এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নগদ টাকার সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর জানুয়ারিতে ব্যাংকটিতে যে পরিবর্তন শুরু হয় তা এখনো অব্যাহত থাকায় এমন অবস্থায় পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আর ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের ছাঁটাই আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে এ আতঙ্ক বেশি। কোনো কারণ ছাড়াই সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার চাকরি যাওয়ায় এমন অবস্থায় পড়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।
ব্যাংকের আমানত ও বিনিয়োগ হার (আইডিআর) বর্তমানে ৯২ শতাংশ হয়ে গেছে যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত হারের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ব্যাংকটি বন্ড ছেড়ে ৫০০ কোটি টাকা তোলার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল তাও বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকটির অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নগদ টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে না। এক সময় এ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন খাতে ঋণ নেওয়ার জন্য বলা হতো, এখন কর্মকর্তারা ঋণের জন্য আবেদন করলেও তাদেরও ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকটি।
সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, বর্তমান মোট আমানতের পরিমাণ ৭৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মুদারাবা আমানত ৬৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। আর বাকিটা খরচ ছাড়া (কস্ট ফ্রি) আমানত। ব্যাংকটির বিনিয়োগ রয়েছে ৭৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এ বিনিয়োগের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগ ৭৪ হাজার ৮৬ কোটি এবং বাকিটা শেয়ার বিনিয়োগ। সে হিসাবে আইডিআর ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের ৮৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। তবে সার্বিক আর্থিক সূচক ভালো থাকলে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা যায়। যদিও সর্বোচ্চ এ হার ১ শতাংশ কমিয়ে ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের ঋণ ৮৯ শতাংশের বেশি রয়েছে তাদের আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এ সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
ব্যাংকটি নগদ টাকার সংকট মেটাতে বিভিন্ন উপায় খুঁজছে। আগামী ২৫ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য বোর্ড সভায় ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএমে) তারিখ এবং শেয়ার হোল্ডারদের কত শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হবে সে বিষয়ে আলোচনা হবে। এবার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে শুধু বোনাস শেয়ার বা স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে। অন্যদিকে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হিসাবে খাতা কলমে না টেনে অনেক রাইট অফ করে আইডিআর বাড়ানোর কথাও ভাবছে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা হতাশা প্রকাশ করছেন। কারণ, শেয়ারবাজারের অন্তর্ভুক্তির পর থেকে ভালো শেয়ার হিসাবে সবসময় বিনিয়োগকারীরা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনে আসছেন। কিন্তু গত বছরের পরিবর্তন শুরু হওয়ার পর থেকে শেয়ারটির দাম কেবল কমছেই। অন্যদিকে নগদ লভ্যাংশ ও বোনাস লভ্যাংশও গত বছর পাননি তারা। গতকাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি দাম ছিল ২৭ টাকা ৮০ পয়সা। গত বছরের ৬ জানুয়ারি যেখানে শেয়ারের দাম ছিল ৩১ টাকা ৪০ পয়সা। গত বছরে এ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সর্বোচ্চ দাম হয়েছিল ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা।
গতকাল ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কখন চাকরি চলে যায় এমন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে। আর কী কারণে চাকরি যাচ্ছে সেটাও কারো কাছেই স্পষ্ট নয়। তুলনামূলক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাঝে এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দেশের বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা এ ব্যাংকে গত বছর জানুয়ারি থেকে পরিবর্তন শুরু হয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কমিটির শীর্ষ ৫ জন কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়। যদিও ব্যাংকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা সবাই পদত্যাগ করেছেন।
ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন সামীম মোহাম্মদ আফজাল। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তিনি এ পদে নিযুক্ত হন। তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। বর্তমানে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর জেনারেল (ডিজি) হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৯৮৩ সালে সহকারী জজ হিসেবে সিলেটে কর্মজীবন শুরু করেন।