এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুত প্রকল্পগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আসন্ন বাজেটে ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও। পাশাপাশি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে সারা দেশের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে ৩ হাজার ১৮০ কোটি ২৩ লাখ টাকার প্রয়োজন। একই সঙ্গে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের জন্য আরও ৩৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরকার। এ কারণে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে মোট ৩ হাজার ৫১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দের সুপারিশ করেছেন ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী বাজেটে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ব্যয়ের সিলিং প্রায় ৪৭২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেখানে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ দেয়া হয়নি। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুত হওয়ায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি অধিক গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে প্রকল্পটি দৃশ্যমান করতে চায় সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাড়ে চার লাখ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন। এর মধ্যে সাড়ে ৩১ হাজার নারী নামাজ পড়তে পারবেন। বিষয়টি ভোটারের কাছে তুলে ধরাও সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের আওতায় জেলা সদরে ৬৪টি, সিটি কর্পোরেশনে ৫টি, উপকূলীয় এলাকায় ১৬টিসহ মোট ৮৫টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিটির ভবন চার তলাবিশিষ্ট হবে। আর জেলা ও উপজেলার প্রতিটি ভবন তিন তলাবিশিষ্ট হবে। সর্বশেষ তথ্যমতে, মসজিদ নির্মাণের জন্য ১১টি স্থান চূড়ান্ত করে প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়েছে। আসন্ন বাজেটের আগে আরও ১০০ স্থান চূড়ান্ত করে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।
এ প্রকল্পে ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থ ৮৯২ কোটি টাকা এবং বাকি ৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা হচ্ছে প্রকল্প সহায়তা। এ সহায়তা অনুদান হিসেবে পাওয়ার কথা সৌদি সরকারের কাছ থেকে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত মাত্র ৮২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। তবে সহায়তার অর্থ আনতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এদিকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৭২ কোটি টাকা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ছাড় করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে জানুয়ারিতে একটি বৈঠক হয়। মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে শনাক্ত জমি সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য বৈঠকে ৮টি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তাদের রিপোর্টও ইতিমধ্যে দাখিল করেছে। তবে বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, ৩০০ জমি ইতিমধ্যে নিষ্কণ্টক পাওয়া গেছে। দরপত্র আহ্বান করে এসব স্থানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যাবে। সূত্র জানায়, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৫২০টি জমির প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪০ শতক বা এর ঊর্ধ্বে জমির সংখ্যা হচ্ছে ৪৭৫টি এবং ৪০ শতক ও এর কম পরিমাণ জমির সংখ্যা হচ্ছে ৪৫টি। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।