ফারজানা রুপা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাবেক সক্রিয় কর্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে অতি মেধাবী হওয়ার কারনে ক্লাশ করার চেয়ে বেশি সময় দিতেন সংগঠনের দলীয় কর্মসূচিতে। পাশাপাশি দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে লেখালিখি করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন দৈনিক মুক্তকন্ঠে। বেক্সিমকো গ্রুপের ওই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। সাংবাদিকতা করার সময় নিজের রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রের জন্য এতটাই সময় দিতেন যে প্রায়ই ক্লাশ করতে পারতেন না। বিভাগের সহপাঠীদের সহায়তায় ইনকোর্স পরীক্ষায় ( ফাইনাল পরীক্ষার আগে দুই মাস অন্তর ৩টি পরীক্ষা) অংশ নিলেও ২য় বর্ষে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। একারনে সহপাঠীরা সবাই ৩য় বর্ষে উত্তীর্ন হলেও উত্তীর্ন হতে পারেননি রুপা। ফলস্বরুপ শিক্ষা জীবন থেকে একটি বছর ঝরে যায় রুপার। সাংবাদিকতায় নেশা ও পেশার কারনে পরের বছর আবার একই ফল। নিয়মিত ক্লাশ না করার কারনে এবারও ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে পারলেন না রুপা। এরই মধ্যে রুপার বিভাগ আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে উন্নয়ন কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাৎসরিক ৫০০ টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। বিভাগ উন্নয়ন নামে কয়েক লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করা হচ্ছে এই মর্মে, পত্রিকায় খবর প্রকাশ করলে রুপার সাথে তার বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষকদের বৈরী সম্পর্ক তৈরী হয়। পর পর দুই বছর পরীক্ষায় উত্তীর্ন না হওয়ায় নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। আর পরবর্তীতে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় তার কপালে জোটেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট। কিন্তু চেষ্টা করলে রুপা ভিসি স্যারের বিশেষ ক্ষমতাবলে তৃতীয় বছর পুনরায় ভর্তি হতে পারতেন। যেমন পেরেছিল তারই সহপাঠী মিজানুর রহমান। মিজান একটি ছাত্র সংগঠনে সক্রিয় কাজ করার কারনে পর পর দুই বার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। কিন্তু তার সংগঠনের ছাত্রনেতারা ভিসি স্যারের কাছে অনুরোধ করে শেষবারের মতো মিজানের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়ার। ভিসি স্যার তার বিশেষ ক্ষমতাবলে মিজানের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয় ঠিকই তবে একটি শর্তে। মিজান আর কখনো ছাত্র রাজনীতি করতে পারবে না এমনটাই প্রতিশ্রুতি দেয় ছাত্রনেতারা ভিসি স্যারের কাছে। আর মিজান তার সংগঠনের ছাত্রনেতাদের কাছে মুচলেকা দেয় সে আর কখনো ছাত্র রাজনীতি করবে না। রুপাও একই ভাবে ভিসি স্যারের কাছে বিশেষ প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নিজ বিভাগের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার কারনে চেয়ারম্যানসহ শিক্ষকদের সহায়তা পায়নি রুপা। আর এ কারনে তৃতীয়বারের মতো ভর্তি হতে না পেরে আজীবনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল হয় রুপার।
নিজের শিক্ষা জীবন বিসর্জন দিয়ে পুরোদমে সাংবাদিকতায় আত্ননিয়োগ করে রুপা। কারন রুপা জানে তার শিক্ষাগত সার্টিফিকেট না থাকায় অন্য কোথাও চাকরী করতে পারবে না সে। পত্রিকায় কাজ করার সময় তার রাজনৈতিক মতাদর্শের সাংবাদিক মুন্নি সাহা এবং জ ই মামুন এটিএন বাংলা নিয়ন্ত্রন করতো। তাদেরই সহায়তায় এটিএন বাংলায় যোগ দেন রুপা। এটিএন বাংলায় কাজ করার সময় যত রিপোর্ট করেছে তার বেশির ভাগই ছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে টার্গেট করে এসব সংগঠনের নেতিবাচক সংবাদ।
এবার আসি সম্প্রতি লন্ডনে এসে বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সাথে আইএস এর সম্পৃক্ত করে ফারজানা রুপার সমীকরন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে। ৭১ টিভির সমীকরনে ফারজানা রুপা দর্শকদের বুঝাতে চেয়েছেন একসময় ব্রিটিশরা যখন বাংলার জনগনকে শাসন করতো তখন সেখানে ছিল না কোন সংগঠন, ছিল না মানবাধিকার। সংগঠন না থাকায় ব্রিটিশ ফিরিঙ্গিদের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতো না বাংলার নিপীড়িত জনগন। আর এখন এই ব্রিটেনে মানবাধিকার রক্ষার নামে অপরাধীদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। সমীকরনে রুপা বিএনপি‘র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র নেতৃবৃন্দ এবং ব্রিটেনে অবস্থানরত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতৃবৃন্দকে জঙ্গিবাদে যুক্ত করতে চেষ্টা করেছেন। একপেশে ওই রিপোর্টে রুপা একচেটিয়াভাবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের জঙ্গি আখ্যায়িত করে গিয়েছেন। ‘মেধাবী’ ওই সাংবাদিকের একবারও কি মনে হলো না যাদের নামে প্রতিবেদন বানানো হচ্ছে তাদের বক্তব্য নিতে হবে ? বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা যদি সত্যিই জঙ্গিবাদে জড়িত থাকে তবে ব্রিটেন সরকার তাদের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছে, এ নিয়ে ব্রিটেনের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মন্তব্য নেয়া কি সাংবাদিকতার নীতিমালায় পড়ে না? প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী সরকারের পক্ষে সরাসরি কাজ করতে গিয়ে রুপা সাংবাদিকতার নীতিমালার ও ন্যায় – অন্যায়ের কোন তোয়াক্কা করেনি। আর এ কারনেই কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে হাইলাইট করে বিশে^র অন্যতম নিরাপদ শহর লন্ডনকে ভয়ংকর ও অনিরাপদ শহর হিসেবে তুলে ধরে রুপা দর্শকদের ভুল পথে পরিচালিত করতে চেষ্টা করছেন। রুপা মনে হয় জানেনা বিশ্বের ২০টি সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে তালিকায় লন্ডনের অবস্থান ৭ম। আর এই তালিকা করা হয়েছে শহরগুলোতে মানুষের নিরাপদে চলাফেরা , শহরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারনে ওই শহরে মানুষের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় চলাচল এবং শহরের উৎপাদন ক্ষমতা। রুপা কি বাংলাদেশের মানুষদের একটু কষ্ট করে জানাবেন এসব ক্ষেত্রে ঢাকা শহরের অবস্থান কত ? রুপা যে সরকারকে সমর্থন করেন সেই সরকার ঢাকা শহরকে মানুষের বাসের জন্য কি পদক্ষেপ নিয়েছে ? আইন শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ঢাকা কতটা নিরাপদ তার বাসিন্দাদের জন্য।
প্রতিবেদনের শুরুতে রুপা গোজাঁমিলের সমীকরণ মিলানোর জন্য দর্শকদের সূত্র দেন। সেখানো দেখানো ও বলা হয় , ‘‘ সূত্র নাম্বার -১ ঃ লন্ডন কি মানবাধিকার রক্ষার নামে সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য হয়ে উঠেছে ? লন্ডনেই কেন বাংলাদেশ বিরোধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধী , জঙ্গিবাদের উত্থান যাদের হাত ধরে , যারা নানান রকম দুর্নীতির সাথে যুক্ত তাদের আশ্রয় মেলে ? এই আশ্রয়ের পেছনের সমীকরন কি ? রুপা আরো জানায় , সূত্র বলে যাদের হাত ধরে নীল কর , নীলের ব্যবসা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে জর্জড়িত করেছিল মানবাধিকারের আচ্ছাদনে, অপরাধীদের আশ্রয়ের এক ভয়ংকর অবস্থান হয় এই লন্ডনে। ছাড় পাচ্ছে নাকি অপরাধীরাও। এই লন্ডন থেকেই নাকি প্রায় হাজার খানিক তরুন আইএসে যোগ দিয়ে গিয়েছে সিরিয়ার রাকায়। এখনো লন্ডনের রাস্তায় প্রতি মুহুর্ত ছিনতাই রাহাজানির ঘটনার ঘটছে। যার সাথে নাকি যুক্ত আছে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে যুক্ত মানুষেরা। সূত্র বলছে যে জামাত শিবিরের নেতারা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রগ কাটতেন তারা লন্ডনে বসে চ্যারিটির নামে প্রতি রাতে মিলিয়ন পাউন্ডের চাঁদা তুলেন ইউরোপের মানুষের কাছ থেকে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষকে সাহায্যের নামে। সূত্র আরো বলছে এই যে পাসপোর্ট নামা তাদের সাথেই নাকি যুক্ত এইসব মৌলবাদী চক্র। রাজনীতির নামে এখানে নাকি গড়ে উঠছে অপরাধী চক্র। আসলেই কি তাই এবারে মিলাবো সেই সমীকরণ। ’’
দর্শক ও পাঠকরা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, সমীকরনের সূত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে রুপা প্রায় প্রতিটি বাক্যে ‘ নাকি’ শব্দ ব্যবহার করেছে। তার মানে সহজেই বুঝা যাচ্ছে রুপা নিজেও ওইসব তথ্যের ক্ষেত্রে নিশ্চিত নয়। আর তথ্যের বিষয়ে যদি নিশ্চিত না ই হয় , তাহলে তো উনার ব্রিটেনের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মানুষদের সাক্ষাৎকার নেয়ার দরকার ছিলো। তা না করে প্রতিবেদনে রুপা ৪ টি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করে একটিকে আরেকটির সাথে মিলের চেষ্টা করেছে। ঘটনাগুলোর প্রথমটি হচ্ছে ২০১১ সালের আগস্ট মাসে সংগঠিত লন্ডনের টোটেনহামের দাঙ্গা , দ্বিতীয়টি হচ্ছে এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারী সংগঠিত লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র বিক্ষোভ চলাকালে হাই কমিশনের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে বিএনপি’র কয়েকজন কর্মীর হাতাহাতি ও সামান্য ভাংচুর। সামান্য এ ঘটনাকে লন্ডনের দাঙ্গা ও বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তৃতীয়টি হচ্ছে , গত বছরের ৪ জুন সংগঠিত লন্ডনের বারা নামক মার্কেটের ফুটপাথে চলন্ত গাড়ি তুলে দেয় সন্ত্রাসীরা। এতে নিহত ৭, দায় স্বীকার করে আইএস। আর চতুর্থ ঘটনা হচ্ছে, এ বছরের ২১ এপ্রিল শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ অধিবেশনে যোগ দিতে লন্ডনে এলে তার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র টানা ৬ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি। এ ক্ষেত্রেও দর্শক ও পাঠকরা একটু খেয়াল করলে সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন চারটি ঘটনার দু’ টি লন্ডনের সন্ত্রাসী ঘটনা যার সাথে কোন বাংলাদেশী ও এশিয়ান জড়িত ছিল না এবং অন্য দু’ টির একটি লন্ডনে শেখ হাসিনার সফরের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র বিক্ষোভ ও খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের প্রতিবাদে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বিএনপি’র বিক্ষোভ। চারটি ঘটনাকে একটির সাথে আরেকটিকে জড়িয়ে রুপা দর্শক ও পাঠকদের বুঝাতে চেয়েছেন লন্ডনের যতো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে তার অধিকাংশের সাথে ব্এিনপি জড়িত। সংবাদিকতার নীতিমালা উপেক্ষা করে এখানেও রুপা যুক্তরাজ্য বিএনপি ও এর কোন নেতৃস্থানীয় নেতার বক্তব্য নেননি। এ থেকে বুঝা যায় একপেশে নিউজ করে রুপা মূলত আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীর ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রতিবেদনে রুপা দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেছে , শেখ হাসিনার সফরের প্রতিবাদে লন্ডনের রাস্তায় যুক্তরাজ্য বিএনপি ভ্যানের বিল বোর্ড শহরে প্রদক্ষিন করিয়েছে। যা ব্যয়বহুল। দর্শকদের বুঝাতে চেয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি অবৈধ উপায়ে ওই অর্থ অর্জন করেছে। এক্ষেত্রেও সবার মনে রাখা দরকার , রুপা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের বক্তব্য নিলেই উঠে আসতো তারা যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে তাদের অর্থ উপার্জন করেছে। কিন্তু তা না করে রুপা তার কথা ও প্রতিবেদনে কিছু ভিডিও দিয়ে দর্শকদের বুঝাতে চেয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি যা করেছে সব অন্যায়। প্রকৃতপক্ষে রুপা প্রতিবেদনে যা প্রচার করেছে তার সবই মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
বাংলাদেশে যেমন বিএনপি ও ইসলামপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে সমালোচিত ফারজানা রুপা। তেমনি এবার দেশের বাইরে গিয়েও আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারনা চালিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট ছিল ফারজানা রুপা। গত ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কমনওয়েলথ সম্মেলনের নিউজ কভার করতে লন্ডন গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তারেক জিয়া , বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নামে মিথ্যা ও ভূয়া প্রতিবেদন তৈরী করে। প্রতিবেদনটি দেখলে যে কোন রাজনৈতিক সচেতন ও বিবেকবান বাংলাদেশী বুঝতে পারবেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে জাতির কাছে হেয় করতে কতটা নির্লজ্জ ভাবে সেটি তৈরী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে রুপা যেসব শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেছে তাতে মনে হয়েছে কোন আওয়ামী বা সরকার সমর্থক রাজনৈতিক দলের কর্মী তারেক জিয়া, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নামে প্রচারনা চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনের দেখা যায় রুপা বলছে , যাকে নিয়ে এতো আলোচনা তিনি থাকেন লন্ডন। লন্ডন এমন কি দেশ যেখানে কোন নথি পাওয়া সম্ভব নয় ? যেখানে নাগরিকত্বের প্রমান মিলতে পারে। আমাদের তো হরহামেশাই লিখতে হয় জাতীয়তা ঃ বাংলাদেশী। তাহলে কি লন্ডনের সেসব জায়গায় প্রবেশের একেবারেই সুযোগ নেই ? অসম্ভব নাকি ? এসব বলার পরই রুপা গাড়ি দিয়ে লন্ডনের রাস্তায় চলাচলের ভিডিও প্রচার করে। যেখানে দেখানো হয় তথ্য উদঘাটনে তারেক জিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে রুপা ও ৭১ টিভি’র দল। এসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে বলা হয় – রাজা রানীর দেশে আপনার আভিজাত্যের কমতি নেই। নামের পাশে লিখেছেন বিএনপি নেতা । ওহো কি বললাম , নামের পাশে বিএনপি নেতা। তবে তো সে নথির খোজেঁও করতে হয়। প্রথম সূত্র ইন্টারনেট। তারেক জিয়ার বাড়ির ছবি দেখিয়ে রুপা দর্শকদের তথ্য দেয় এটা কিংসটনে অবস্থিত এমন বাড়ি যেখানে তিনি বাসস্থান ছাড়াও হোটেল , রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে ওই বাড়ি। যা সর্বই মিথ্যা। মূলত তারেক জিয়া ওই বাড়ি ব্যবহার করে তার পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য। আর আত্নীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধব তার বাসায় দেখা করতে গেলে, ওই বাড়িকে ৭১ টিভি’র প্রতিবেদক যদি তা পার্টি সেন্টার হিসেবে প্রচার করে তবে তার বিচারের দায়িত্ব বাংলাদেশের সচেতন দর্শক ও পাঠকদের।
এবার আসি লন্ডনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে আরো কি কি মিথ্যা ও অসঙ্গতির আশ্রয় নিয়েছেন রুপা। তারেক রহমানের বাড়ির সন্ধান করতে গিয়ে রুপা খোঁজ পান তিনি নাকি হোয়াইট এন্ড ব্লূ কোম্পানীর পরিচালক। আর ওই পরিচালক হতে তিনি নাকি কাগজ পত্রে উল্লেখ করেছেন জাতীয়তা হিসেবে ব্রিটিশ নাগরিকত্বের কথা। ভাল কথা , সে প্রসঙ্গ শেষ না হতেই রুপা চলে যায় – ব্রিটেনে কেউ চাইলেই নিজের নামে গাড়ির নাম্বার প্লেট পেতে পারে সে প্রসঙ্গে। রুপা প্রতিবদেনে উল্লেখ করেন , বাংলাদেশে যেমন বাড়ির নাম হতে পারে- মায়ের দোয়া। কিন্তু এই নামের জন্য কোন টাকা দিতে হয় না সরকারকে। তবে ব্রিটেনে নিজের নামে গাড়ির নাম্বার প্লেট নিতে চাইলে সরকারকে দিতে হয় ৭ হাজার পাউন্ড , যা বাংলাদেশী টাকায় ৭ লাখ টাকা। আর ‘ বিএনপি ’ নামেই রয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি। মোটা অংকের টাকা।
ফারজানা রুপাকে তো অনেকেই মেধাবী সাংবাদিক হিসেবেই মনে করে। প্রকৃত পক্ষে তিনি কি মেধাবী নাকি মিথ্যাবাদী সাংবাদিক ? দুই আর দুই এ যেমন চার হয় , তেমন সমীকরনে তো বলা যায় রুপা একজন মিথ্যাবাদী ও আওয়ামী- বামপন্থী সাংবাদিক। সাংবাদিকদের কোন রাজনৈতিক দলকে প্রকাশ্যে সমর্থন করা ন্যায় সঙ্গত না হলেও রুপার বেলায় ‘ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ’ তা ন্যায় সঙ্গত বলে ধরে নেয়া হয়। আবার সাংবাদিক হিসেবে সব দলের নেতাকর্মীদের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকার কথা থাকলেও লন্ডনে এসে তাকে দেখা যায় শুধুমাত্র আওয়ামী ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের সাথে তার সারাক্ষণ উঠাবসা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় , যার নুন খায় তার তো গুন গাইতে হবে। তবে দেশের একটি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে একটু বিবেক থাকা দরকার বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা। প্রতিবেদনে রুপা উল্লেখ করেন, বিএনপি নামে কয়েকটি গাড়ি আছে ব্রিটেনে যাদের অধিকাংশই লন্ডনে। গাড়ির নাম্বার প্লেট নিতে যদি সত্যিই ৭ হাজার পাউন্ড খরচ হয় তবে তো তা বাংলাদেশী টাকায় ৮ লাখ ৫ হাজার টাকার সম পর্যায়ে হওয়ার কথা। কিন্তু রুপা উল্লেখ করেন , ৭ হাজার পাউন্ড হচ্ছে বাংলাদেশী টাকায় ৭ লাখ টাকা। এখানেও যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। শুধু তাই নয় , এই তথ্য প্রচারের সময় রুপা উল্লেখ করেন ৭ হাজার পাউন্ড , মোটা অংকের টাকা। কিন্তু তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সিদ্দিক নাজমূলের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে কিছু জাতিকে জানাতে চান না। একজন সাবেক ছাত্র নেতা কিভাবে ব্রিটেনে বিজনেস ভিসায় থাকতে পারে, তা বাংলাদেশের অনেকেই চিন্তা না করতে পারলেও ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা সহজেই জানে অবৈধ উপায়ে অর্জন ছাড়া এটা সম্ভব নয়। এটা সবাই জানে ব্রিটেনে বিজনেস ভিসায় আবেদন করতে দুই শত হাজার পাউন্ড বিনিয়োগ দেখাতে হয়। যা বাংলাদেশী টাকায় পৌনে তিন কোটি টাকা। এত টাকা কোথায় পেলো নাজমূল তা তো জাতিকে জানাবেনই না রুপা বরং বিবেক বর্জিত হিসেবে নাজমূলের সাথে ছবি তোলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। সমীকরনে আমরা কি বলতে পারি না রুপা বাংলাদেশের মানুষদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন ?
এছাড়া ৭১ টিভি’র ওই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় রুপাকে টেলিভিশনের একজন সিনিয়র প্রতিবদকের চেয়ে বিএনপি ও জামায়াত বিরোধী আওয়ামী কর্মী বলেই মনে হয়েছে। তার প্রতিবেদনের শব্দ প্রয়োগে মনে হয়েছে তারেক জিয়া ব্রিটেনে থাকায় হিংসা হচ্ছে রুপার। শেখ হাসিনা যেমন তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত নিতে না পেরে তার নামে উল্টা পাল্টা বক্তব্য দেয়। ৭১ টিভি’র ওই প্রতিবেদন দেখলে বুঝা যায়, ফারজানা রুপাও তারেক জিয়ার এদেশে অবস্থান করাকে সহ্য করতে পারছে না ।
প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে বলা হয় , ‘‘ রাজা রাজ্যের জীবন যাপনে আপনার আভিজাত্যের কমতি নেই। নামের পাশে লিখেছেন বিএনপি নেতা । ও হো কি বললাম , নামের পাশে বিএনপি নেতা।’’ একজন টিভি প্রতিবেদক তার অপছন্দের কোন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করতে পারেন। তবে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় ওই রাজনৈতিক নেতার পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে ‘ ও হো কি বললাম , নামের পাশে বিএনপি নেতা। ’ এমন বাক্য ব্যবহার করলে কারো বুঝতে বাকী থাকে না ওই রাজনৈতিক নেতাকে তিনি কিভাবে সম্বোধন করছেন। আর কিভাবে তিনি ওই রাজনৈতিক নেতাকে জাতির সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, তারেক জিয়ার বাসস্থান নিয়ে তথ্য প্রচারের পরই হঠাৎ করে রুপা চলে যান ‘ বাঙ্গালী মুসলিম ’ পাড়ার রিপোর্ট করতে। সেখানে তিনি পূর্ব লন্ডনের মারিয়ম সেন্টারকে উল্লেখ করেন মরিয়ম টাওয়ার নামে। এতেই বুঝা যায় ইস্ট লন্ডন মসজিদে না যেয়ে, ওই প্রতিষ্ঠানের কারো সাথে কথা না বলে ডেস্কে বসেই প্রতিবেদন তৈরী করেছেন রুপা। আর ওই প্রতিবেদনের মূল টার্গেট ইস্ট লন্ডন মসজিদের সাবেক দুই জন চেয়ারম্যান চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আব্দুল বারী। তাদেরকে আইএসের সাথে জড়িয়ে প্রতিবেদন করলেই যেনো কেল্লা ফতে। ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মনোভাব জামায়াত বিরোধী করা যাবে আর তারা আওয়ামী পন্থী হয়ে যাবে। ইস্ট লন্ডন মসজিদ প্রতিবছর হাজার হাজার পাউন্ড চ্যারিটি আপীলের মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকে, পত্রিকা ও টিভিতে প্রচারের কারনে এ তথ্য ব্রিটিশ বাংলাদেশীসহ বিশে^র সব মানুষই তা জানে। আর ইস্ট লন্ডন মসজিদের সংগৃহিত অর্থ কোথায় ব্যয় করা হয়, তাও সবাই জানে। কিন্তু রুপার প্রতিবেদন দেখলে মনে হবে অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ইস্ট লন্ডন মসজিদ। আর ওই অর্থ ব্যয় করা হয় আইএসের মতো জঙ্গি সহায়তায়, এমনটাই প্রতিফলন হয়েছে রুপার সমীকরনে। কিন্তু মানুষের বিবেকের সমীকরণ অনুযায়ী বুঝা যায় , ফারজানা রুপা প্রকৃতপক্ষে অবৈধ আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিরোধী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নামে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।
লন্ডনে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবদেন করে রুপা। তার কয়েকটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ দেখবো আমরা। লন্ডনে এসে ব্রিটেনে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের সাফল্য ও তাদের নানা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবদন করতে পারতেন রুপা। তা না করে, যুক্তরাজ্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আইএসের সাথে সম্পৃক্ত করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তমূলক প্রতিবেদন করেন রুপা। যা আওয়ামী সরকারের এজেন্ড বাস্তবায়নে অনেক সহায়ক হচ্ছে। পূর্ব লন্ডন থেকে যে তিনজন মেয়ে সিরিয়ায় আইএসে যোগ দিয়েছে বলে পত্রিকায় এসেছে,তাদের বিষয়ে স্কটল্যান্ড ইয়াার্ড ও অন্যান্য গোয়ান্দা সংস্থা ভালভাবেই জানেন। ঘটনার তিন বছর পর যে দেশের ঘটনা সেই ব্রিটেন সরকার জানলো না আর বাংলাদেশ থেকে ৭১ টিভি’র রুপা এসে তা উদঘাটন করে ফেললেন ? এমন প্রশ্ন এখন পূর্ব লন্ডনের প্রতিটি বাংলাদেশীদের মুখে মুখে। এছাড়া তারেক রহমানের বাসস্থান এবং ইস্ট লন্ডনের চ্যারিটির অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন বক্তব্য নেয়া হয়নি। উপরন্তু এক্ষেত্রে সম্পূর্ন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে তারেক রহমানের বাসস্থানের বিষয়ে বক্তব্য নেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আনোরুজ্জমান চৌধুরীর। অন্যদিকে ইস্ট লন্ডন মসজিদের সাবেক চেয়ারম্যান ডঃ আব্দুল বারীকে জড়িয়ে যে মিথ্যা তথ্য প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছে সে বিষয়েও তার কোন বক্তব্য নেয়া হয়নি। দর্শক ও পাঠকদের জ্ঞাতব্যে জানানো যাচ্ছে , ডঃ আব্দুল বারী একজন পদার্থবিজ্ঞানী। ব্রিটেনে বিখ্যাত কিংস কলেজ থেকে তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করে শিক্ষকতা শুরু করেন। একই সাথে তিনি একজন লেখক ও প্যারেন্টিং কনসালটেন্ট। নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে কলাম লিখেন বিশ^ বিখ্যাত হাফিংটন পোষ্ট ও আল জাজিরায়। গ্রেটেস্ট শো ইন দ্যা আর্থ খ্যাত ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক আয়োজক কমিটির ১৯ জন লন্ডন বোর্ড মেম্বারদের একজন ছিলেন ডঃ আব্দুল বারী। ডঃ আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে যদি সত্যিই আইএসের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকে তবে তো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এর জানার কথা ছিল। রুপার প্রতিবেদন অনুযায়ী মনে হয়, ব্রিটেনের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বাংলাদেশের পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো শক্তিশালী নয়। তাই তারা যুক্তরাজ্য বিএনপি ও ইস্ট লন্ডন মসজিদের বিষয়ে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রুপা ‘ সমীকরন ‘ অনুষ্ঠানে স্বভাবসুলভ কয়েকটি ভিডিও ও কয়েকজনের সাক্ষাৎকার প্রচার করে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী ব্রিটেনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে। এক্ষেত্রে রুপা প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি এম এ মালেককে ‘ হরে কৃষ্ণ হরে রাম ’ শ্লোগান দেয়ায় সাম্প্রদায়িক উস্কানি হিসেবে প্রচার করে। অথচ কমনওয়েলথ অধিবেশনে লন্ডনে শেখ হাসিনার সাথে তার নিউজ কভার করতে রুপা উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এমনই একটি অনুষ্ঠান ছিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কর্তৃক শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা। ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা লন্ডনে হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করতে গিয়ে যারা ভাংচুর করেছে তাদের হাত ভেঙ্গে দিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নির্দেশ দেন। এত দিনেও কেন তাদের হাত ভেঙ্গে দেয়া হলো না সেজন্য ক্ষোভও প্রকাশ করেন হাসিনা। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ( হউক তিনি বৈধ বা অবৈধ) সরাসরি হামলার নির্দেশ ফারজানা রুপার চোখে পড়েনি। এতে সহজেই প্রতীয়মান হয় রুপা কিসের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রচার করেছে। আর তার উদ্দেশ্যই বা কি ছিল তা দর্শক ও পাঠকের বিবেকের সমীকরনে সহজেই বুঝা যায়।