এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৃহস্পতিবার লন্ডনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমনওয়েলথ সম্মেলনের সাইডলাইনে এ বৈঠকটি হয়। এতে তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দুই প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের ল্যাংকাস্টার হাউসে আজ বিকালে বৈঠকে মিলিত হন এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
রোহিঙ্গা ও তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন।
শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনাকালে ভারত তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে, যা আমাদের চিন্তার কাছাকাছি। তিনি বলেন, ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তা করছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটিতে ‘বাংলাদেশ হাউস’ উদ্বোধনের বিষয়টিও দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় স্থান পায়। আগামী মে মাসের শেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন হবে। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাবর্তনে নরেন্দ্র মোদির যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করতে শেখ হাসিনাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গেলে ওই সময় দুই নেতার মধ্যে আবারও সাক্ষাৎ হবে বলে আলোচনায় উঠে আসার বিষয়টি বৈঠকে উপস্থিত একজন জানিয়েছেন।
২৫তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানে দুই প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে অবস্থান করছেন। আজ এ সম্মেলন শুরু হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমারও টুইট করেছেন। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন বলেও টুইট বার্তায় জানান তিনি।
টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিবেশীরাই প্রথম। একজন প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের মতামত ফলপ্রসূভাবে বিনিময় করেছেন।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। তার আমলে দু’দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হলেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে চুক্তি সই হতে পারেনি। ২০১৭ সালে ফিরতি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত যান। ওই সময়েও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এছাড়াও ভারতের পর্যটন নগরী গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনেও দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হয়। তবে বাংলাদেশ ও ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ও মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত লন্ডনের বৈঠকটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে নরেন্দ্র মোদি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তার আমলেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে। ভারতের তরফে এখনও বলা হচ্ছে, তিস্তা চুক্তির চেষ্টা চলছে। এ চুক্তির ব্যাপারে ভারতে ঐকমত্য এখনও সম্পন্ন হয়নি। তিস্তা চুক্তি করা সম্ভব হলে মোদি বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে সফরে আসতে পারেন।
মোদির সঙ্গে এ বৈঠকের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সময়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের কর্মসূচি ও এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়।