এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয়রোগে ভুগছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে তার যে এক্স-রে রিপোর্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে সেখানে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড এবং দলীয় চিকিৎসকেরা। বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান বলেছেন, তিনি আগের চেয়ে সুস্থ আছেন।
যে সমস্যাগুলো রয়েছে তাতে বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে খালেদা জিয়ার শরীরে অনেক ব্যথা আছে এবং তার চিকিৎসা নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব মহাসচিব ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
রোববার অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জমান বলেন, খালেদা জিয়ার শরীরে এমন কোনো রোগ নেই, যা এ দেশে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তার রিউমেটাল আর্থ্রাইটিস ও অস্টোআর্থ্রাইটিস রয়েছে। যদিও তার হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। এ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই।
আমরা মেডিকেল বোর্ডের চারজন যে চিকিৎসা দিয়ে এসেছি তাতে তার উন্নতি হবে। এখন তার যে অবস্থা তাতে বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। খালেদা জিয়ার বাঁ-পা, বাঁ-হাত ও কোমরে চিনচিনে ব্যথা রয়েছে বলে তিনি মেডিকেল বোর্ডকে জানান। তিনি আরও বলেন, আমরা যেদিন খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন তিনি অন্যের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের সামনে আসেন।
শনিবার তাকে একা হাঁটতে দেখেছি। এ ছাড়া এদিন তাকে সেদিনের চেয়ে সুস্থ মনে হয়েছে। এতে বোঝা যায়, আমরা যে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছিলাম তা তার শরীরে কাজ করেছে। এদিকে শনিবার খালেদা জিয়ার শরীরের যেসব এক্স-রে করা হয়েছে সেসব পরীক্ষার রিপোর্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোববার দুপুরে এই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সার্ভিক্যাল স্পাইন, লাম্বার স্পাইন, পেলভিস, লেফ্ট হিপ জয়েন্ট ইউথ থাই এবং নি জয়েন্ট এক্স-রে করা হয়।
এক্স-রেতে কী ধরনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. এনায়েত করিম যুগান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার এক্স-রে পরীক্ষার রিপোর্ট রোববার সকালে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানে কী আছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে কারা কর্তৃপক্ষ বা তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সেটি জানাবে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান বললেন, খালেদা জিয়ার এক্স-রে পরীক্ষার রিপোর্ট কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছেছে বলে শুনেছি। আমাদের সঙ্গে সোমবার কারা কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করতে পারে। তার আগে এ নিয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই।
এদিকে খালেদা জিয়ার শরীরে যথেষ্ট ব্যথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব মহাসচিব ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, শনিবার বিএসএমএমইউতে এসে তিনি জানিয়েছেন, তার শরীরে অনেক ব্যথা। তাকে ধরার জন্য মহিলা দলের সভানেত্রী এসেছিলেন। কিন্তু তাকে খালেদা জিয়ার কাছে যেতে দেয়া হয়নি। একজন নারী চিকিৎসক চাওয়া হয়েছিল কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কারা কর্তৃপক্ষ সে ব্যবস্থাও করেনি। ডা. জাহিদ বলেন, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও তাদের কথা বলতে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় থাকতে দেয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সরকারের লোক-দেখানো উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শুধু কয়েকটি এক্স-রে করানো হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু করা হয়নি। এক্স-রেতে কি তার রোগ ধরা পড়বে? তার দরকার হচ্ছে এমআরআইসহ ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ। তার চিকিৎসায় যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে তাদের কোনো পরামর্শ তিনি গ্রহণ করেননি। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, এই বোর্ডের পরামর্শে তিনি কোনো ওষুধ খাবেন না। তাছাড়া তার চিকিৎসা নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে। এমনকি তার পরিবারের সদস্যদেরও এ বিষয়ে কিছু জানতে দেয়া হচ্ছে না। তাই খালেদা জিয়াকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিতে হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী যা পরীক্ষা করানো দরকার তা করতে সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য খালেদা জিয়ার পরিবার থেকে অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।