এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, অতীতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, আগামী নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে- জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে একবারও বলিনি যে সেনা মোতায়েন হবে না। তবে এটা আমার একার সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। ইসির আরও পাঁচজন সদস্য আছেন, তারা মিলেই এটা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে সিইসি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত বলে আমি একদম মনে করি না।
রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে প্রবাসী ভোটাধিকার প্রবর্তন: সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় সিইসি এসব কথা বলেন। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)। আলোচনায় প্রবাসীদের ভোটারের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে কথা বলেন। আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী সারা দুনিয়ায় শান্তিরক্ষায় কাজ করছে, বিভিন্ন দেশের সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দেশের নির্বাচনে সেনাবাহিনী কাজ করতে পারবে না, এটা কেমন কথা। সেনাবাহিনী নির্বাচনের সময় মাঠে থাকলে ক্ষমতাসীনদের অসুবিধা হবে, বিশৃঙ্খলা করতে অসুবিধা হবে। তাই তারা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে। নির্বাচন কমিশন যদি ভোটারদের পক্ষ না নেয়, তাদের পক্ষ নেয় তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। এ সময় তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালাতে পারেন না বলেও অভিযোগ করেন।
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। সেনা মোতায়েনে আওয়ামী লীগ কোনো আপত্তি জানায়নি। আমাদের সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে। আমরা মনে করি, সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সেনা মোতায়েন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ এ দুই নেতার বক্তব্যের ব্যাপারে সিইসির বক্তব্য জানতে চান সাংবাদিকরা। তখন সিইসি সেনা মোতায়েনের পক্ষে তার নিজের উল্লিখিত মতামত তুলে ধরেন।
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে সিইসি বলেন, বর্তমানে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্ট থাকায় ১২ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। সে সঙ্গে কারাগারে কিংবা পুলিশ হেফাজতে থাকা আরও ৭৫ হাজার ভোটার ভোটের দিন ভোট দিতে পারেন না। এসব ভোটার কীভাবে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছি। তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যমান আইনে প্রক্সি ও পোস্টাল ভোট দেয়ার সুযোগ আছে। তফসিল ঘোষণার ১৫ দিনের ভেতর আবেদন করলে প্রবাসীরাও ভোট দিতে পারেন। তবে এটা অনেকেই জানেন না। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আগামী নির্বাচনের আগে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। প্রচার চালাতে দূতাবাসগুলোকেও চিঠি দেয়া হবে। সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কমিশন সচেষ্ট রয়েছে। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক প্রবাসীকে কীভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করে দেয়া যায় বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ভাবনায় আছে বলে জানান সিইসি। তিনি জানান, আগামী ১৯ এপ্রিল এ ব্যাপারে কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
ভোটাধিকার প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমানে দেশের মধ্যে অবস্থান করা অনেক নাগরিক ভোট দিতে পারছেন না। তাই সবার আগে দেশের মধ্যে অবস্থান করা নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোট দিতে পারেনি।
কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ছিল। এ ব্যাপারে কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, সবাই যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেটা আমরা চাই। এখানে সবার সহযোগিতা করতে হবে।
আলোচনায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভোট বাংলাদেশে বাধ্যতামূূলক নয়। এ জন্য ভোট বর্জনের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। ব্যক্তিগত ভোটিংয়ের প্রধান অন্তরায় হল আমাদের আইন। পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য সময় দরকার। সে সময় আমাদের হাতে নেই। এ সময় কীভাবে পাওয়া যায় সেটি আমাদের দেখা দরকার। ভোটের কাজে যারা নিয়োজিত থাকেন তারাও ভোট দিতে পারেন না। এই ভোটগুলো কীভাবে নেয়া যায় সেটিই আমাদের আগে নিশ্চিত করতে হবে। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য আবদুল আউয়ালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল মুমিন চৌধুরী, নাসিম ফেরদৌস, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সারাহ টেইলর। অনুষ্ঠানের কি-নোট উপস্থাপন করেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আবদুল আলিম।