এশিয়ান বাংলা, ফরিদপুর : শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলি এলাকার ফ্ল্যাটবাসা থেকে ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের এক অধ্যাপিকা ও সোনালী ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার গভীর রাতে শিক্ষিকার রক্তাক্ত এবং ব্যাংক কর্মকর্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষিকার স্বামী ঢাকার মোটর পার্টস ব্যবসায়ী শেখ শহিদুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তা একই বাড়ির পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তবে দু’জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হাসানের ফ্ল্যাট থেকে। শিক্ষিকা সাজিয়া বেগম (৩৮) দুই সন্তান নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকলেও ওই সময় কী কারণে ফারুকের ফ্ল্যাটে যান তা জানা যায়নি। শিক্ষিকার স্বামী ঢাকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে তিনি ফরিদপুরে যেতেন। গত দু’দিন আগে তিনি ফরিদপুরেই ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শিক্ষিকা সাজিয়া ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি দুই ছেলে নিয়ে এক বছর ধরে ওই বাসার আছেন। তাদের বাড়ি রাজধানীর সূত্রাপুরের বানিয়া নগরে। নিহত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম ফারুক হাসান (৩২)। ফরিদপুর সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখার অডিট কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি ঢাকার মতিঝিল শাখায় কর্মরত বলে জানা গেছে। ১ মাস আগে ফরিদপুরে বদলি হয়ে আসার কথা বলে তিনি ওই বাসাটি ভাড়া নেন এবং দু’দিন আগে তিনি প্রথম বাসায় ওঠেন। জোড়া খুন নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ বলছে, অধ্যাপিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। পুলিশ খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাড়ির মালিক নজরুল ইসলামের ছেলে ডেভিড হাসান জানান, নিহত কলেজ শিক্ষিকা ১ বছর আগে বাসা ভাড়া নিলেও স্বামী থাকতেন ঢাকায়। মাঝে মধ্যে আসতেন। তিনি তার দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। ঘটনার দিন তার স্বামী ফরিদপুরের বাসাতেই ছিলেন। ব্যাংক কর্মকর্তা পাশের ফ্ল্যাট ভাড়া নিলেও দু’দিন আগে বাসায় উঠেন। ডেভিড জানান, রাতে রাজেন্দ্র কলেজে কনসার্ট দেখছিলাম। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে বাসায় ফিরি। গেট খুলে দেখতে পাই নিচ তলার রুমের দরজা কিছুটা চাপানো। ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। দেখি ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ঝুলছে। সঙ্গে সঙ্গে কোতোয়ালি থানাকে জানাই।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এএফএম নাসিম বলেন, শিক্ষিকার লাশ দরজার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় এবং ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তার বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ফ্ল্যাট থেকে রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছি। এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না। দু’জনকেই হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাকিটা তদন্ত এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। তার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত শিক্ষিকার স্বামী শহিদুল ইসলামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সব কিছু এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।
নিহত অধ্যাপিকা সাজিয়ার স্বামী শেখ মো. শহিদুল ইসলাম ও ফুফু আফসারী আহমেদ জানান, অন্য দিনের মতো রোববার সাজিয়া বেগম কলেজে যান। বিকাল ৪টায় শহিদুলের সঙ্গে ফোনে সাজিয়ার কথা হয়। ওই সময় সাজিয়া বাসায় ফিরছেন বলে জানান। এরপর থেকেই সাজিয়ার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে শহিদুল কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষকে সাজিয়ার বাসায় না ফেরার কথা জানান। পরে কলেজ থেকে বিষয়টি থানাকে অবহিত করা হয়।
সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর প্রিন্সিপাল শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শামসুল হকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন ফারুক হোসেন সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুরে কর্মরত ছিলেন না। ফারুক হাসানের ছবি দেখে ও যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তিনি সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে লিগ্যাল ম্যাটারস ডিভিশনে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ জানান, একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার আজকের (সোমবার) সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। যারাই সাজিয়াকে হত্যা করেছে তাদের আইনেই আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। প্রতিবেশী জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, নিচ তলায় সানজিদা ম্যাডাম থাকতেন বলে শুনেছি। দেখা হয়নি। বেশিরভাগ সময় রুম বন্ধ থাকত।