এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সিরিয়ায় নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাগুলোর বেশিরভাগই প্রতিহত করেছে সিরীয় বাহিনী। সোমবার মধ্যরাতে দুটি বিমানঘাঁটিতে এ হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা। সানা এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ছবি তাদের টিভিতে প্রচার করেছে। তবে কারা এ হামলা চালিয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার কথা অস্বীকার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এদিকে রাসায়নিক হামলার তদন্তের জন্য ওপিসিডব্লিউয়ের তদন্ত দলকে দৌমায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। খবর রয়টার্সের।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং ‘ওয়ার মিডিয়া’ জানায়, সোমবার মধ্যরাতে সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দিয়েছে। ইসরাইল এসব হামলা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুটি বিমানঘাঁটিকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। ওয়ার মিডিয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, হোমস শহরের মধ্যাঞ্চলে শায়রাত বিমানঘাঁটিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এদের অধিকাংশই ধ্বংস করে দেয় সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ ছাড়া তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র দামেস্কের উত্তরে কালামোন অঞ্চলের পূর্বে দুমাইর এলাকার দুমাইর বিমানঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়। তবে তিনটিই প্রতিহত করতে সক্ষম হয় সিরিয়া। প্যান আরব আল-মায়াদিন টিভি জানিয়েছে, দুমাইর থেকে বিদ্রোহীদের অন্য এলাকায় সরিয়ে নেয়ার জন্য সমঝোতার একদিন পর সেখানে বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটল। পেন্টাগনের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘শনিবারের পর ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়নি। সোমবার রাতের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়।’ এর আগে ৯ এপ্রিল সিরিয়ার হোমসের টি-৪ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল।
এদিকে দৌমায় রাসায়নিক হামলা হয়েছে কিনা, তা তদন্তে তদন্তকারী দলকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। আজ বুধবার তারা দৌমা পরিদর্শনে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে সিরিয়ার মিত্রদেশ রাশিয়া। শনিবার থেকে রাসায়নিক হামলা তদন্তকারী আন্তর্জাতিক দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করছে। গত ৭ এপ্রিল দৌমায় রাসায়নিক হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হন। এ ঘটনায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে দায়ী করে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথভাবে সিরিয়ায় হামলার ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের সিদ্ধান্তের বৈধতা দিল দেশটির পার্লামেন্ট। একই সঙ্গে সিরিয়ায় আবার রাসায়নিক হামলা হলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারকে দায়ী করে আরও হামলা চালানোর ব্যাপারেও সমর্থন ও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুই ঘণ্টার এক জরুরি বৈঠকে তেরেসার শীর্ষমন্ত্রীরা একমত হন- যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একযোগে কাজ করা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে বিরোধী দল লেবার পার্টি এ সিরিয়ায় হামলার বৈধতা প্রদান ও ভবিষ্যৎ হামলার অনুমোদনের সমালোচনা করেছে।
ডেইলি মেইল জানায়, সিরিয়ায় হামলার বৈধতা নিয়ে বড় জয় পেয়েছেন তেরেসা। এ নিয়ে পার্লামেন্টের এক ভোটাভুটিতে ৩১৪টি ভোটের মধ্যে ২৭৮টি ভোট পেয়েছে তেরেসার সরকার। অন্যদিকে এর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৩৪টি। এ ভোটাভুটিকে অর্থহীন বলে অভিহিত করে এতে অংশ নিতে অস্বীকার করেছে বিরোধী দল লেবার পার্টি।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সিনেট। এ জন্য একদল সিনেটর সোমবার ‘অথারাইজেশন ফর দ্য ইউজ মিলিটারি ফোর্স’ বা এইউএমএফ নামের একটি নতুন বিল সিনেটে তুলেছেন। বিলটি পাস হলে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে। এইউএমএফের একটি বিলের মধ্য দিয়ে ২০০১ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণার ক্ষমতা দেয়া হয়। একই বিলের মাধ্যমে ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালান বুশ। পুরনো এই বিলের জায়গায় আসবে নতুন বিলটি।
দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানায়, বিলটি তোলার পেছনে প্রধান ভূমিকায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের সিনেটর ও পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান বব কর্কার এবং বিরোধী ডেমোক্রেটিক দলের সিনেটর টিম কেইন।
ওদিকে, রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলো এখন স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়েও খারাপ এক পরিস্থিতির মুখোমুখি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। সোমবার বিবিসির হার্ডটক প্রোগ্রামে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।