এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাজনৈতিক সহিংসতায় হওয়া মামলাগুলোর বিচার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে চায় পুলিশ সদর দফতর। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছরে সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় যত মামলা হয়েছে, তার মধ্য থেকে বাছাই করা হয়েছে আড়াই শতাধিক। এসব মামলার বিচার কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে ঝুলে আছে সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিচারাধীন মামলায় গতি বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার মামলাগুলো নিয়ে এরই মধ্যে পর্যালোচনা করেছে পুলিশ সদর দফতর। এরপরই বাছাই করে আড়াই শতাধিক মামলার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ও ইউনিটপ্রধানদের সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে। এসব মামলায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। আড়াই শতাধিক মামলার মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে ২০৪টির। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫টি মামলার বিচার কাজ স্থগিত আছে। আদালতের নির্দেশে একটি মামলার অধিকতর তদন্ত হচ্ছে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মামলা হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে প্রায় ৩০০। যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বেশি মামলা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার প্রমুখ। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই শতাধিক মামলা আছে।
এসব নেতা ছাড়াও অন্য যাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা সচল করা হচ্ছে তারা হলেন- বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবদিন ফারুক, এজে মোহাম্মদ আলী, ইকবাল হাসান মাহমুদ, অধ্যাপক ডা. এজেডএ জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, শাহজাহান ওমর, সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, রুহুল কবির রিজভী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান মিনু, মো. শাহজাহান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মারুফ কামাল খান সোহেল, শামসুদ্দিন দিদার, মোসাদ্দেক হোসেন, আবদুল মান্নান, আরিফুল হক চৌধুরী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নবী উল্লাহ নবী, রুহুল কুদ্দুছ তালুকদার দুলু, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, আজিজুল বারী হেলাল, সানাউল্লাহ মিয়া, শফিউল বারী বাবু, আসিফা আশরাফী পাপিয়া, তৈমুর আলম খন্দকার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ।
সূত্র মতে, রাজনৈতিক সহিংসতার যে মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত ও দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে ডিএমপিতে (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) ও সিএমপিতে (চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ) ৭টি করে, আরএমপি (রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ) ও সিএমপিতে (সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ) ৫টি করে, বিএমপিতে (বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ) ৪টি মামলা আছে। তাছাড়া ঢাকা রেঞ্জে ৩৯, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ৪১, খুলনা রেঞ্জে ৩৪, রাজশাহী রেঞ্জে ২৪, বরিশাল রেঞ্জে ১৮, সিলেট রেঞ্জে ১২, রংপুর রেঞ্জে ২৪, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ১২ ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৭টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও নাশকতার অভিযোগের মামলাগুলো তদারকি করতে পুলিশ সদর দফতরের একটি মনিটরিং সেল দীর্ঘদিন কাজ করছে। প্রত্যেক রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন ও ইউনিটগুলোতেও মনিটরিং সেল রয়েছে। সেলগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি আড়াই শতাধিক মামলা প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী দ্রুত নিষ্পত্তি করা সংক্রান্ত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, পুলিশ সদর দফতর যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি খুবই ভালো উদ্যোগ। আরও আগেই এসব মামলা নিষ্পত্তি হওয়া উচিত ছিল। আমি আইজি থাকা অবস্থায় অনেক চেষ্টা করেছি। যেসব ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা আহত বা নিহত হয়েছেন সেসব মামলাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। নানা কারণে এখনও এসব মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। তিনি জানান, পুলিশের একার ওপর তো সবকিছু নির্ভর করে না। মামলা নিষ্পত্তিতে প্রসিকিউশন বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পিপি, এপিপিরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ না করলে মামলা নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় লাগে। তাছাড়া আদালতে তো দীর্ঘ মামলাজট লেগেই আছে।