এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : এবারও হজের জন্য চারটি সুপরিসর উড়োজাহাজ লিজে আনা হচ্ছে। একটি সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও বিমান মন্ত্রণালয়কে নানা ধরনের যুক্তি দিচ্ছে। এ কাজে কাবোর স্থানীয় এজেন্ট ও দালালরা মন্ত্রণালয়সহ বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ করছেন।
আগামী হজ মৌসুমে নিয়মিত ফ্লাইটের সিডিউল ঠিক রাখার অজুহাতে গত বছরের ২০ নভেম্বর বিমান পরিচালনা পর্ষদের সভায় চারটি সুপরিসর উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। ৩০০ আসনের ওই সব উড়োজাহাজের বৈমানিক, কেবিন ক্রুসহ লিজের সিদ্ধান্ত হয়। ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।
গত ১৭ জানুয়ারি দরপত্র বাক্স খুলে ছয়টি কোম্পানির প্রস্তাব পায় বিমান। এতে দক্ষিণ আফ্রিকার এম/এস এসিএমআই২৪ থেকে চারটি উড়োজাহাজ লিজ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ফ্রান্সের এম/এস এলিকো দুটি ও ফ্লাই গ্লোবাল দুটি উড়োজাহাজ লিজ দিতে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এসব প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করতে সময়ক্ষেপণ করে কর্তৃপক্ষ। মার্চে এসব প্রস্তাব বাতিল করে দেয় বিমানের দরপত্র কমিটি। সময়স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে গত সপ্তাহে মালয়েশিয়াভিত্তিক এম/এস থেকে দরপত্র ছাড়াই সরাসরি দুটি উড়োজাহাজ লিজ নিয়েছে বিমান। এতে মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বিমান বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইফতেখারুল আলম বলেন, হজ মৌসুমের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশও বিমান লিজ নিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান নানা অজুহাতে সময় নষ্ট করে। যখন লিজ দেওয়া কোম্পানির উড়োজাহাজ প্রায় শেষের দিকে চলে যায়, তখন লিজের অঙ্কও বাড়তে থাকে। ফলে বিমান কর্তৃপক্ষ বেশি টাকায় উড়োজাহাজ লিজ নিতে বাধ্য হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি চলে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটের নকশা অনুযায়ী।
বিমান-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর বিমানবহরের চারটি নতুন বোয়িং উড়োজাহাজ দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করায় সংস্থাটি প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করে। নিজস্ব উড়োজাহাজে হজ ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হয়। তাদের মতে, বহরে থাকা বোয়িং উড়োজাহাজ ও নিয়মিত ফ্লাইট দিয়েই হজ কার্যক্রম চালানো সম্ভব। গত তিন বছর নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান হজ ফ্লাইট পরিচালনা করে লাভের মুখ দেখেছে। কিন্তু কমিশন বাণিজ্যের জন্য এবার চারটি উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, আরও দুটি উড়োজাহাজের জন্য ৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বিমান। এতে বলা হয়েছে, হজের জন্য সুপরিসর বড় উড়োজাহাজ এসিএমআই লিজ নেবে বিমান। কমপক্ষে ৩০০ আসন ও ৭০০ ব্লক আওয়ার উড্ডয়নের সক্ষমতাসম্পন্ন উড়োজাহাজ লিজে নেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
বিমান থেকে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, নির্বাচনের আগে হজযাত্রী পরিবহনে সমস্যা হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ গত বছর হজযাত্রী সংকটের কারণে বিমানের ৩৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল ও প্রায় ১০টির সিডিউল পরিবর্তন করতে হয়েছে। এ ছাড়া আসন শূন্য থাকে ছেড়ে যাওয়া অধিকাংশ হজ ফ্লাইটের।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, বিমান প্রায় ৬৫ হাজার হজযাত্রী পরিবহন করবে। হজের সময় নিয়মিত সিডিউল ফ্লাইটের চেয়ে অতিরিক্ত ১৫০টির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা হয়। নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে এত বিপুলসংখ্যক হজযাত্রী পরিবহন করতে নিয়মিত ফ্লাইটে কাটছাঁট করতে হয়। এতে বিমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। এবার লিজে নেওয়া উড়োজাহাজ দিয়ে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আর হজযাত্রীরা বিমানবহরের নিজস্ব বোয়িং উড়োজাহাজে যাতায়াত করবেন। এতে সিডিউল বিপর্যয় হবে না।
বিমানবহরে রয়েছে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও দুটি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ। এসব উড়োজাহাজ দিয়ে ১৫টি আন্তর্জাতিক ও সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।
সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এবার এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে অর্ধেক হজযাত্রী পরিবহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। অবশিষ্ট হজযাত্রী বহন করবে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স। সূত্র : সমকাল