এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : প্রধান দুই রাজনৈতিক নেত্রীর কাছে বাংলাদেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেন।
এই দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে কোনো প্রত্যাশা রেখে লাভ নেই বলেও মনে করেন তিনি।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন দুই নেত্রীকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকারী মইনুল।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের আপা (শেখ হাসিনা) যা বলেন তাই, বিএনপিতে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যা বলেন তাই। এর ভেতরে রাজনীতির কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে বলে আমি মনে করি না।
“জনগণ আজকে অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় আছে। আমরা যত বলছি, তাতে কোনো ফল বয়ে আনছে না, বরং অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সরকারের স্বৈর চরিত্র আরও কঠিন হচ্ছে।”
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে ব্যরিস্টার মইনুল জরুরি অবস্থার সময় ক্রিয়ারত সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন।
ওই সময় দুই প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়। তাদের রাজনীতি থেকে বের করতে দলের ভেতর থেকেও চেষ্টা চালানো হয়েছিল।
সেনা নিয়ন্ত্রিত সেই সরকারে মইনুলের থাকার দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছিলেন, “তার মুখে এখন গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। বাংলাদেশের জন্য এটাই হল দুর্ভাগ্যের।”
গোলটেবিলে মইনুল বলেন, “বিভ্রান্তিকর রাজনীতির জন্যই আজকে দেশে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমি যেটা মনে করি, বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই আমাদের দেশের রাজনীতিতে মারাত্মক ভুল-ভ্রান্তি হয়ে আসছে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির উপর নির্ভর করেও লাভ হবে না বলে মনে করেন তিনি।
কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়ে সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন মইনুল।
তিনি বলেন, “তাদেরকে বলল রাজাকারের বাচ্চা। কে বললেন? তিনি বড় বড় কথা বলেন। দেশে জনগণকে বিপদে রেখে রাতের মধ্যে ভারত চলে গেছে। তাতে সে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে, ভারতে গেলে দেশপ্রেমিক হয়ে গেল!
“আমার তো মনে হয় দেশে যদি সরকার থাকত, তাকে স্যাক করত। কারণ তার তো দায়িত্ববোধ নাই।”
বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে মইনুলের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে তার দল গঠন করার সমালোচনাও করেছিলেন শেখ হাসিনা।
প্রেস ক্লাবে ‘আদর্শ নাগরিক আন্দোলন’ আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য : আগামী নির্বাচনে কোন পথে?’ শীর্ষক এই গোলটেবিলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও আলোচনা করেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই কেন? আমি বলতে চাই, এর মূল বাধা ভারত ও তার গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। স্বভাবত প্রশ্ন হল- প্রমাণ কোথায়?
“আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসায় যে জাতীয় ঘটনা ঘটেছে তা ন্যক্কারজনক। এটা কোনো ছাত্রের পক্ষে করা সম্ভবপর নয়। যখন এই ঘটনা ঘটে তখন ৫ জন পুলিশ ছিলেন ভেতরে এবং বাইরে ১০ জন ছিলেন। আজকে পুলিশও স্বীকার করেছে এটা একটা প্রশিক্ষিত বাহিনী করেছে। এই প্রশিক্ষিত বাহিনী কার আছে? ছাত্রলীগ, পুলিশ-র্যাব অথবা সরকারের অনুমতিপ্রাপ্ত বিদেশি সংস্থার।”
মান্না কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা শুধু বললাম আমাদের ক্যাম্পাসে যেতে দেয় না, আমাদের ঘরে থাকতে দেয় না, মিছিল বের করলে গুলি করে। আমি যদি মনে করি, আমাদেরকে পরিবেশ করে দেবে, তাহলে আমরা লড়াই করব, তবে সেই কথা ভুলে যান। পৃথিবীতে ৩২ বছর পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ টিকবার ইতিহাস আছে। বাংলাদেশের ৯ বছর টিকেছে স্বৈরাচার এরশাদ। শেখ হাসিনা অন্তত ৯ বছর আছেন …..”
আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মন্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহিল মাসুদ, ইসলামিক পার্টির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান এজাজ হোসেন, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রফিকুল ইসলাম রিপনও বক্তব্য রাখেন।