এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক প্রতিবেদনে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, বেআইনি আটক, গুম ও নাগরিক স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এছাড়া ২০১৭ সালে দেশে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধতা ছিল। বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে সরকার সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া হয়রানির ভয়ে অনেক সাংবাদিক ‘স্বআরোপিত সেন্সরশিপ’ আরোপ করছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের বার্ষিক কংগ্রেশনাল-ম্যান্ডেটেড হিউম্যান রাইটস রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়। স্থানীয় সময় শুক্রবার দেশটির ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন জে সালিভান এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ সংবিধানে বাকস্বাধীনতার অধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার অনেক সময় এ অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক সাংবাদিক হয়রানি ও রোষানলের ভয়ে সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে ‘স্বআরোপিত সেন্সরশিপ’ আরোপ করছেন।
এতে বলা হয়, অনেক মুক্ত সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রভাবে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোকেও বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে এসব সংস্থা চাপ দিচ্ছে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে সরকার বিজ্ঞাপনকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
২০১৬ সালে অনেক বড়মাপের নেতা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাংবাদিক কনক সারওয়ার।
প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার ইস্যু ছিল সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, বেআইনি আটক ও গুম এবং নাগরিক স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ।
প্রতিবেদনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানানো হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, গত বছর ১৬২ জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। আর রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছেন ৪৪ জন। এছাড়া মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে গত বছরের প্রথম ১০ মাসে ১১৮ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়মুক্তি পাচ্ছে। বাহিনীর হাতে হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনায় সরকার তদন্ত ও বিচারের পদক্ষেপ নিয়েছে খুব কম। পুলিশ ও নিরাপত্তা সেবার প্রতি জনগণের অবিশ্বাসের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সহযোগিতা চাওয়া বা অপরাধের ঘটনার খবর জানানোর প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।
জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে মতপ্রকাশ, সংবাদমাধ্যম ও এনজিও কর্মকাণ্ডে বাধা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতায় বাধা, দুর্নীতি, লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, উপজাতি, যৌনাচার ও লিঙ্গ পরিচয়ভিত্তিক বৈষম্য বিরাজ করছিল। মানবপাচার গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে রয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের অধিকারে বাধা এবং শিশুশ্রম রয়েছে মারাÍকভাবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। দৃশ্যত তা আন্তর্জাতিক সহিংস চরমপন্থা দ্বারা অনুপ্রাণিত। এছাড়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ১১ নভেম্বরের একটি সংবাদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ওই খবরে বলা হয়েছে- ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে দেয়া ফেসবুক পোস্টের গুজবে রংপুরে স্থানীয় মুসলমানরা ৩০ হিন্দু বাড়ি ভাংচুর ও জ্বালিয়ে দেয়। এনজিওদের মতে, বাংলাদেশে বর্ণ ও ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, অনেক দলিতের (নিুবর্ণের হিন্দু) ভূমি, পর্যাপ্ত আবাসন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুবিধাবঞ্চিত।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও উল্লেখ করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিফিংয়ের সময় বলেন, এ ঘটনায় দায়ীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছে, আমরা তার নিন্দা জানাই। এ সংকট সমাধানে আমরা আমাদের সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছি।