এশিয়ান বাংলা, মোংলা : মোংলা বন্দরে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পর্যাপ্ত পানির জোগান দিতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে জাহাজের নাবিক ও বন্দর শ্রমিক-কর্মচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এ অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। ঘন ঘন লোডশেডিং ও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির এ সংকট বলে দাবি করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু বাণিজ্যিক জাহাজই নয়, বন্দর ভবন ও আবাসিক এলাকাজুড়েই খাবার পানির সংকট রয়েছে।
জানা যায়, মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী বন্দরে আসা দেশি-বিদেশি জাহাজে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে আসছে। বন্দর চ্যানেলে ভেড়ার পর প্রতিটি জাহাজে (মাদার ভ্যাসেল) অন্তত ১৫০ থেকে ২০০ টন বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়।
মোংলা বন্দরের হারবার বিভাগ জানায়, এ বন্দরের বহির্নোঙ্গর ও জেটিতে ১০টি বাণিজ্যিক জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল) অবস্থান করছে। প্রতিটি জাহাজে অন্তত ১২০ থেকে ১৩০ জন বিদেশি নাবিক, শ্রমিক-কর্মচারী ও নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। সে হিসাবে নাবিক শ্রমিকের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে পারছে না।
বন্দরের শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান মানিক বলেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবে শ্রমিকদের খাওয়া, গোসল ও রান্নার কাজে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করছেন।
বন্দর সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের নিজস্ব কোনো উৎস নেই। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় মোংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে রামপালের ফয়লা নামক স্থান থেকে পাইপ লাইনে পানি সংগ্রহ করে তা বাণিজ্যিক জাহাজ, বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা, আবাসিক এলাকা, ইপিজেড ও শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার এম ওয়ালিউল্লাহ জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে চাহিদামতো বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ কারণে জাহাজেও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, তিন দিন ধরে কয়েকটি জাহাজ থেকে ৪শ’ টন খাবার পানির চাহিদা পাঠানো হলেও তারা মাত্র ২০ টন পানি সরবরাহ করতে পেরেছেন। তবে এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে জানান তিনি। মোংলা শ্রমিক-কর্মচারী নেতা মো. ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় হাজারও শ্রমিক-কর্মচারীর বসবাস। এছাড়া ইপিজেড ও শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পানির অভাবে এসব এলাকার বাসিন্দারা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মোংলা বন্দর এলাকার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণেও পর্যাপ্ত পানি উঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
শিপিং এজেন্ট ও শ্রমিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক এইচএম দুলাল বলেন, এর ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশি নাবিকরা এ দেশে আসতে চাইবেন না।