এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংসদ বহাল রেখে আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত হবে না। তিনি আরও বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এটা বলা যায়, কিছু অসৎ লোক ছাড়া সবাই বলবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। এটি তার নিজস্ব মতামত বলেও জানান তিনি। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
দেশবাসী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চান মন্তব্য করে ড. কামাল হোসেন বলেন, সবাই আশা করেছিল ২০১৪-এর তথাকথিত একটি নির্বাচনের পর খুব শিগগিরই আরও একটি নির্বাচন হবে। কিন্তু নির্মম পরিহাস, সে নির্বাচন এখনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, জনগণের দাবি আদায়ে ঐকবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. কামাল বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া সবার সঙ্গে ঐক্য হবে। ঐক্য হবে নীতির ওপর ভিত্তি করে এবং সে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে মাধ্যম জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, এখন রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র নেই। তাই দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র আনতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলেও জনগণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, নির্বাচনকালে আইন সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য যদি সেনাবাহিনী প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই মোতায়েন করা দরকার। সেরকম অবস্থায় যেতেও পারে, নাও যেতে পারে। সেই অবস্থায় যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সেটা মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে অনেক বক্তৃতা রয়েছে। সেগুলো একসঙ্গে করে দিলে আমি একটি মেনিফেস্টো ছাপিয়ে বিলি করতাম। তার বক্তব্যে স্পষ্ট, কিভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়।
ড. কামাল হোসেন বলেন, যারা নির্বাচন পরিচালনা করে তারা যদি নিরপেক্ষ না হন, তাহলে জনগণ কিভাবে ভরসা করবে? বর্তমানে রাজনীতির যে পরিস্থিতি, তা চলতে থাকলে গত নির্বাচনের মতো একটি নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বিগত নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকারসহ সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা। একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে- এটাই আইনের শাসনের মূল কথা। এতে আরও বলা হয়, নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখা ও ২০০৫ সালে ১৪ দলের ২৩ দফা কর্মসূচিভিত্তিক গণআন্দোলনের বিজয়ের পর লক্ষ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের ঘাটতি ও দুর্বলতার কারণে জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি।
লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য আওম শফিক উল্লাহ। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘুষ ও দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। উপর থেকে নিচে সর্বত্র ঘুষ-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। জনগণ অতিষ্ঠ। সাধারণ মানুষ সুশাসন চায়। তিনি বলেন, মানুষ এখন তার ক্ষমতার মালিকানা ফেরত চায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জানে আলম প্রমুখ।