এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুতভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, তারা জেনেছে কারাগারে খালেদা জিয়ার কক্ষে গিয়ে দ্রুত প্রস্তুতি নিতে বারবার তাগাদা দিয়েছেন ৭-৮ জন কর্মকর্তাসহ কারারক্ষী। তাকে চাদর বা ওড়না পরিধান করার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তাকে অনেকটা জোর করেই গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, আমরা টেলিভিশনের পর্দায় যতটুকু দেখেছি, আমাদের নেত্রীকে কখনও এভাবে দেখিনি। এই লেবাসে কখনও দেখিনি। একজন মুসলিম ধর্মপ্রাণ নারী হিসেবে ৩০-৩২ বছর ধরে তিনি শাড়ির উপরে চাদর অথবা ওড়না পরিধান করেন। কিন্তু তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি।
হাসপাতালে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের কোনো পরামর্শের সুযোগ দেয়া হয়নি বলেও দাবি করে রিজভী বলেন, হাসপাতালের ৫১২ নম্বর কক্ষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসার নামে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রহসনেরই নামান্তর। কোনো চিকিৎসাই সেখানে তাকে দেয়া হয়নি। আইনেও আছে একজন বন্দি পূর্বে যেসব চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতেন কারাগারেও তাদের চিকিৎসা নিতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মীর ফাওয়াজ হোসেন শুভ, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, রফিকুল ইসলাম, জাহানারা বেগম, ডা. মোফাখারুল ইসলাম রানা, ডা. জাহেদুল কবির, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. ওয়াসি খান জনি, ডা. হুমায়ুন কবির প্রিন্স প্রমুখ।
রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে- খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে। এ জন্য প্রধান কারারক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। অথচ এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। খালেদা জিয়া ১৫-২০ বছর ধরে যে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে গেলে সেখানে তাদের পর্যন্ত দেখা করতে দেয়া হয়নি। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে এসে টানাহেঁচড়া করা হয়েছে শুধু হেনস্তা ও হয়রানি করার জন্য।
তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের গাড়ি হাসপাতালে পৌঁছলে তাকে একরকম টানাহেঁচড়া করে উপরে ওঠানো হয়। গাড়ি থেকে নামার জন্য সিঁড়ি পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে একরকম অপমানজনকভাবে তাকে হাসপাতালে ওঠানো-নামানো হয়েছে। একজন মানুষ হিসেবে তার যে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সেটাও হরণ করতে সরকারপ্রধান বিষদাঁত লুকাতে পারছেন না। নিজেকে সাধু দেখানোর জন্য সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নামে নাটক করেছে।
রিজভী বলেন, সেবা বিভাগ বলপূর্বক হরণের ধারায় বেঁধে ফেলা হয়েছে বলেই সরকারি হাসপাতালে বিরোধী দলের সেবা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেই সুযোগ ও অধিকারহীনতার শিকার হলেন খালেদা জিয়া। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রতি সরকারের এমন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ধারাবাহিকতা বন্ধ না করলে সরকারের গদি উল্টে দিতে জনগণ প্রস্তুত। সুচিকিৎসার অভাবে তার কোনো ক্ষতি হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। স্বামীহারা, সন্তানহারা এক সর্বংসহা নারী খালেদা জিয়া অটুট মনোবলে সব ধৈর্য ধারণ করেছেন দেশমাতৃকা ও জনগণের প্রতি অঙ্গীকারে। খালেদা জিয়ার অগ্রযাত্রা বলপূর্বক প্রতিহত করে কোনো লাভ হবে না। তাকে কোনোভাবেই টলানো যাবে না।
সরকারি চিকিৎসায় আস্থা নেই -মওদুদ : সরকারি চিকিৎসায় অনাস্থা জানিয়ে সুচিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদার আইনজীবী মওদুদ আহমদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলাকালে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। দলীয় নেত্রীর হাসপাতালে যাওয়ার খবর শুনে শনিবার দুপুরে বিএসএমএমইউতে উপস্থিত হন মওদুদ। তিনি বলেন, আমরা জানি না কেন উনাকে এখানে আনা হয়েছে। আমাদের কিছু জানানো হয়নি। এতদিন ধরে যা বলে আসছিলাম, এখন সরকারের মেডিকেল বোর্ড গঠন করার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে উনি অসুস্থ। মেডিকেল বোর্ড গঠনকে ‘লোক দেখানো’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সরকারের চিকিৎসায় আমাদের একেবারেই বিশ্বাস নেই। তাকে একটি নির্জন, পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। সেখানে এমনিতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাকে মুক্তি দেয়া হোক। তাহলে তিনি নিজের চিকিৎসা নিজের ডাক্তারদের দিয়ে করিয়ে সুস্থ হবেন।