এশিয়ান বাংলা, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে ১০টি আদালতে বন বিভাগের করা অন্তত সাড়ে ৩ হাজার মামলা ঝুলে আছে। চট্টগ্রাম বনাঞ্চলের চারটি বিভাগের কর্মকর্তারা এসব মামলা করেন। অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাটা, গাছ পাচার, পাহাড় কাটা এবং জোরপূর্বক পাহাড় দখল করে বসতি নির্মাণসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জেলার ১০টি উপজেলায় ২২০টি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ক্রোকি পরোয়ানা কার্যকর হচ্ছে না। তবে থানা পুলিশের কাছে এসব ক্রোকি পরোয়ানা পৌঁছলেও বাস্তবায়নে ধীরগতি হচ্ছে বলে সংশিষ্টদের অভিযোগে জানা গেছে। তবে ক্রোকি ও গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকরে প্রতি মাসে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি সভায় পুলিশকে এ বিষয়ে তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের চারটি বন বিভাগে করা সাড়ে তিন হাজার মামলার মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগে ১৭৮৯টি, দক্ষিণে ১৫০০টি, উপকূলীয় বন বিভাগে ২৫০ এবং বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের করা প্রায় ৮০টি মামলা বিচারাধীন আছে চট্টগ্রামের ১০টি আদালতে। এরমধ্যে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে অন্তত আড়াই হাজার মামলা। চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ১০টি উপজেলায় ২২০টি মামলায় ক্রোকি পরোয়ানা জারি করা হলেও এর অধিকাংশই কার্যকর হচ্ছে না। এ জন্য থানা পুলিশের অবহেলাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্রোকি পরোয়ানার মধ্যে সীতাকুন্ড থানায় ৮টি, মিরসরাইয়ে ২১টি, জোরারগঞ্জে ২টি, ভুজপুরে ২৫টি, ফটিকছড়িতে ১৪টি, রাউজানে ২৪টি, রাঙ্গুনিয়ায় ২৬টি, আনোয়ারায় ১০টি, চন্দনাইশে ৫৫টি ও লোহাগাড়ায় ৩৫টি।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অরুণ বরণ চৌধুরী জানান, চট্টগ্রামে চারটি বন বিভাগে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলা দায়ের ও তদন্ত করে থাকেন বন কর্মকর্তারাই। তবে আসামি গ্রেফতার ও ক্রোকি পরোয়ানা কার্যকরের দায়িত্ব থানা পুলিশের। থানা পুলিশ আসামি গ্রেফতার ও ক্রোকি পরোয়ানা দ্রুত কার্যকর করলে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়। আরও জানান, এসব মামলা নিষ্পত্তির ধীর গতির প্রধান কারণ হচ্ছে সাক্ষীদের কোনো ধরনের টিএ-ডিএ দেয়া হয় না। এক সময় চট্টগ্রামে মামলার সাক্ষী বন কর্মকর্তা দেখা যায় বদলি হয়ে খুলনা সুন্দরবনে চলে গেছে। এতদূর থেকে নিজের টাকা খরচ করে তাকে সাক্ষ্য দিতে চট্টগ্রামে আসতে হয়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মনিরুল ইসলাম জানান, মামলায় আগের চেয়ে অনেক গতি এসেছে। বিচারাধীন আদালতের সংখ্যাও বেড়েছে। অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাটা, গাছ পাচার, পাহাড় কাটা এবং জোরপূর্বক পাহাড় দখল করে বসতি নির্মাণসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পুলিশ সূত্র জানায়, বন বিভাগের করা এসব মামলাসহ সবকটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ক্রোকি পরোয়ানা কার্যকরের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে যথাসময়ে আদালত থেকে পৌঁছে যায়। তবে পলাতক থাকার কারণে অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা যায় না। তবে ক্রোকি পরোয়ানা কার্যকরে পুলিশ যথাসম্ভব চেষ্টা করে থাকে।