এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : গত বছরের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে তারা। বিপুল এ জনগোষ্ঠী জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছে কাঠখড়ি বা লাকড়ি দিয়ে, যা তারা সংগ্রহ করছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে। এতে দ্রুত উজাড় হচ্ছে বন। এ অবস্থায় বন রক্ষায় রোহিঙ্গাদের জ্বালানি হিসেবে কয়লা সরবরাহের চিন্তা করছে সরকার। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, উখিয়া-টেকনাফের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোয় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা প্রায় পাঁচ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমিতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ঝুপড়ি নির্মাণ করেছে। এসব রোহিঙ্গা পরিবারের প্রায় ৮৫ শতাংশ জ্বালানির জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিটি পরিবারের জন্য দৈনিক গড়ে পাঁচ কেজি চাহিদা হিসেবে নিলে পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য দিনে ৮০০ থেকে ৮৫০ টন লাকড়ির প্রয়োজন হচ্ছে, যার পুরোটাই আশপাশের বন থেকে সংগ্রহ করছে তারা।
এমনকি লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে গোড়াসহ গাছ উপড়ে ফেলেছে তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এভাবে বনভূমি দখল অব্যাহত থাকার কারণে ভয়ানক পরিবেশগত ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তাদের প্রাথমিক আলোচনায় জ্বালানি হিসেবে রোহিঙ্গাদের কয়লা সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যদিও আগে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। তবে যাচাই-বাছাই করেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বসতি স্থাপন এবং জ্বালানি চাহিদা মেটাতে রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত বন উজাড় করছে। বন কাটার গতি এখন ইনানী বিচের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে, যা পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তাদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে কয়লা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হয়েছে। অচিরেই যাচাই-বাছাই করে তা কার্যকর করা হবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের ৪ হাজার ৩১৮ একর বনভূমিতে রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি স্থাপন করতে গিয়ে ১ হাজার ২০০ একর বনভূমির সৃজিত বন (সামাজিক বনায়ন) এবং ২ হাজার ৩১৮ দশমিক ৬০ একর প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক বনের মধ্যে প্রাকৃতিক গাছ, লতাগুল্ম, সানগ্রাস, উলুফুল, বাঁশ, বেত, ঔষধি গাছসহ অন্যান্য গাছের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় বন বিভাগের মালিকানাধীন বনভূমিতে অপরিকল্পিত রোহিঙ্গা বসতি এবং রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের জন্য নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। গাছ কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় আগামী বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গ্যাস সরবরাহের পরিবর্তে কয়লা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাছাড়া উজাড় করা বন আবার কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা করা হচ্ছে। বনভূমির এ ক্ষতি কিছুটা হলেও সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে পূরণের পরিকল্পনা রয়েছে।