এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রমজান এলেই একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। সিন্ডিকেট করে তারা রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এ কারণে ভোক্তারা বাড়তি খরচ করতে বাধ্য হন। কিন্তু এ বছর অসাধু ব্যবসায়ীদের সেই সুযোগ দিতে চায় না সরকার। বর্তমানে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো পণ্যেরই দাম বাড়েনি। রমজানজুড়ে পণ্যবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই আগেভাগেই মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ বাজার মনিটরিং সেল। সাত দিনের মধ্যে মাঠে নামবে মনিটরিং সেল।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, প্রতিবছর রমজান আসার এক সপ্তাহ আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন। তবে এবার রমজান আসার এক মাস আগে বৈঠক হয়েছে। এবার যাতে কোনোভাবেই পণ্যের দাম না বাড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। আর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত পণ্যের সরবরাহ ও মজুদ ভালো, তাই সিন্ডিকেট না হলে এবার পণ্যের দাম বাড়বে না।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, রমজানে যাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম না বাড়াতে পারেন, সেজন্য এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে বিশেষ মনিটরিং সেল কাজ শুরু করবে। এছাড়া ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে সারা দেশে অভিযান চালানো হবে। যারা অনৈতিক কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর্থিক জরিমানাসহ প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বছর দেশে রমজাননির্ভর পণ্যের জোগান চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তাই কোনোভাবেই এবার রমজানের আগে বা রমজানে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের আগেভাগে বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তাদের অভিমত, শুধু বাজার মনিটরিং করলেই দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও সজাগ থাকতে হবে। যাতে পণ্য আনানেয়ার সময় রাস্তায় ব্যবসায়ীদের কাছে কেউ চাঁদাবাজি করতে না পারে।
অধিদফতর সূত্র জানায়, রমজানে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে দেশের বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযানও চালানো হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে রাজধানীর পাইকারি বাজারে অভিযান শুরু হবে। রাজধানীর চকবাজার, বেইলি রোড, ধানমণ্ডিসহ সব অভিজাত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। যারা ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে বাড়তি মুনাফা আয়ের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিদফতর বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীতে প্রতিদিন দুটি অভিযান চালানো হবে। রমজানজুড়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারও অভিযান চালানো হবে। এছাড়া নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করলে বা খাবারে ভেজাল দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে পণ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, রমজান এলেই পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নামে নানা ধরনের অপতৎপরতা শুরু হয়। ইফতার পার্টির নামে চলে চাঁদাবাজি। এতে ব্যবসায়ীদের প্রচুর অর্থ খেসারত দিতে হয়। বাড়তি এ টাকা তুলতে গিয়ে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ কারণে তারা চাঁদাবাজি বন্ধ করার দাবি জানান।
জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রমজানে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে এবার দেশে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এরই মধ্যে পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারের দামের ব্যবধান কমতে শুরু করেছে। পণ্য খুচরা বাজারে আনতে ব্যবসায়ীরা যেন আবার চাঁদাবাজির শিকার না হন, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। আবার অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কারসাজি করে পণ্যের দাম না বৃদ্ধি করে, সেদিকেও সরকারকে নজর দিতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজারসহ বেশকটি খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রতি কেজি ছোলা ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চিনি ৫৮ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৪ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮৮ থেকে ৯০, বোতলীকরণ সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০৮ ও মশুর ডাল ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে পণ্যগুলো একই দামে বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের সিয়াম ট্রেডিংয়ের মো. হাবিব বলেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারে রমজাননির্ভর খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। এখন পর্যন্ত খুচরা ও পাইকারি বাজারে পণ্যের দামও স্থিতিশীল আছে। সরকারের কঠোর নির্দেশ থাকায় মনে হচ্ছে এবার রমজানে আমদানিকারক ও পাইকাররা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে পারবে না।