এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দেশে গত অর্থবছর (২০১৬-১৭) ফল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ টন। যদিও দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদায় এখনও ফলের ঘাটতি রয়ে গেছে। পুষ্টিবিদদের মতে, দৈনিক মাথাপিছু ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। তবে বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হচ্ছে মাঠ থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে এর আরও ৩৫-৪০ শতাংশ অপচয় ও বিনষ্ট হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতিতে ফল সংগ্রহ, অসতর্ক ও অযত্ন-অবহেলায় নাড়াচাড়া, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিবহনজনিত কারণে এ অপচয় হচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ফলের জোগান পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪৫-৫০ শতাংশ। উন্নত বীজ, সেচ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাঠ ফসলের উৎপাদন বেড়ে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও উদ্যান ফসলের উৎপাদন বিশেষ করে ফলের উৎপাদন এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছেনি।
দেশে এখন সারা বছরই বিভিন্ন জাতের ফল উৎপাদন হচ্ছে। দেশের আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এসব ফলের মধ্যে তরমুজ একটি বিশেষ অবস্থান ধরে রেখেছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০ ধরনের ফল উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে উৎপাদনের দিক দিয়ে তরমুজ সবচেয়ে এগিয়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত অর্থবছর সারা দেশে প্রায় ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ হেক্টর জমিতে ফলের আবাদ হয়। এর মধ্যে উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে তরমুজ। এ সময় ফলটির আবাদ হয় প্রায় ৪৫ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন ২১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৩৯ টন। অন্যান্য ফলের মধ্যে আম ১ লাখ ৭৪ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়, উৎপাদন ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৩ টন। কলা ৮৯ হাজার ৯০৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়, উৎপাদন ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৭ টন। ডিএইর বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক নুরল ইসলাম বলেন, বরিশাল অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে তরমুজের উৎপাদন অনেক বেশি হয়। তরমুজ মৌসুমি ফল হলেও কালো জাতের তরমুজ সারা বছরই পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নদীতে চর জেগে উঠায় সেখানে তরমুজ চাষ হয়েছে। যার কারণে এবার তরমুজের উৎপাদন বেশি হয়েছে। এছাড়া গত বছর ভোলা, রাঙাবালী, পটুয়াখালীতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আকর্ষণীয় রঙ এবং রসালো মিষ্টি স্বাদের তরমুজে খুব সামান্য ক্যালরি আছে। ফলটি খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। তরমুজের ৯২ শতাংশই পানি। শরীরে পানির অভাব পূরণে ফলের মধ্যে তরমুজই হল আদর্শ ফল। গ্রীষ্মের খরতাপে সতেজ থাকতে ফলটির ভূমিকা অতুলনীয়। এছাড়া তরমুজে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও আঁশ। মৌসুমি এ ফলটির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তরমুজ হল ভিটামিন ‘বি৬’-এর চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, দেশে তরমুজ উৎপাদনের শীর্ষে বরিশাল অঞ্চল। বরিশালে ৩৫ হাজার ৩২৮ হেক্টর জমিতে ফলটির চাষ করা হয়, উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ২১ হাজার ৯৩১ টন। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়, উৎপাদন হয়েছে ৮৩ হাজার ৭৪৬ টন। এদিকে আমের উৎপাদনে শীর্ষে রাজশাহী অঞ্চল। এ অঞ্চলে ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ফলটির আবাদ হয়, উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৭৯৯ টন। এর পরেই আছে ঢাকা অঞ্চল। ঢাকা এবং এর আশপাশ জেলায় ২১ হাজার ৯৬৬ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭২৩ টন। কলা উৎপাদনে শীর্ষে রাঙ্গামাটি অঞ্চল। এ অঞ্চলে ২৪ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে ফলটির আবাদ হয়, উৎপাদন ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪১৫ টন। এর পরেই যশোর অঞ্চল। এ অঞ্চলে ১৩ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়। উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫১৭ টন। কলার পরে রয়েছে কাঁঠাল। গত অর্থবছরে ৭৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল আবাদ হয়, উৎপাদন হয় ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৯ টন। পঞ্চম স্থানে রয়েছে নারিকেল। ৪৬ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯১ টন নারিকেল উৎপাদন হয়। এর পরেই আছে পেঁপে। ২৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ফলটির চাষ হয়, উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার ১৭৯ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ফলের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডিএই দেশি ফলের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পুষ্টিগুণ, বীজ ও চারার সহজলভ্যতা বিবেচনায় ১০টি বিদেশি ফল চাষকে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছে।