এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অবস্থান করা বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়ে যাচ্ছে ব্রাসেলস। নাগরিকদের প্রত্যাবাসনে ইইউর সঙ্গে কাজও করছে বাংলাদেশ। এর মধ্যেও ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। ইইউর এক প্রতিবেদন বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৬— এ পাঁচ বছরে ৬৪ হাজার ২১৫ জন বাংলাদেশী ইইউর বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে। যদিও এর মধ্যে ৪৩ হাজার ৬৪৫ জনের আবেদনই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ইইউর সর্বশেষ প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ৬ হাজার ৫৮৫, ২০১৩ সালে ৯ হাজার ৩৫০, ২০১৪ সালে ১১ হাজার ৯০৫, ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১২০ এবং ২০১৬ সালে ১৭ হাজার ২৫৫ জন বাংলাদেশী রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছে। এর মধ্যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ২০১২ সালে ৭ হাজার ৯২৫, ২০১৩ সালে ৭ হাজার ৭৫০, ২০১৪ সালে ৬ হাজার ৭৯৫, ২০১৫ সালে ৯ হাজার ৪৬০ এবং ২০১৬ সালে ১১ হাজার ৭১৫ জন বাংলাদেশীর আবেদন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে ইইউতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে সবচেয়ে বেশি অবেদন পড়েছে সিরিয়া থেকে, যা মোট আবেদনের ২৬ শতাংশ। দেশটি থেকে এ সময় ৩ লাখ ৪২ হাজার জন রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে। এক্ষেত্রে শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান।
২০১৬ সালে ইইউতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে করা আবেদন পরোক্ষভাবে প্রত্যাহারের হার বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ৯২ শতাংশ। এ সময়ে প্রায় ২৭ হাজার বাংলাদেশীর অবেদন প্রত্যাহার হয়েছে পরোক্ষভাবে। এছাড়া সরাসরি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন প্রত্যাহার করেছেন ২ হাজার ৭৩০ জন। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করার পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ না করা এবং এ বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা না করার বিষয়টিকে পরোক্ষভাবে আবেদন প্রত্যাহার হিসেবেই বিবেচনা করে ইইউ।
২০১৪ সাল থেকে অভিবাসীদের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করবে, সেসব দেশের নাগরিকদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিসা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপে অনুপ্রবেশ করা অবৈধ অভিবাসীরা মূলত মানব পাচারের শিকার। এদের বেশির ভাগই সমুদ্রপথে ইতালি হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে। এ অবৈধ মানব পাচার ঠেকাতে এ পথটি বন্ধ করেছে ইইউ। এ পথে আসা বেশির ভাগই বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার নাগরিক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যানভিত্তিক অধিদপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে অনুপ্রবেশ করা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭তম। ইইউভুক্ত ২৮টি দেশে ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশী অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে।