এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : দেশে শীর্ষ তিন সেলফোন অপারেটরের মূল প্রতিষ্ঠানের দেশগুলোয় মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ১৫ দশমিক ৬২ থেকে ৬২ দশমিক শূন্য ৭ মেগাবিটস পার সেকেন্ড (এমবিপিএস)। যদিও বাংলাদেশে এ গতি এখনো ৮ এমবিপিএসের নিচে। এর চেয়ে কম গতির দেশ রয়েছে মাত্র আটটি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট সেবার গতিবিষয়ক তালিকা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওকলা। লক্ষাধিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি করে তারা। এ তথ্য সংগ্রহের জন্য ওকলার রয়েছে ১৯০টির বেশি দেশে ছয় হাজারের অধিক সার্ভারের বিশাল পরীক্ষণ অবকাঠামো। সম্ভাব্য প্রতিটি স্থানের সব ধরনের ডিভাইস থেকে প্রতি ঘণ্টায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশে প্রতি মাসে ৬৭০ একক ব্যবহারকারীর তথ্যপ্রাপ্তির ওপর। এর ভিত্তিতে আগের মাসের ইন্টারনেটের গতি পরবর্তী মাসের শুরুতেই হালনাগাদ করে ওকলা।
ইন্টারনেট গতি নিয়ে ওকলার সর্বশেষ স্পিডটেস্ট ইনডেক্সের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি ৭ দশমিক ৯১ এমবিপিএস। তালিকায় স্থান পাওয়া ১২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম। আগের মাসের চেয়ে তালিকায় সাত ধাপ উন্নয়ন হলেও গতি বিবেচনায় তালিকার নিচের দিকেই রয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম গতির ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পরে আছে কেবল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (৭ দশমিক ৫৪), ইউক্রেন (৭ দশমিক ৩৫), নেপাল (৭ দশমিক ২১), আফগানিস্তান (৬ দশমিক ৬৬), উজবেকিস্তান (৬ দশমিক ৫৬), লিবিয়া (৬ দশমিক শূন্য ৯), তাজিকিস্তান (৫ দশমিক ৪২) ও ইরাক (২ দশমিক ৫৫)। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত। শুধু টেলিযোগাযোগ নয়, সব ধরনের অবকাঠামোই সেখানে বিপর্যস্ত।
গ্রামীণফোন নামে বাংলাদেশে সেলফোন সেবা দিচ্ছে নরওয়ের টেলিনর। নরওয়েতে সেবাটির গড় গতি ৬২ দশমিক শূন্য ৭ এমবিপিএস। ওকলার তালিকা অনুযায়ী, মোবাইল ইন্টারনেটের গতি সবচেয়ে বেশি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এ দেশটিতেই।
দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ সেলফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার মূল প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ। মালয়েশিয়ায় মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ১৫ দশমিক ৬২ এমবিপিএস। আর নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ভিয়নের মালিকানাধীন বাংলালিংক গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে দেশের তৃতীয় শীর্ষ সেলফোন অপারেটর। নেদারল্যান্ডসে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতিও ৫৪ এমবিপিএসের বেশি। মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতিতে নেদারল্যান্ডস রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
সেলফোন অপারেটরদের দাবি, উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার এসব দেশ এমনিতেই প্রযুক্তিগতভাবে অনেক এগিয়ে। এর মূল কারণ ওইসব দেশে খাতটিতে বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো। কোনো কোনো দেশে তরঙ্গ বরাদ্দে কোনো ফি দিতে হয় না। বরং সেবার মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হয়। যদিও বাংলাদেশে উচ্চমূল্যে তরঙ্গ বরাদ্দ নিতেই বিনিয়োগের বড় অংশ চলে যায়, যার প্রভাব পড়ে সেবায়।
সেলফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর বলেন, দেশে সেলফোন সেবা খাত থেকে রাজস্ব আয়ের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। মানসম্মত সেলফোন সেবা নিশ্চিত করতে হলে উচ্চ তরঙ্গমূল্য ও করের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। এতে অপারেটররা সেবার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতেও তুলনামূলক উচ্চমূল্যে তরঙ্গ বরাদ্দ নিতে হয়। তারপরও দেশটিতে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ৯ দশমিক শূন্য ১ এমবিপিএস। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে সবচেয়ে এগিয়ে শ্রীলংকা। দেশটিতে এ গতি ১৬ দশমিক শূন্য ৮ এমবিপিএস। এছাড়া পাকিস্তানে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি ১৩ দশমিক শূন্য ৮ এমবিপিএস।
ওকলার সেবা স্পিডটেস্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতিতে শীর্ষ নরওয়ের পরেই আইসল্যান্ড। দেশটিতে এ গতি ৫৮ দশমিক ৪৪ এমবিপিএস। মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস (৫৪ দশমিক ৫৩), সিঙ্গাপুর (৫১ দশমিক ৯২), সংযুুক্ত আরব আমিরাত (৫১ দশমিক ৭২), কাতার (৫১ দশমিক ৬১), অস্ট্রেলিয়া (৫০ দশমিক শূন্য ৪), হাঙ্গেরি (৪৬ দশমিক ৩৯), কানাডা (৪৫ দশমিক ৬৭) ও বেলজিয়াম (৪৫ দশমিক ১৬)।
ওকলার হিসাবে, বর্তমানে সেলফোনভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গড় ডাউনলোড গতি ২২ দশমিক ১৬ এমবিপিএস। আর আপলোডের ক্ষেত্রে এ গতি ৯ দশমিক শূন্য ১ এমবিপিএস। ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ৪২ দশমিক ৭১ এমবিপিএস ও গড় আপলোড গতি ২০ দশমিক ৩৯ এমবিপিএস। বাংলাদেশে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের গড় গতি ১৬ দশমিক ৩১ এমবিপিএস।
থ্রিজির পর সম্প্রতি দেশে ফোরজি প্রযুক্তির সেবা চালু হয়েছে। এ সেবার মান নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা তৈরি করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। খসড়া বিধিমালায় ফোরজি সেবার গড় গতি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৭ এমবিপিএস। যদিও বর্তমানে সেবাটির বৈশ্বিক গড় গতি ১৬ দশমিক ৯ এমবিপিএস।
তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্তৃতি নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ফোরজি প্রযুক্তির সেবার বৈশ্বিক গড় গতি ১৬ দশমিক ৯ এমবিপিএস। পাকিস্তানে ফোরজির গতি ১৩ দশমিক ৫৬, শ্রীলংকায় ১৩ দশমিক ৯৫, মালয়েশিয়ায় ১৪ দশমিক ৮৩, থাইল্যান্ডে ৯ দশমিক ৬ এমবিপিএস ও মিয়ানমারে সেবাটির গড় গতি ১৫ দশমিক ৫৬ এমবিপিএস। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ফোরজির গড় গতি সবচেয়ে কম, মাত্র ৬ দশমিক শূন্য ৯ এমবিপিএস। তবে সেবাটির বিস্তৃতির বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম ভারত। ২০১২ সালে চালু করা এ সেবার আওতায় এসেছে দেশটির ৮৬ শতাংশের বেশি এলাকা। ফোরজির গড় গতি সবচেয়ে বেশি এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে এ গতি ৪৪ দশমিক ৩১ এমবিপিএস।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, দেশে এরই মধ্যে ফোরজি সেবা চালু হয়েছে। সেলফোন অপারেটরদের সেবার মান নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেবাটির মান কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।