এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় নির্বাচনের আগেই জঙ্গি ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে সরকার। তা বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে জঙ্গি ও মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোসহ অন্যান্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ২ হাজার ২১ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ থাকছে ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আগামী বাজেট হবে জনবান্ধব। জনগণকে সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকছে। তিনি আরও বলেন, এটি হচ্ছে বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট। যে কারণে উন্নয়ন খাতকেও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও আগামী বাজেটে ৫ হাজার ১৫১ কোটি টাকা চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ বেশি বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে বেশি চাওয়া হয় ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন খাতে চাওয়া হয় ১২৪ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হবে। বরাদ্দের যৌক্তিকতা থাকলে অবশ্য বাড়ানো হবে।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারা অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য আগামী বাজেটের আওতায় এ তিন প্রতিষ্ঠানে মোট ২ হাজার ১৯২ জনবল নতুন নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫০ জন হচ্ছে কারা অধিদফতরে। মূলত কারা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এ নিয়োগ দেয়া হবে। বর্তমানে সেখানে ২ হাজার ১০৭ জন কর্মরত আছে।
এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা আরও বাড়াতে ১ হাজার কর্র্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে সেখানে ৭ হাজার ৭৩০ জন কর্মরত আছে। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ক্ষমতা বাড়াতে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে ২৪২টি শূন্য পদে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে ১ হাজার ১৯১ জন। নতুন এ জনবল নিয়োগের ফলে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে তাদের বেতন-ভাতা কার্যকর হবে। এতে আগামী বছরে এ তিন প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানও জোরদার করা হবে। বিশেষ করে যুব সমাজ ও আগামী প্রজন্মকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স নীতিকে’ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে আগামী বাজেটে।
সূত্র মতে, আগামী বাজেটে অতিরিক্ত ২ হাজার ৬৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এ প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়, কারা অধিদফতরে বর্তমান বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৭০ কোটি টাকা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে ৩২ কোটি টাকা এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। এছাড়া উন্নয়ন খাতে আরও অতিরিক্ত ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ওই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমান ৫৫ জেলায় কারাগার রয়েছে। অধিকাংশ কারাগারে সংস্কার ও মেরামত প্রয়োজন। ফলে নতুন নিয়োগকৃত জনবলের বেতন-ভাতা, কারাগারের মেরামত ও সংস্কার, সরবরাহ ও সেবা, সম্পদ সংগ্রহ ও ক্রয়, নির্মাণ ও পূর্ত কাজের জন্য ৭০ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে।
সূত্র আরও জানায়, প্রতি বছর নতুন ফায়ার সার্ভিস স্থাপন হচ্ছে। সে কারণে বাড়ছে গাড়ি ও পাম্পের সংখ্যা। পাশাপাশি জ্বালানি ব্যয়, ভূমি, পৌর কর, ইউটিলিটি ব্যয়, শ্রমিকদের মজুরি ও রয়েলটি খাতে ব্যয় বাড়ছে। বতর্মান ফায়ার সার্ভিসে ৩ হাজার ৩৭০টি গাড়ি থাকলেও পুরনো রয়েছে ২৪০টি। এসব গাড়ির ইঞ্জিন প্রতিস্থাপনসহ গাড়ি ও পাম্পের মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ ক্রয়, টায়ার টিউব সংগ্রহে ব্যয় বাড়বে।
এছাড়া এ অধিদফতরের অধীনে ৩২৯টি ফায়ার স্টেশন ও ৯৫টি আবাসিক ভবন জরাজীর্ণ। সেগুলো মেরামত ও সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত ৩২ কোটি টাকার প্রয়োজন।
এদিকে মাদকবিরোধী বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম, মাদকবিরোধী অভিযান এবং চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণের উদ্যোগ থাকবে বাজেটে। পাশাপাশি মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এসব কাজে অতিরিক্ত আরও ২২ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।