এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন তিনি। তবুও কোথায় যেন শূন্যতা। একই ছাদ একই বাড়ি, কিন্তু থাকেন আলাদা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে যেন কোনো প্রাণ নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (৭১) ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়া (৪৮) দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা। একজন রঙ্গমঞ্চ থেকে উঠে এসেছেন হোয়াইট হাউসে, অন্যজন ব্যবসায়িক লেনদেন ছেড়ে হয়েছেন ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট। ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি ৫৯ বছর বয়সী ট্রাম্পকে বিয়ে করেন স্লোভেনীয় বংশোদ্ভূত ৩৬ বছর বয়সী মেলানিয়া। ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়া। দু’জনের মধ্যে বয়সের ব্যবধানও অনেক। নাম-যশ-বিলাসিতার মোহে পড়ে ২৩ বছরের বড় ট্রাম্পের ‘ফালতু বিয়ের’ খপ্পরে পড়ে এখন মাশুল গুনতে হচ্ছে মেলানিয়াকে। ফার্স্টলেডির জৌলুস ছাড়াই হোয়াইট হাউসে একাকিত্ব জীবনযাপন করছেন তিনি। চেহারায় আনন্দ নেই, সারাক্ষণই মনমরা ভাব। কেমন যেন ফ্যাকাশে জীবন হয়ে গেছে একসময়ের হাজার পুরুষের ঘুম কেড়ে নেয়া এই মডেলর। মেলানিয়ার হোয়াইট হাউসের সাম্প্রতিক দিনকাল নিয়ে গণমাধ্যমের বেশ কিছু তথ্যে চাঞ্চল্যকর এ খবর উঠে এসেছে। দু’জনের লাগাম ছাড়া বেমানান বয়স রুচি এবং ট্রাম্পের চারিত্রিক দুর্বলতাই দিনে দিনে মেলানিয়াকে দূরে নিয়ে গেছে বলে ব্যাখ্যা করছেন মনোবিশেষজ্ঞরা।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌনতার অভিযোগ এনেছেন সাবেক পর্নো তারকা ডেনিয়েলস স্টর্মিসহ বেশ কয়েকজন নারী। তখন থেকেই সবার মধ্যে কৌতূহল ছিল যে, স্বামী ট্রাম্পের সঙ্গে কেমন যাচ্ছে স্ত্রী মেলানিয়ার সম্পর্ক। মেলানিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দ্য গার্ডিয়ানকে জানায়, ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাতে আলাদা ঘরে ঘুমান। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ট্রাম্পের ঘুম ভাঙলেও মেলানিয়া রাতে কখন ঘুমান তা কেউ জানে না। ঘুম থেকে ওঠেনও দেরিতে। ট্রাম্পের দিকে মনোযোগ দেয়ার বদলে ছেলে ব্যারনকে স্কুলের জন্য তৈরি করতেই সময় ব্যয় করেন মেলানিয়া। ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে একসঙ্গে খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। এমনকি দু’জনের অবসরেও তাদের একসঙ্গে দেখা যায় না। গত দেড় বছর ধরে পারতপক্ষে স্বামীর ছায়া মাড়াননি মেলানিয়া। ট্রাম্পের চিন্তা ছেড়ে নিজের পারিবারিক রুটিনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন মেলানিয়া। নিজের আলাদা পরিচয় গড়ে তুলতেই বেশি মনোযোগী মেলানিয়া। সম্প্র্রতি বিভিন্ন কর্মসূচিতে একাই যাচ্ছেন তিনি। সাবেক ফার্স্টলেডি বারবারা বুশের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় একাই উপস্থিত ছিলেন মেলানিয়া। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় সফরে বিমানে ওঠানামার সময় দু’জনের রীতিবহির্ভূত গা-ছাড়াভাবও গণমাধ্যমের চোখ এড়ায়নি। এ যেন অনেকটা ট্রাম্পের বলয় থেকে বের হয়ে আসার মতো।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাবেক উপদেষ্টা বিল গালসটন বলেন, ‘পুরো দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে এক ‘বাজে বিয়ের’ বন্ধনে আবদ্ধ। তার ছায়া থেকে কেউ বের হতে পারছেন না। তাহলে তিনি (মেলানিয়া) কিভাবে বের হবেন?’ সম্প্রতি মেলানিয়ার বয়স ৪৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। তার জন্মদিন উপলক্ষে ফক্স নিউজের এক টেলিফোন সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প। সেখানে মেলানিয়াকে কি উপহার দিয়েছেন, প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘সম্ভবত আমি তাকে বড় কিছু দিতে পারিনি। আমি তাকে একটি সুন্দর কার্ড উপহার দিয়েছি। আপনারা জানেন, আমি খুবই ব্যস্ত।’
নিউইয়র্ক থেকে হোয়াইট হাউসে এসেছেন পাঁচ মাস পর, যেটা আমেরিকার আধুনিক ইতিহাসে কোনো ফার্স্টলেডির ক্ষেত্রে এমনটা শোনা যায়নি। হোয়াইট হাউসে মেলানিয়া এক ধরনের অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করছেন। হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ে নিজের অফিসের সংস্কার করিয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট উইংয়ে খুব একটা যান না। এই অংশেই থাকেন ট্রাম্প ও ট্রাম্পের আগের ঘরের মেয়ে ইভাঙ্কা। তার সঙ্গেও মেলানিয়ার সাপে-নেউলে সম্পর্ক। ফার্স্টলেডি হওয়া সত্ত্বেও পারিবারিক-রাজনৈতিক আধিপত্যে সব কর্তৃত্ব ইভাঙ্কার।
তবে ট্রাম্প ও মেলানিয়ার সম্পর্ক নিয়ে ভিন্ন কথা বলছেন মেলানিয়ার মুখপাত্র স্টিফেনি গ্রিসাম। তিনি বলেন, সবসময়ই তার (মেলানিয়া) মনোযোগ ছিল শিশুরা। শিশুরা রোজ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন তা নিয়ে মেলানিয়া কাজ করবেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মেলানিয়ার ‘ঠাণ্ডা’ সম্পর্কের বিষয়ে গ্রিসাম বলেন, ‘সরকারি সফর ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে তারা সময় দেন একে-অপরকে। তিনি একজন মা হওয়ার চেষ্টা করছেন। একজন স্ত্রী ও ফার্স্টলেডি হিসেবে তার দায়িত্বের ব্যাপারেও সচেতন। এর বাইরে যা শোনা যাচ্ছে তা গুজব।