এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনভর যানজটে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। জানা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতি ও নির্মাণ কাজ চলায় যানবাহনের ধীরগতির কারণে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত অন্তত ৬০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়।
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান বাদল জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুরে নারায়ণগঞ্জ সওজের নির্মাণ কাজ চলার কারণে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে এ যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে যাত্রীসাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মদনপুরে দায়িত্বে থাকা টিআই রাফিক ও টিএসআই নূরুল যানজট নিরসনে কাজ না করে বিভিন্ন পিকাপ, মাইক্রোবাস ও কনটেইনার কার্গোর কাগজপত্র চেক করার নামে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত ছিল বলে এলাকাবাসী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানায়। অভিযোগে জানা গেছে, মহাসড়কের মদনপুরে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগ রাস্তার নির্মাণকাজ করার কারণে সড়কের এক পাশ বন্ধ থাকায় আরেক পাশ দিয়ে যাতায়াতের কারণে যানজটের সূত্রপাত হয়। এছাড়া কাঁচপুর দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ করার কারণে এ পয়েন্টেও যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করলেও দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময় শত শত গাড়ি মহাসড়কে আটকে থাকে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। বাস চালক আলী আহাম্মদ জানান, সাইনবোর্ড থেকে মদনপুর ৬ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। আলম নামে এক যাত্রী জানান, যানজট এতই ব্যাপক যে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে মেঘনা টোলপ্লাজায় যেতে ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে। অভিযোগ রয়েছে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশকে মহাসড়কের কোথাও যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। এদিকে মহাসড়কে যানজট থাকায় তা এশিয়ান হাইওয়ে ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানজট বিস্তার করে। ফলে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে বিশ্বরোড, মদনপুর থেকে বস্তাল পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি রোগীবাহী এম্বুলেন্সকে যানজটে পড়ে আটকে থাকতে দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শাখার মদনপুরের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) রাফিক ও টিএসআই নূরুল ইসলাম যানজট নিরসন কাজে ব্যস্ত না থেকে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বসে পিকাপ, মাইক্রোবাস, কাভার্ডভ্যান ও কনটেইনার কার্গোর কাগজ নিয়ে ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা নিতে দেখা যায়। পিকাপ চালক রিপন বলেন, রিকুইজিশন করার ভয়ভীতি দেখিয়ে টিআই রাফিক তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার দাবিকৃত চাঁদা প্রদান না করলে ৭ দিন রিকুইজিশন খাটতে হবে তাই বাধ্য হয়েই যানজটের মধ্যে ২ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পেয়েছি। কাভার্ডভ্যান চালক আফসার বলেন নূরুল তার গাড়ির কাগজ নিয়ে ১ হাজার টাকা রেখে দিয়েছে।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে গতকাল শুক্রবার দিনভর প্রায় ৪০ কিলোমিটার যানজটে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। যানজট দাউদকান্দির টোল প্লাজা থেকে চান্দিনা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন ধীরগতিতে চলার কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। গাড়ির চালক ও যাত্রীরা বলছেন, কুমিল্লা থেকে ঢাকা যাতায়াতের ২ ঘণ্টার রাস্তায় প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা সময় লেগেছে। যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ- মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং দাউদকান্দির টোল প্লাজা এলাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলে সংশ্লিষ্টদের অবৈধ বাণিজ্য এবং শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও বেপরোয়া গতিতে এলোমেলো গাড়ি চলাচলের কারণে তারা ফোর লেনের তেমন সুফল পাচ্ছেন না। যানজটে আটকা পড়ে যাত্রী ছাড়াও পণ্যবাহী যানবাহন, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও ভিআইপিদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন সড়কের যানবাহনের গতি ডাবল লেনের মেঘনা গোমতী ব্রিজে গিয়ে যানজটে গতি থেমে যাচ্ছে। যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ- ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ফোর লেন হওয়ার কারণে মহাসড়কের অন্য কোথাও তেমন যানজট সৃষ্টি না হলেও টোল প্লাজায় পণ্যবাহী যানবাহন থেকে বখরা আদায় করতে গিয়ে ঢাকামুখী অংশে প্রতিদিনই কম-বেশি যানজট লেগেই থাকে। ঢাকাগামী এক যাত্রী জানান, বেলা ১২টায় কুমিল্লা থেকে রওনা হয়ে মহাসড়কের চান্দিনার মাধাইয়া এসে যানজটে আটকা পড়ি। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দাউদকান্দির ঈদগাহের নিকট পৌঁছি। কখন ঢাকা পৌঁছব বলতে পারছি না। আরেক যাত্রী জানান, ঢাকা থেকে সাড়ে ৮টায় রওনা হয়ে কাঁচপুর পেরিয়ে যানজটে পড়ি। দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তির পর মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতু পার হয়ে চান্দিনার মাধাইয়া পর্যন্ত যানজটের কবলে পড়ে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে ৪টায় কুমিল্লা এসে পৌঁছি। বিকালে হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় যানবাহনের চাপ এমনিতেই বেশি। এ ছাড়াও দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতুতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং টোল প্লাজায় ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলে ধীরগতির কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে বিকাল সাড়ে ৪টার পর থেকে যানজট কিছুটা কমে আসে বলে তিনি দাবি করেন।
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, এ যানজট সোনারগাঁওয়ের মেঘনা সেতু হয়ে গজারিয়ার বাউশিয়া পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া যানজট গতকাল শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ছিল। চাঁদপুরের লেংটা পাগলার মেলায় গাড়ি চাপ, মদনপুর ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তা মহাসড়কের সংস্কার কাজ, মেঘনা সেতুতে ধীরগতিতে টোল আদায় এবং অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ির চাপ থাকার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।