এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : তারেক রহমানের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ইস্যুতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের প্রকাশিত নথিতে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে নথিটিকে ‘রহস্যজনক’ বলছে দলটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি করেন। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের জন্য নয়, যুক্তরাজ্যে ‘সাময়িকভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়’ নিতে তারেক রহমান সে দেশের সরকারের কাছে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্রেফ জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তার দ্বারা কোনো আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এই ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা ও উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তৃতা ও বিবৃতিতে এটা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় যে, দেশে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এ অবস্থায় তিনি বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। এ প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন।
নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নথিতে থাকা ‘অসঙ্গতি’ তুলে ধরে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, নথির যেসব স্থানে ‘ভুল’ করা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এ ধরনের ভুল করা অস্বাভাবিক। নথির শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল লেখা হয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি’। কিন্তু হবে ‘হাইকমিশন অব বাংলাদেশ’। এত বড় করে টেলিফোন নম্বর ও ফ্যাক্স নম্বর দেয়া আছে, যেটা ‘আনকমন’ (অস্বাভাবিক)। ব্রিটিশ চিঠির মধ্যে এগুলো থাকে না। ‘ডিয়ার স্যার’ লেখার পরিবর্তে ‘ডিয়ার স্যারস’ লেখা আছে। চিঠির ওপরে চারটি পাসপোর্টের কথা বলা হলেও নিচের দিকে আবার একটি পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে। চিঠির শেষাংশে ‘ফেইথফুলি’র এফ বড় হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়েছে। ব্রিটিশরা এটা কখনই লিখবে না। যিনি সই করেছেন, তার কোনো নাম নেই। এসব বিবেচনায় চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে।
গত শনিবার লন্ডনে শাহরিয়ার আলম জানিয়েছিলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট ত্যাগ করেছেন। এর অর্থ তিনি নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। তার এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। শাহরিয়ারের বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে ইতিমধ্যে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বিএনপির এক আইনজীবী।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি’ উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, কী কী কারণে কেউ জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন, এটা যিনি জানেন না, তেমন একজন ব্যক্তির পক্ষেই ‘অনির্বাচিত সরকারের’ মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক। তিনি বলেন, দেশের জনগণ ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে যে, তাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডনে সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের তিনটি পাতা এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের, যা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে, সেই বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি ফটোকপি। এ চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে। কি বিচিত্র এই সরকার! কি দুর্বল তাদের অপকৌশল!
ফখরুল বলেন, আমাদের সংবিধানেও পরিষ্কার করে লেখা আছে যে, জন্মসূত্রে যারা বাংলাদেশের নাগরিক তাদের নাগরিকত্ব কোনো জটিল অবস্থা না হলে যায় না। পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব এক বিষয় নয়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের পাসপোর্ট নেই। তাই বলে কি এই মানুষরা বাংলাদেশের নাগরিক নয়?
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই, তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এ প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান নাগরিকত্ব ছেড়ে দেয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহে তিনি সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের আইনজীবী দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্যে যে অ্যাসাইলাম সিক (আশ্রয় চাওয়া) করেছেন, সেই অ্যাসাইলামে ব্রিটিশ আইনের ১৭ ধারায় উল্লেখ আছে যে, পাসপোর্ট অথবা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট কারও কাছে যাবে না। শুধু যিনি হোল্ডার তার কাছে যাবে। অন্য কোনো থার্ড পার্টির কাছে যাবে না। অতএব পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে দাবি করছেন, পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়া হয়েছে, এটা রহস্যজনক ও সন্দেহজনক। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী তারেক রহমানের পাসপোর্টটা বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাওয়ার কথা নয়।
বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, দেশের জনগণ এখন দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ও অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত। গুম-খুন-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। এ সময় অপরাজনীতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা হচ্ছে। এতে জনগণের ক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়বে।