এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের শীর্ষ বৈঠক আগামীকাল। দুই কোরিয়ার সীমান্তে বেসামরিক অঞ্চল পানমুনজুম গ্রামে বৈঠকের আয়োজনে চলছে জোর প্রস্তুতি। এরই মধ্যে কিমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠকের আগে দক্ষিণের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র সফরের জোর সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে গণমাধ্যমে। সবমিলিয়ে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার পাশাপাশি দুই কোরিয়ার একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে। এ নিয়ে চাপে রয়েছে চীন। তাদের আশঙ্কা, এতদিনকার ঘনিষ্ঠ মিত্র থেকে দূরে সরে গিয়ে দীর্ঘদিনের শত্রু দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন কিম। এমন হলে ভূরাজনৈতিক কৌশলের দিক দিয়েও বিশ্বে পিছিয়ে পড়তে পারে বেইজিং। দুই কোরিয়া একত্রিত হওয়ার পথ সুগম হলে এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বলতে গেলে চীনের সীমান্তের কাছে চলে আসার সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে।
বেইজিংয়ের গ্লোবাল পলিসি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিংওয়া কারনেগি সেন্টারের পরমাণু বিশেষজ্ঞ টং ঝাও বলেন, চীনের জন্য কৌশলগত চাপ তীব্র হয়ে উঠেছে। কারণ তাদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়াকে মেনে নেবে এবং নিজেদের মিত্র হিসেবে পিয়ংইয়ংকে বিশ্বমঞ্চে দাঁড় করিয়ে দেবে। অন্তত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের স্বীকৃতি দিয়ে দেবে। এমন হলে এতদিন উত্তর কোরিয়া ও এর শীর্ষ নেতা কিমের ওপর চীন যে ছড়ি ঘোরাত, তার সুযোগ অনেক সীমিত হয়ে যাবে। দুই কোরিয়া বন্ধুতে পরিণত হলে কোরিয়া অঞ্চলে চীনের প্রভাব খর্ব হবে এবং এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেইজিংয়ের বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়বে। এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চলছে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্যযুদ্ধ। সবমিলিয়েই চীনের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাপক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের আধিপত্যের লড়াইয়ে উত্তর কোরিয়া মাঝখানে একটা বাফারিং জোন হিসেবে কাজ করেছে। এবার যেন সেই জোনটিই হারাতে বসেছে চীন।
এদিকে দুই কোরিয়ার আগামী শুক্রবারের বৈঠককে সামনে রেখে দুই দেশের একত্রীকরণের ইস্যুটিও মাঠে হাওয়া পাচ্ছে। এটা অনেকটা গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের দুই জার্মানির একত্রীকরণের জেরে বার্লিন দেয়াল ভেঙে পড়ার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে পর্যবেক্ষকদের। গত শীতকালীন অলিম্পিকের সময় থেকেই দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রণালয় ও এর সমর্থকরা বেশ জোরেশোরে এ দাবি করে আসছে। তবে দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধের শেষ হলেও কোনো শান্তিচুক্তি হয়নি। সংঘর্ষ থামলে দুই দেশই মনে করে তারা যুদ্ধের মধ্যেই আছে। গত ৭০ বছরের এমন পরিস্থিতি যে এক হওয়ার পথে বিরাট বাধা তা নিয়েও তেমন সন্দেহ নেই দুই কোরিয়ার একত্রীকরণের সমর্থকদের। তবে আগামীকালের ঐতিহাসিক বৈঠকটি যে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বৈঠকে কী ঘটে, তার দিকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও রাশিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।