এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের নেপথ্যে কি কারণ সে বিষয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট পাওয়া গেছে। লেখাটিতে বলা হয়েছে, ১৫ মে ২০১৮ হয়ে গেল সাল খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। যেহেতু তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে কেসিসি নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী, সেহেতু নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ সরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা না করা পর্যন্ত তার খুলনায় উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ যথাযথ ব্যবস্থার নির্দেশ কিংবা সুপারিশ করাটাই ছিল বাধ্যতামূলক।
একইভাবে দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী নেতা। এখন তিনি সারা দেশে বিএনপির কমিটি করার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। কিন্তু কমিটি করার নামে তিনি বাণিজ্যে লিপ্ত।
গয়েশ্বর চন্দ্র ও মোহাম্মদ শাহজাহান খুলনা সিটি নির্বাচন শুরুর আগে ১০ মে খুলনা থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজেদের দায়িত্বের মুখে ছাই মেরেছেন। দলের প্রতি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা থাকলে তিনি এরকম কাজ করতে পারতেন না। যেহেতু খুলনার নির্বাচন এমন একটি সময়ে হচ্ছে যখন একদিকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অন্ধকার কারাগারে রোগে-শোকে ভুগছেন, মৃত্যুর প্রহর গুনছেন- অন্যদিকে খুলনায় পুলিশ, প্রশাসন, ইসি, আওয়ামী লীগ সবাই একাট্টা হয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে ভোট ডাকাতির জন্য। তখন কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য মনোনীত এই নেতার রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যাওয়াটা সত্যিই দলের সঙ্গে চরম মীরজাফরি ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
গয়েশ্বর রায় খুলনা থেকে পালিয়ে গেলেও তার দায়িত্ব কিন্তু কাউকেও দিয়ে যাননি। দায়িত্ব নিজে হাতে রেখে মাঠ থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি বেঈমান। তাহলে ধরে নিতে পারি তিনি তার প্রধান সমন্বয়কের পদকে ব্যবহার করছেন বিএনপির বিরুদ্ধেই! তার প্রমাণ আরও আছে। খুলনার বিএনপির সচেতন মহল সবাই সেটা জানে। তিনি খুলনায় এসেছিলেন নিজের চাঁদা তোলা ও সাপ্লাইয়ার রবীকে সঙ্গে নিয়ে।
গয়েশ্বর চন্দ্র বিদেশ থেকে শরীফ শাহ কামাল তাজকে ডেকে খুলনায় এনেছিলেন। তার হোটেলে শরীফ শাহ কামাল তাজ আর তিনি দিনের পর দিন মিটিং করেছেন। যদিও শরীফ শাহ কামাল তাজ কেসিসি নির্বাচনে মাঠে নামেননি। বিগত ৮/৯ মাস যাবত শরীফ শাহ কামাল তাজ রাজনীতি ও দেশের বাইরে। গয়েশ্বর চন্দ্র শুধু যে নগদ নারায়ণের জন্য তাকে ডেকেছিলেন, সেটা সবাই বোঝে।
খুলনার বহিষ্কৃত ও জাতীয় পার্টি থেকে অনুপ্রবেশকারী মিঠুকে নিয়েও গয়েশ্বর চন্দ্র দিনরাত মিটিং করেছেন। যে মিঠু ও তার নানা – সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বুলু বিশ্বাস এবং বিশ্বাস পরিবারের আত্মীয়স্বজন মিলে কেসিসি নির্বাচনে খুলনা বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়েছে। যেটা খুলনার সবাই জানে। এর জন্য একজন ইতোমধ্যে বহিষ্কারও হয়েছে।
মূল ঘটনা : ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাতের আঁধার নেমেছে। কেসিসি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা শুরু হয়েছে। খুলনা বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী সাবেক জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ পরিবারের দুষ্কৃতকারীরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে বিএনপিকে হারানোর কৌশল নির্ধারণ ও শপথগ্রহণ সম্পন্ন করে।
বৈঠক হয় সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাসের বাসভবন অথাৎ খুলনার বিশ্বাস বাড়িতে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, শেখ হেলাল (শেখ হাসিনার ভাই, আওয়ামীলীগ এমপি ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী),
সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস (সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিশ্বাস পরিবারের বড় মুরব্বি)। বুলু বিশ্বাস নির্বাচনে আগে হুংকার দিয়েছিলেন সোনাডাঙ্গা থানায় বিএনপির কোনো এজেন্ট থাকতে দেবেন না। তিনি সোনাডাঙ্গা থানার বিএনপির বিভিন্ন ওয়ার্ডের অধিকাংশ নেতাদের বাড়িছাড়া করিয়েছেন। তিনি বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে সোনাডাঙ্গায় প্রচার প্রচারণাকারীদের মারধর করেছেন ও লিফলেট ছিনিয়ে নিয়েছেন।
নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই সোনাডাঙ্গা থানার ১৬ নং ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যুবলীগ, ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে বিএনপির ভোটারদের হুমকি দেন বুলু বিশ্বাস। তাদের একটাই নির্দেশ, কমিশনার নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই, আমাদের মাথাব্যথা মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তাকেই জেতাতে হবে। খালেকের বাইরে কারও ভোট দেওয়া ও ভোট চাওয়া নিষেধ করে হুমকি ধামকি দেয়া হয়।
ওই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক (আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী), আরিফুর রহমান মিঠু (খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বুলু বিশ্বাসের নাতি)। মিঠুর বাবা জাতীয় পার্টির নেতা ও খুলনার মেয়র ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসলে আব্দুর রব আওয়ামী লীগ যোগ দেন। আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে এই রব সাহেব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এছাড়া ওই বৈঠকে ছিলেন ৭নং ওয়ার্ড কমিশনার পিন্টু।