এশিয়ান বাংলা, রংপুর : আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার নিহতের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দীপাসহ চার আসামিকে হাজির করা হয়। অপর তিন আসামি হল কামরুল ইসলাম জাফরি এবং স্কুলছাত্র সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান। আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল আমিন আসামি কামরুল ইসলাম জাফরিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন এবং অপর তিন আসামিকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আবেদন জানান।
বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা আসামি কামরুল ইসলাম জাফরির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং অপর তিন আসামির জবানবন্দি নেন। জবানবন্দিতে øিগ্ধা সরকার দীপা স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। অপর আসামি স্কুলছাত্র সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের চার দিন আগে গর্ত খোঁড়া ও রথীশ চন্দ্রের লাশ চাপা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে।
এদিকে আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লাল রঙের মোটরসাইকেল ও লাশ বহনের জন্য ব্যবহৃত স্টিলের আলমারি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মামলায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আইনজীবীর সহকারী মিলন মহন্তকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বৃহস্পতিবার নগরীতে শোক মিছিল করেছে।
স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে আওয়ামী লীগ নেতা আইনজীবী রথীশকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলাম জাফরি, রথীশের স্ত্রী øিগ্ধা সরকার দীপা, একই স্কুলের দুই ছাত্র সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামানকে কোতোয়ালি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের আদালতে তোলা হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, দীপার তথ্যের ভিত্তিতে রথীশের লাশ উদ্ধার করা হলেও এখন তিনি পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এ কারণে পুলিশ তার দেয়া সব তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে দেখছে। কোতোয়ালি থানার ওসি মো. বাবুল মিয়া জানান, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। সতর্কভাবে মামলার তদন্ত চলছে। সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল আমিন কাজ করছেন। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রথীশের সহকারী মিলন মহন্তকে বৃহস্পতিবার রংপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার আদালতের মাধ্যমে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের মধ্যে দীপা, সবুজ ও রোকনুজ্জামান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ওসি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও লাশ বহনের স্টিলের আলমারি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আরেকটি আলামত রিকশা ভ্যান উদ্ধার ও এর চালককে গ্রেফতার করা যায়নি। রংপুর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উদ্ধার মোটরসাইকেলটির মালিক জাফরি। তিনি আরও জানান, রথীশের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আসামি হিসেবে পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ খুনের সঙ্গে আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুপুরে নগরীতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ যৌথভাবে শোক মিছিল করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তারা।