এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে আচরণ বিধিমালা সংশোধন নিয়ে ইসির কমিশনারদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ‘সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১৬’ এ সংশোধনী আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আচরণ বিধিমালায় কোনো ধরনের সংশোধনী আনা যেতে পারে- তা পর্যালোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব আইন সংস্কার কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কমিটির প্রধান হচ্ছেন কমিশনার কবিতা খানম। এছাড়া তিনি আরও বলেন, খুলনায় মেয়র প্রার্থী হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেকের ছেড়ে দেয়া বাগেরহাট-৩ আসনে উপনির্বাচনে মে মাসে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সে ক্ষেত্রে জুনের শেষ সপ্তাহে বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণ করা হবে। আগামী কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
তবে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে কমিশন দেখছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইসির এ সভায় চার কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আচরণ বিধি সংশোধন প্রসঙ্গে কমিশন সভার আলোচনার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, আচরণ বিধিমালার সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কারা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন বড় এলাকা নিয়ে গঠিত। পৌরসভা ও ইউপি ছোট এলাকা নিয়ে গঠিত। অনেক সংসদ সদস্য সিটি এলাকায় বসবাস করে থাকেন, যাওয়া-আসা করে থাকেন। স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের তফসিল হলে তাদের নিজ এলাকায় যাওয়া-আসা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। আচরণ বিধিতে বলা আছে, শুধু ভোটের দিন ভোট দিতে যেতে পারবেন। অন্য সময় যেতে পারবেন না। যার ফলে সংসদ সদস্যদের নিজের এলাকার বাইরে থাকতে হয়। সেদিক বিবেচনা করে আলোচনাটা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সংসদ সদস্যরা ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’র আওতায় আছেন। নির্বাচন হলে সিটি কর্পোরেশনের মতো বিরাট এলাকায় অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাইরে থাকতে হয়। এ বিষয়টি বিবেচনা করেই সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলোচনাটা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা সরকারি কোনো অফিস হোল্ড করেন না। ওনারা কোনো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না। তাই তারা কোনো অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিনা বা সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিনা- তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কবিতা খানমের নেতৃত্বে আইন ও বিধিমালা সংস্কারে যে কমিটি রয়েছে, সেই কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবে। এরপর বিষয়টি কমিশনে উত্থাপন করবে। এ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিয়ে আচরণ বিধিমালা সংশোধনের পক্ষে একাধিক নির্বাচন কমিশনার ও ইসির কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। তাদের কেউ কেউ এ বিধিমালাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও বৈঠকে মন্তব্য করেন। অপরদিকে সংশোধনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে একজন কমিশনার বৈঠকে বলেন, এ পর্যায়ে বিধিমালা সংশোধন করা হলে কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে কথা উঠবে। এমনকি কমিশনের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। আরেকজন কমিশনার বলেন, আচরণ বিধিমালায় আরও কয়েকটি জায়গায় অসঙ্গতি রয়েছে, সংশোধন করলে সব জায়গায় এক সঙ্গেই সংশোধন করা দরকার। বৈঠকে বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন এ সংক্রান্ত বিধিবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তা কী কারণে হয়নি, সে বিষয়েও বক্তব্য রাখেন ইসির কর্মকর্তারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়টি আচরণ বিধিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বিধি সংশোধন নিয়ে কমিশনারদের দু’পক্ষের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আচরণ বিধিমালা পর্যালোচনার জন্য আইন সংস্কার কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তারা।
বিধিমালা সংশোধন নিয়ে ইসি সচিব আরও বলেন, আচরণ বিধিতে কি কি সংশোধন আসতে পারে তা আইন সংস্কার কমিটি একটি প্রস্তাব দেবে। এজন্য কমিটিকে কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পর বিধিমালা সংশোধনের এ উদ্যোগ কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, আচরণ বিধি মাঝেমধ্যে আপডেট করা লাগে। আগে দলীয় প্রতীকে হতো না, এখন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। তখন এক ধরনের প্রেক্ষাপট, এখন আরেক ধরনের প্রেক্ষাপট। স্বাভাবিকভাবে এমপিরা এলাকায় যেতে পারেন না। এটা আপডেট করার জন্য আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের চাপে কি এ উদ্যোগ কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, চাপে না। যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের ‘স্টেক হোল্ডার’। তাদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের নিয়ে পরামর্শ করে, আলাপ-আলোচনা করে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো আমরা বিবেচনা করি। আবেদন-নিবেদন করলে ইসি বিষয়গুলো বিবেচনা করে। বিএনপির দেয়া প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন সভায় বিএনপির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি। তাদের প্রস্তাব নিয়ে কমিশন সভা হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। হয়তো হতে পারে। আজকের বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। অপর এক প্রস্তাবের জবাবে সচিব বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে সংশোধিত আচরণ বিধিমালা প্রয়োগ হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। এটা প্রস্তাব, বিবেচনা করা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে ইমপ্লিমেন্ট হতেও পারে, নাও হতে পারে।
১৩ এপ্রিল ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। তারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে আচরণ বিধি সংশোধনের দাবি জানান। ওই সময়ে তারা সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২’-এর সংশোধন নিয়েও কথা বলেন। পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ইসিতে যায়।
হলফনামা নিরীক্ষা করবে না ইসি : হলফনামার তথ্য নিয়ে নানা অভিযোগ করছেন দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা। এসব হলফনামা যাচাই করা হবে কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, হলফনামা যখন প্রার্থী দেন, একজন এফিডেভিট দেন, এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। ম্যাজিট্রেটের কাছে যখন উনি এফিডেভিট করেন, এটার দায়িত্ব তখন তার। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ ইসির থাকে না।