এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার আবেদনে কয়েক হাজার হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। আলেকজান্দ্রিয়া আব্বাসগাম নামে একজন নারী শনিবার অনলাইনে এই আবেদনটি করেন।
মাত্র একদিনেই রোববার (২৭ মে) রাত ৯টা পর্যন্ত এই অনলাইন আবেদনে ৫১ হাজারের বেশি স্বাক্ষর পড়েছে। সোমবার পর্যন্ত লাখ ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
আলেকজান্দ্রিয়া আব্বাসগাম তার আবেদনে লেখেন, মাহাথিরের ‘দৃঢ়তাকে স্বীকৃতি দিতে’ তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা উচিত। তিনি লিখেছেন, ‘তুন ড. মাহাথির মালয়েশিয়ার জন্য স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে- তুন মহাথির খোলাখুলিভাবে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন এবং তার অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এটি তাকে প্রকৃতপক্ষে ‘মহৎ মানুষে পরিণত করেছে’। একই সঙ্গে এটি তাকে একজন অনুসরণীয় নেতার মর্যাদা এনে দিয়েছে।’ আবেদনে তিনি মাহাথিরকে মালয়েশিয়ার ‘ম্যান্ডেলা’ হিসেবে অবিহিত করেন। একই সাথে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা স্থানান্তরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিরও প্রশংসা করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৯ মে মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোটের হয়ে ৯২ বছর বয়সী মাহাথির বিজয়ী হন। তার এই বিজয়ের ফলে দেশটির বারিশান ন্যাশনালের দীর্ঘমেয়াদী শাসনের সমাপ্তি ঘটে।
১৯৮১ সাল থেকে টানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৩ সালে অবসরে যান মাহাথির। এই লম্বা সময়ে তিনি মালয়েশিয়াকে পরিণত করেন ‘এশিয়ার ইউরোপে’। কিন্তু তার শিষ্য নাজিব রাজাক ক্ষমতাগ্রহণের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় একের পর এক ‘কেলেঙ্কারি’ ও রাজনৈতিক গুরুর পরামর্শকে ‘উপেক্ষা’ করতে থাকলে মাহাথির ফের রাজনীতিতে নামেন। তারই সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের দলের সাথে মিলে করেন নির্বাচনও। এ নির্বাচনে জিতে একেবারে নব্বইয়ের কোঠার রাজনীতিক মাহাথির সরকারপ্রধানের গদি সামলাচ্ছেন নতুন করে।
সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে আগের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার সময়ে বাকস্বাধীনতার রাশ টেনে ধরা এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর অত্যাচার করার অভিযোগ করেছেন। যাইহোক, মহাথির সম্ভবত এই বছরের নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হতে পারছেন না। কারণ পুরস্কারটি অর্জনের জন্য একজন ব্যক্তির মনোনয়নের সময়সীমা ছিল ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নোবেল প্রাইজ কমিটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই বছরের নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য ৩৩০ জনকে মনোনীত করা হয়েছে।
বাতিল হল নাজিবের মেগা প্রজেক্ট : রয়টার্স জানায়, মালয়েশিয়ার সদ্য সাবেক নাজিব সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাহাথির সরকার। খোঁজা হচ্ছে প্রকল্পগুলো বাতিল করলে কী কী সুবিধা হতে পারে। বর্তমান সরকার এরইমধ্যে আগের সরকারের নেওয়া সবগুলো মেগা প্রজেক্ট পুনর্মূল্যায়ন শুরু করেছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই ‘কুয়ালালামপুর-সিঙ্গাপুর হাই স্পিড রেল (এইচএসআর)’ প্রকল্প এবং ইস্ট কোস্ট রেল লিংক (ইসিআরএল)’ প্রকল্প দু’টি বাতিলের কথা ভাবা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী আজমিন আলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার সরকার এইচএসআর এবং ইসিআরএলসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাতিলের ইতিবাচক প্রভাব মূল্যায়ন করছে। সরকার এইচএসআর প্রকল্প নিয়ে দু’দেশের মধ্যে চুক্তিসহ নানান বিষয় নিয়ে ভাবছে। এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
ছয় হাজার কোটি রিঙ্গিতের হাই স্পিড রেল প্রকল্পটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজাক প্রশাসনের সময় নেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনে জেতার পর পাকাতান হারাপান জোট নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় এসেই প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়ন শুরু করে দিয়েছেন। নাজিব সরকারের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার মেগা প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে হাজার কোটি রিঙ্গিত দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আজমিন জানিয়েছেন, সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি রিঙ্গিতের অন্য আরেক মেগা প্রকল্প ‘ইসিআরএল’ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের পুরো প্রভাব মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার দূরত্বে জন্য ‘এইচএসআর’-এর মতো মেগা প্রজেক্ট দরকার আছে কিনা সেটা আমাদের দেখতে হবে। এছাড়া সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য অন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় কিনা সেটিও অবশ্যই আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
আজমিন রোববার আল হাদিয়া মজসিদে ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে এসব মন্তব্য করেন।
অন্য একটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মধ্যমেয়াদী অর্থনৈতিক পর্যালোচনা আগামী সেপ্টেম্বরের আলোচনা টেবিলে তোলা হবে। এছাড়া পাকাতান হারাপান জোটের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত নতুন অর্থনৈতিক নির্দেশনাও চালু করা হবে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ইউনিট ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমরা পাকাতান হারাপানের ইশতেহার অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চাই।
নাজিব রাজাকের সিরিজ অর্থ কেলেঙ্কারির কারণে গত ৯ মে মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে হেরে যায় রাজনৈতিক মোর্চা বারিসান নাশিওনাল। এই মোর্চার হয়েই আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক হয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি দীর্ঘদিন শাসনের মধ্য দিয়ে দেশটিকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে দিয়ে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছয় সরে দাঁড়ান। ক্ষমতা দেন নাজিবের হাতে। কিন্তু অল্পদিনেই সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এক সময়কার এই শীর্ষকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান মাহাথির। সেই আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় দীর্ঘদিনের বিরোধী জোট পাকাতান হারাপানের হয়েই প্রধানমন্ত্রী পদে ভোটযুদ্ধে নামের এশিয়ার আইকন। জয় পেয়ে আবার সরকার গঠন করেন মাহাথির।
নির্বাচনের জয়ের পরেই ‘দুর্নীতিবাজ নাজিবকে এবার কাঠগড়ায় নেবেন মাহাথির’ এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন গণমাধ্যমকে। অবশ্য সে পথেই হাঁটছেন দেশটির উন্নয়নের এ নায়ক। কথার সঙ্গে কাজের মিল রাখতে শপথ নিয়েই ‘নাজিব ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা’ দিয়েছে মাহাথির সরকার।