এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইরানকে এবার ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার পরিণতির ভয় দেখাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যদি বাড়াবাড়ি করে, কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয়ার চেষ্টা করে, তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে, যা এ যাবত হাতেগোনা কয়েকটি দেশই দিয়েছে। ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির এক হুশিয়ারির জবাবে তিনি এই হুমকি দেন। যুক্তরাষ্ট্র সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধার সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই হুমকি দেন ট্রাম্প।
তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিশ্বের ছয় ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে করা এই চুক্তিকে উদ্ভট ও ত্র“টিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের হুমকি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে হুশিয়ারি দিয়ে ইরান বলছে, চুক্তির অন্যান্য পক্ষ যতক্ষণ চুক্তি মেনে চলবে, তারাও তা মেনে চলবে। কিন্তু ওয়াশিংটন যদি চুক্তি থেকে বের হয়ে যায়, তেহরানও চুক্তি থেকে বের হয়ে যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুক্তিরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বের হয়ে গেলে ‘খুব দ্রুতই আবার পরমাণু কর্মসূচি করবে তেহরান’। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ‘কঠিন পরিণতি’ ভোগ করতে হবে সতর্ক করা হয়। এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, তেহরান যদি কোনো প্রকার পরমাণু কর্মসূচি পুনরায় শুরু করে, তবে ‘বড় ধরনের সমস্যা’র মুখে পড়বে তারা এবং এজন্য তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে।’ পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে ইউরোপ, রাশিয়ার কথা তোয়াক্কা করছে না যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও রাশিয়াসহ পরমাণু চুক্তির অন্য পক্ষগুলো ইরানের পক্ষে অবস্থান নিলেও চুক্তি থেকে বের হয়ে যেতে চায় ওয়াশিংটন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে করা এ চুক্তিকে ‘নিকৃষ্ট চুক্তি’ আখ্যা দিয়ে চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা। কিছুদিন আগেও চুক্তিতে অটল থাকার ব্যাপারে ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। ইউরোপ ও রাশিয়াসহ চুক্তির অন্য পক্ষগুলোর পরামর্শ সরিয়ে রেখে আগের চুক্তি সংস্কার করে নতুন চুক্তি চাচ্ছে ওয়াশিংটন ও প্যারিস।
ইরান পরমাণু চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলছে, চুক্তির সব শর্তই মেনে চলছে তেহরান। সুতরাং ইউরোপের স্বার্থেই এ চুক্তিকে অক্ষুণœ রাখতে হবে। চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়াও চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। চুক্তির ব্যাপারে পুরোপুরি ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে চুক্তির অন্যান্য পক্ষ চীন, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি। ফ্রান্স এতদিন চুক্তির পক্ষে থাকলেও সম্প্রতি সে অবস্থান থেকে সরে এসে নতুন চুক্তির কথা বলছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের নতুন চুক্তির আবদারের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাশিয়া বলেছে, বর্তমান ইরান পরমাণু চুক্তির কোনো বিকল্প নেই। রুশ প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনের প্রেস সচিব দিমিত্রি পেশকভ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা মনে করি, এ যাবত ইরান চুক্তির কোনো বিকল্প পাওয়া যায়নি। তাই সব পক্ষকেই এ চুক্তি মেনে চলতে হবে।’