এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বেশ কয়েক মাসের গড়িমসি শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সম্মেলন করে নতুনদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিল ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের অন্যতম পুরনো এই সংগঠনের ২৯তম সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
আগামী ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
তার আগে আগামী ২৪, ২৬ ও ২৯ এপ্রিল যথাক্রমে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, উত্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে সোহাগ জানান।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংগঠনের কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত বছরের জুলাই মাসে ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে এই সম্মেলন পিছিয়েছে।
কর্মীদের অভিযোগ, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সম্মেলন না করার চেষ্টায় নানা দেন-দরবার করছিলেন বর্তমান কমিটির নেতারা।
২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই সোহাগকে সভাপতি এবং জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠন হয়েছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ দুই বছর। মেয়াদপূর্তির ছয় মাসেও সম্মেলন না করায় গত ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগকে সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব আনতে বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গত ৩১ মার্চ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশ আসে, সম্মেলন করতে হবে মে মাসের মধ্যেই। আর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ যেন না পার হয়, সেটিও জানিয়ে দেন তিনি। এমন নির্দেশের পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হল।
চাপের কারণে সম্মেলন করতে হচ্ছে কি না- প্রশ্ন করলে সোহাগ বলেন, “কীসের চাপ? আমাদের একমাত্র অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এ সম্মেলন হচ্ছে।” সাধারণ সম্পাদক জাকির বলেন, “আমাদের একমাত্র অভিভাবক শেখ হাসিনা যে নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ীই হবে।”
অন্য সময় থাকলেও এই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান, দক্ষিণের সভাপতি বায়েজিদ আহমেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ উপস্থিত ছিলেন না।
‘নেগেটিভ শিরোনাম নিয়ে ভাবি না’ : সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ বলেন, সংবাদ প্রতিবেদনের ‘নেগেটিভ-পজেটিভ’ শিরোনাম নিয়ে তিনি ভাবেন না।
গত কয়েক বছরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে আসে, যা নিয়ে সং গঠনের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদেরও উষ্মা প্রকাশ করেন।
নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সোহাগ বলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, “নেতিবাচক সংবাদের শিরোনামের দায়িত্ব আপনাদের (সাংবাদিক)। সংবাদের শিরোনাম কোনটা করবেন, সেটা সম্পূর্ণ আপনাদেরই বিষয়। কোনটা শিরোনাম হবে তার সিদ্ধান্ত আপনারাই নেন।
“আপনারা লিখবেন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, বিষয়টা কিন্তু তা না। শিরোনামের নেগেটিভ-পজেটিভ বিষয় নিয়ে আমরা ভাবি না।”
বর্তমান কমিটি কতটুকু সফল হয়েছে বলে মনে করেন- এ প্রশ্নের জবাবে সোহাগ বলেন, “আমি তো মনে করি, শতভাগ সফল। শতভাগ সফলতার পরে কিন্তু ব্যর্থতা থাকে না।”
সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে জাকির বলেন, “আমরা দুই ভাই মনে করি, ছাত্রলীগের যত অর্জন আছে তা কেন্দ্রীয় কমিটি, সকল নেতা ও ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর। অন্যদিকে সকল ব্যর্থতার দায়ভার আমাদের দুজনের। তারপরও আমাদের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ধারণ করবে দেশের ছাত্রসমাজ ও জনগণ।”