালে কোন তীক্ষ জিনিস দিয়ে ছবি আকঁত বা হিজিবিজি আকঁত যাকে। আবার অনেক সময় কোন পাতা বা শিকারের রস বা রক্ত দিয়ে আকিবুকি কাটত। তার অনেক পরে যখন সভ্যতার একটু একটু উন্মেষ ঘটল তখন কাদামাটির পাটায় বা নরম পাথরে লিখা শুরু করে, এদের মাঝে চীনে উটের লোম দিয়ে তৈরি তুলির ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
তবে সম্ভবত প্রথমে মিশরীয়রা একটা কাঠির ডগায় তামার নিবের মত কিছু একটা পরিয়ে লিখা শুরু করে। আর প্রায় হাজার চারের বছর আগে গ্রীসবাসীরা রীতিমত লিখা শুরু করে দেয়। এদের কলম তৈরি হত হাতির দাঁত বা এই জাতীয় কিছু দিয়ে। যার নাম ছিল স্টাইলস (Stylus)। সেজন্য এখনও লিখার ধরন কে “স্টাইল” (Style) বলা হয়ে থাকে। আর মধ্যযুগে কাগজের আবিস্কারের পরে পালকের কলম দিয়ে লিখা প্রচলিত হয়।
প্রাচীন কালের এমন অনেক কলমই রয়েছে যা বর্তমানে শুধুমাত্র জাদুঘরেই দেখা যায়। চলুন আমরা কিছু সেসব কলমের কথা জেনে আসি।
খাগের কলম: খাগ বা নলখাগড়া, বাঁশ ইত্যাদির একদিক সরু করে কেটে মাথাটা সূক্ষভাবে চিরে এই কলম তৈরি করা হত। এর যান্ত্রিক প্রক্রিয়া কুইলের মত। বিভিন্ন রকম খাগের কলম ব্যবহার করা হত।
বন গাছের কলম: খাগ বা নলখাগড়া বন এক প্রকার গাছ, অনেকটা বাঁশের কঞ্চির মত। এক সময় এই বন গাছের দ্বারা তৈরি কলম ব্যবহার করা হত। বনের কলম কে কালীর দোয়াতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখলে এটি কালি শোষণ করে নিত। এটির কাণ্ড ফাঁপা অনেকটা এখন কার বিভিন্ন রং এর খাতায় দাগ টানার জন্য যে কলম আমরা ব্যবহার করি তার ভিতরের স্পঞ্জের শিষের মত বলে সহজে কালি শুষে নিত। এর পর চলত তা দিয়ে লিখা। কালি শেষ হলে আবার চুবিয়ে নিতে হত।
বাঁশের কঞ্চির কলম: খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। আমাদের অনেক দাদারা (৪০-৫০ বছর আগে) বাঁশের তৈরি কলম দিয়ে প্রথম লিখা শিখার হাতে খড়ি নিয়েছে। বাঁশের কঞ্চিকে ৪-৫ ইঞ্চি পরিমাণ কেটে নিয়ে তার এক প্রান্ত চোখা করে তাতে কালি ভরে কলম হিসেবে ব্যবহার করা হত।