এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনের রায় আগামীকাল ঘোষণা করা হবে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। আপিল বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে এ বিষয়ে আদালত বসলে অ্যাটর্নি জেনারেল আবারো শুনানির আবেদন করে বলেন, এ বিষয়ে তার বক্তব্য শেষ হয়নি। তাই তিনি আগামীকালও এ বিষয়ে শুনানি করতে চান। কিন্তু আদালত বলেন, আগামীকাল একজন বিচারক থাকবেন না তাই সময় দেয়া যাচ্ছে না। আজই এর আদেশ হবে। পরে আদালত দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দেন।
এরপর দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে আবার শুনানি শুরু হয়। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি দুই-তিনটি মামলার উদাহরণ টেনে বলেন, এ মামলাগুলো বিশেষ আদালতের ছিল। এ মামলাগুলোতে বিশেষ স্বাস্থ্যগত কারণে আসামিদের জামিন দেয়া হয়েছিল।
পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের উত্তরে বলেন, এ পর্যন্ত দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ একটি মামলাও দেখাতে পারেনি যেখানে এ ধরনের মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিপক্ষে আপিল করা হয়েছে।
আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, আমিনুল হক, আব্দুর রেজাক খান। আদালতে উপস্থিত ছিলেন আরো বহু আইনজীবী।
দলের পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জয়নুল আবদিন ফারুক প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গত ৯ মে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ১৫ মে দিন নির্ধারণ করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল এবং খালেদা জিয়ার জামিন বহাল চেয়ে তার পক্ষে দায়ের করা আপিল আবেদনের ওপর গত ৮ ও ৯ মে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৯ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর চার আসামিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হয়। এরপর গত ১২ মার্চ চারটি যুক্তি আমলে নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। চারটি যুক্তি আমলে নিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, আদেশ দেয়ার সময় আমরা যেসব বিষয় বিবেচনা করেছি সেগুলো হলো- এক. সাজার পরিমাণ (বিচারিক আদালতে তাকে যে স্বল্প মেয়াদের সাজা দেয়া হয়েছে)। দুই, মামলাটির বিচারিক আদালতের নথি এসেছে এবং এটি আপিল শুনানির জন্য পেপার বুক তৈরি হয়নি। তিন. বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন, তিনি জামিনে ছিলেন এবং জামিনের অপব্যবহার করেননি এবং চার. তার বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনা করা হলো। তিনি ৭৩ বছর বয়স্ক একজন নারী এবং দীর্ঘ দিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। এসব বিবেচনা করে তাকে চার মাসের জামিন দেয়া হলো।