এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় বলিউডের সুপারস্টার সালমান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যোধপুর আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মামলায় অন্য চার অভিযুক্ত ছিলেন- সাইফ আলি খান, টাবু, নীলম এবং সোনালি বান্দ্রে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই সালমানকে নিয়ে যাওয়া হয় যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে।
রায় ঘোষণার এক দিন আগে বুধবারেই রাজস্থানের যোধপুর পৌঁছেন সালমান খান, টাবু এবং সাইফ আলি খান।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা। ২০ বছর আগের কৃষ্ণসার হরিণ শিকার মামলায় সালমান খানকে দোষী বলে ঘোষণা করেন আদালত। এর ঘণ্টা খানেক পরই সালমানের সাজা ঘোষণা করা হয়।
সালমানের আইনজীবী এইচএম সারস্বতের দাবি- সরকারি কৌঁসুলি অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেননি। মামলা সাজাতে ভুয়া সাক্ষী দাঁড় করানো হয়েছে। এমনকি বন্দুকের গুলিতেই যে দুটি কৃষ্ণসার হরিণের মৃত্যু হয়েছিল, তা-ও সরকারি
কৌঁসুলি প্রমাণ করতে পারেননি। গত ২৮ মার্চ নিম্ন আদালতে কৃষ্ণসার মামলার চূড়ান্ত পর্যায়ের শুনানি শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ১৯৯৮-এর ১ এবং ২ অক্টোবর যোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিংয়ের মাঝে আলাদা আলাদা জায়গায় দুটি কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেছিলেন সালমান খান। সেই সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাইফ আলি খান, নীলম, টাবু এবং সোনালি বান্দ্রে। রাজস্থানের কঙ্কানি এলাকার গ্রামবাসীর বক্তব্য- গুলির শব্দ শুনে তারা সালমানদের জিপসি গাড়িটিকে ধাওয়া করেছিলেন। কিন্তু তাদের ধরা যায়নি। সেই সময় চালকের আসনে ছিলেন স্বয়ং সালমান। প্রবল গতিতে গাড়ি চালিয়ে তারা পালিয়ে যান।
তিন বছরের কম কারাদণ্ড হলে, যোধপুর আদালতে বৃহস্পতিবারই জামিনের জন্য আবেদন করতে পারতেন সালমানের আইনজীবীরা। কিন্তু পাঁচ বছর কারাদণ্ড হওয়ায় কিছুই করার ছিল না। আজ হয়তো জামিনের জন্য তার আইনজীবীরা উচ্চতর আদালতে আবেদন করবেন।
সালমান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০১২ সালের বহুচর্চিত ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায় অভিযোগ উঠেছিল, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে এক ফুটপাথবাসীকে পিষে মেরেছেন সালমান। ঘটনায় আহত হয়েছিলেন চারজন। টানা ১৩ বছর মামলা চলার পরও সেই অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। বেকসুর ছাড়া পান সালমান।
সালমান খান প্রায় দু’দশকের বেশি সময় বলিউডের সুপারস্টার। একের পর এক সিনেমা সুপার-ডুপার হিট হওয়ার পর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি ‘ভাইজান’ থেকে শুরু করে ‘টাইগার’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। একের পর এক ছবি যেমন হিট হয়েছে তেমনি মাঝে মাঝেই কৃষ্ণসার হরিণ শিকার মামলায় আদালতে হাজিরা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন সালমান। বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এক গুপ্তচরের জীবন কাহিনী নিয়ে তৈরি ‘এক থা টাইগার’ ছবি রিলিজ হতেই বক্স-অফিসে বিস্ফোরণ ঘটে। বজরঙ্গি ভাইজান ছবির সিক্স পাক হিরো সালমানের গায়ে ‘টাইগার’ তকমা লেগে যায়। দ্বিতীয় ছবি টাইগার জিন্দা হ্যায় মাস কয়েক আগে রিলিজ হতেই ফের হিন্দি ছবির দুনিয়ায় তুফান বয়ে যায়। কিন্তু সেই ছবির নায়ক সালমান ২০ বছর আগের হরিণ শিকার মামলার রায় ঘোষণা হতেই মুহূর্তে গোটা দুনিয়ার কাছে খলনায়ক হয়ে গেলেন।
সালমানের জেল হওয়ায় বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে বলিউড। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা এ মুহূর্তে বিনিয়োগ করা হয়েছে সালমানের ছবিতে। সেসবই পড়বে অতল জলে। পরপর রেস থ্রি, দাবাং থ্রি, ভারত- তিনটি ছবি রয়েছে সালমানের হাতে। যার অধিকাংশ শুটিং বাকি। জেলে বেশিদিন থাকলে সালমানের এই ছবিগুলো শিকেয় উঠবে।