এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইরানের ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র। পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ইরানের কয়েকজন ব্যক্তি ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। শুক্রবার মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে ইরানের ওপর নতুন করে ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করেছে ফ্রান্স। এ পদেক্ষেপে ওয়াশিংটন ও ইউই মিত্র দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের পর চুক্তির অন্যান্য পক্ষগুলোর নিবিড় যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে ইরান। ইসরাইলের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা বেড়েছে ইরানের। বৃহস্পতিবার দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ডা. হাসান রুহানি। মার্কেলকে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে কোনো যুদ্ধ চায় না ইরান। রুহানি বলেন, এ অঞ্চলে ইরান সবসময় যুদ্ধ ও উত্তেজনা কমাতে চেয়েছে, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদার করতে চেয়েছে। এ অঞ্চলে নতুন করে কোনো যুদ্ধ চায়না তেহরান।’ তবে টেলিফোনে মার্কেলকে ইসরাইলের হামলার কথা উল্লেখ করেননি রুহানি।
বিবিসি জানিয়েছে, ছয় ইরানি নাগরিক ও তিন কোম্পানি নতুন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারবে না। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় (ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আর্থিক সহায়তাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি স্টিভেন মনুচিন বলেন, নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডকে (আইআরজিসি) লাখ লাখ ডলার প্রদান করে থাকে। আর ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতে সহায়তা করে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবে না। পূর্বে ইরানি এসব প্রতিষ্ঠান আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে লেনদেন করত।
স্টিভেন মনুচিন বলেন, ইরান ও এর কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরব আমিরাতের সহায়তায় মার্কিন ডলার অর্জনের সুযোগের অপব্যবহার করেছে। এ সুযোগে তারা আইআরজিসিকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সরবরাহ করেছে। এমনকি আঞ্চলিক ছায়াযুদ্ধে নিজেদের মদদপুষ্ট দলকেও অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে। আমরা আইআরজিসির অর্থ সরবরাহ বন্ধ করতে চাই।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এলেও দেশটির কর্মসূচির ওপর নজরদারি অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ানা রাজ্যে এক সমাবেশে যোগ ট্রাম্পও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ইরানের ওপর নজরদারি এখনও প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যা-ইয়েভস লা দ্রিয়ান। একে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, এই ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও তাদের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। বৃহস্পতিবার লা দ্রিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত কোনো দেশের কোম্পানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন কোনো অবরোধ আরোপের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের তাদের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন।