এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ঝুঁকিতে রয়েছেন উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রিত দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা। অতি বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিতে আছেন ৫ হাজার ৬৩৬ পরিবারের ২৪ হাজার ১২৬ জন। তাদের ১৫ এপ্রিলের মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া জুনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে নোয়াখালীর ভাসানচর ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের নিরাপদ স্থানে এদের সরিয়ে নেয়া হবে। ১২ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় এক বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বৃহস্পতিবার বলেন, পাহাড় ধস ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুচ্যুত দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক। অধিক ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের ইতিমধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকিদের নোয়াখালীর ভাসানচরসহ প্রয়োজনীয় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে। এ বিষয়ে ১২ এপ্রিল উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ান ডিজাস্টার প্রিপারেডনেস সেন্টার (এডিপিসি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় সম্ভাব্য পাহাড় ধস ও বন্যার ঝুঁকি সংক্রান্ত একটি সমীক্ষা করা হয়।
এতে পাহাড় ধস ও বন্যার ঝুঁকিতে থাকা সম্ভাব্য এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এতে দেখা যায়- পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন ৩১ হাজার ৪৪১টি পরিবারের ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক।
পাহাড়ি ঢল ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন ১৬ হাজার ৩৭৫ পরিবারের ৬৯ হাজার ৩৫১ জন। ফলে সব মিলে ঝুঁকিতে রয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক। অধিক ঝুঁকিতে থাকা ১ হাজার ১৮৮টি পরিবারের ৫ হাজার ৩৫ জনকে ইতিমধ্যে ১৭ ও ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যে এ সংক্রান্ত কাজ শেষ হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা সেল সূত্র জানিয়েছে, ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উখিয়ার কুতুপালং সম্প্রসারিত ক্যাম্পের উত্তর-পশ্চিম দিকে ১২৩ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন ও শেল্টার নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৩০ একর জমি ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা সহজে স্থান পরিবর্তন করতে চান না। তারা স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় নানাভাবে অসহযোগিতা করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও রোহিঙ্গা সেল প্রধান মোহাম্মদ হাবিবুল কবির চৌধুরী বলেন, বুধবার উন্নয়ন সহযোগী ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সব সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন যেসব নিরাপদ স্থান রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার নাগরিককে রাখা যাবে।
বাকিদের নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগীদের ভাসানচরের বর্তমান অবস্থা দেখানো হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে মোটামুটি একমত হয়েছে। শিগগিরই তাদের প্রতিনিধি দল নিয়ে ভাসানচরে সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, উন্নয়ন সহযোগীরা পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে ভাসানচরের সর্বশেষ অবস্থা দেখলেও তারা সেখানে মানুষের বসবাস উপযোগী কি কি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা বারবার জানতে চেয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে- ভাসানচরে উখিয়া ক্যাম্পের চেয়ে আধুনিক ও উন্নতমানের ক্যাম্প নির্মাণ করে দেয়া হবে। সেখানে তারা বর্তমান ক্যাম্পের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এ ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চাওয়া হয় বৈঠকে। তারা এ বিষয়ে একমত হলেও বিষয়টি চূড়ান্ত করতে ১২ এপ্রিল তাদের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সেখানেই মূলত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, বুধবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সরকার একটি যৌথ কনসালটেশন গ্রুপ গঠন করবে। এটি ১২ এপ্রিলের বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। এ গ্রুপটি ভাসানচরে সরেজমিন পরিদর্শন করে ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। এ ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগীরা সরকারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।
রোহিঙ্গা সেল সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ায় গত বছরের ২৫ আগস্টের পর হতে এ পর্যন্ত ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আগেই ছিলেন প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। নতুন ও পুরাতন মিলে দেশে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক অবস্থান করছেন। সূত্র : যুগান্তর