এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : নাঈমুল হাসান সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ইউনিভার্সিটি অফ মিসিসিপির কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগে কর্মরত আছেন। তার গবেষণার বিষয় ডাটাবেজ, ডাটা মাইনিং এবং ন্যাচেরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং। বিগত কয়েক বছর ধরে কম্পিউটেশনাল জার্নালিসম নিয়ে কাজ করছেন। ২০০২ সালে আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৪ সালে নটরডেম থেকে এইচএসসি এবং ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এ ব্যাচেলর্স ডিগ্রি অর্জন করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে (আরলিংটন) আসেন। সেখান থেকে ২০১৬ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করে ইউনিভার্সিটি অফ মিসিসিপিতে যোগদান করেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাসের ফাহাদ জিন্নাহ্
টেকিজ : আস্সালামু আলাইকুম নাঈম, কেমন আছেন?
নাঈমুল হাসান : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
টেকিজ : এই তো, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি তো এখন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন, এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
নাঈমুল হাসান : ২০১৬ এর আগস্ট থেকে ইউনিভার্সিটি অফ মিসিসিপিতে কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। পছন্দমত বিষয়ে কাজ করার যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে। ডিপার্টমেন্টে আমার সহকর্মী যারা আছেন, তারা খুবই ভালো, আন্তরিক, সবসময়ই তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা পাচ্ছি। ডিপার্টমেন্টের মানুষজন ছাড়াও অন্যান্য যাদের সাথে মেলামেশা হয়েছে, তাদের সবাইকেই যথেষ্ট আন্তরিক হিসেবে পেয়েছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও খুবই সুন্দর। এরকম পরিবেশে কাজ করার আনন্দটাই অন্যরকম।
টেকিজ : আপনার সহকর্মী হিসেবে আর কোনো বাংলাদেশী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছে?
নাঈমুল হাসান : না, আমার সহকর্মী হিসেবে কোনো বাংলাদেশী নেই। তবে ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টে একজন বাংলাদেশী অধ্যাপক আছেন। আর এছাড়া, আমার অধীনে একজন বাংলাদেশী ছাত্র কাজ করছে।
টেকিজ : উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা কেমন করছে?
নাঈমুল হাসান : খুবই ভালো করছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। প্রায়ই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা গবেষণা-সহকারী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রী নেয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেখান।
আমার পড়ালেখা যেহেতু কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে, তাই আমার কথাগুলো একটু এই দিকে বায়াসড হতে পারে। পড়ালেখা শেষ করার পর ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ ভালো ভালো জায়গায় স্থান করে নিচ্ছে। বেশির ভাগই ইন্ডাস্ট্রিতে জয়েন করছে। আমার পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই মাইক্রোসফট, গুগল, ইন্টেল ইত্যাদি বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি গুলোতে কাজ করছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হিসেবে আসছে। আবার অনেকেই দেশে ফিরে গিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছে।
টেকিজ : প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে প্রতি বছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি অতিক্রম করছে, তাদের অনেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী। তারা কিভাবে প্রস্তুতি নিলে ভালো করবে বলে আপনি মনে করেন?
নাঈমুল হাসান : দেশের বাইরে আমরা নানা ধরণের বিষয়ে পড়তে আসি, কম্পিউটার সায়েন্স, জার্নালিসম, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এছাড়াও এমবিএ করতে আসে অনেকে। একেকটা বিষয়ের জন্য প্রস্তুতি হয়তো একেক রকম হবে, আমি ইঞ্জিনিয়ারিং ও সায়েন্সের টপিক গুলো নিয়ে বলতে পারবো। যেমন, আমেরিকাতে সায়েন্সের বিষয়গুলোতে পড়তে আসার জন্য TOEFL, IELTS, GRE এর প্রয়োজন হয়। কারো যদি ইচ্ছা থাকে আমেরিকাতে পড়তে আসবে, সেক্ষেত্রে যত আগে থেকে GRE -র প্রিপারেশন নেয়া শুরু করতে পারবে ততই তার জন্য ভালো হবে বলে আমার মনে হয়।
আগে আমরা বড় ভাইদের দেখতাম পাশ করার পর চাকরিবাকরি শুরু করতেন এবং একই সাথে GRE -র জন্য প্রস্তুতি নিতেন। তখন এই চাকরির পাশাপাশি GRE -র জন্য প্রস্তুতি নেয়াটা একটু কষ্টকর ছিল। সেকারণে দেখা যেত যে পাশ করার পর GRE -র জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাইরে আসতে ২ থেকে ৩ বছরের মত সময় লাগতো। পরে আমাদের সময় যেই ট্রেন্ড চালু হয়েছিল, ছাত্র ছাত্রীরা ফাইনালের পর GRE দেয়ার চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে থাকে। আমাদের শিক্ষকরা আমাদের চতুর্থ বর্ষ থেকে সম্ভব হলে আরো আগে থেকেই GRE -র প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। আর এখন ছাত্র ছাত্রীরা অনেক সচেতন এই ব্যাপারগুলোতে, অনেক রিসোর্স সহজে পাওয়া যায়, যেমন, ফেইসবুকে একটি গ্রুপ আছে HigherStudyAbroad™ – Global Hub of Bangladeshis, সেখানে যারা দেশের বাইরে আছে তারাও কানেক্টেড আবার যারা দেশের বাইরে আসতে চাচ্ছে তারাও কানেক্টেড। এই প্লাটফর্ম অনেক সাহায্য করছে মানুষজনকে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যে কখন কিভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত, কোথা থেকে রিসোর্সগুলো পাওয়া যাবে, কোন সাবজেক্টের জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভালো হবে, এমনকি মানুষ আরো স্পেসিফিক প্রশ্ন করে যে আমরা সিজিপিএ এরকম, আমার এতগুলো পাবলিকেশন আছে, আমার GRE স্কোর এতো, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাই করলে ভালো হয় ইত্যাদি। যারা বাইরে আসতে চায় তাদের প্রতি কমন সাজেশন থাকবে যে এই ধরণের যে রিসোর্স পয়েন্ট আছে সেগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া, সেগুলোর সাথে কানেক্ট হওয়া। স্পেসিফিক করে বলতে গেলে GRE -র জন্য প্রিপারেশন আগে থেকেই নেয়া।
মাস্টার্স পিএইচডি -র জন্য আসতে চাইলে পাবলিকেশনের একটা ভ্যালু থাকে, কারো যদি পাবলিকেশন ভালো থাকে তাহলে এখানকার যারা ফ্যাকাল্টি তারা এটাকে একটা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে দেখবে। আর সাধারণভাবে বললে সিজিপিএ ভালো থাকতে হবে অবশ্যই। কিন্তু একই সাথে সিজিপিএ যদি ভালো না থাকে তাহলে বাইরে সুযোগ পাওয়া যাবে না সেটাও একেবারে ভুল ধারণা। সিজিপিএ ভালো থাকলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া যায় কিন্তু সিজিপিএ কম থাকলে যে আমি চেষ্টা করবো না বা আমার দ্বারা হবে না সেটা কিন্তু সঠিক নয়। আমার অনেক বন্ধুদের দেখেছি যারা অনেক কম সিজিপিএ নিয়ে এখানে এসে ভালো করছে। কেউ যাতে হতাশ না হয়।
TOEFL, IELTS নিয়ে বলতে গেলে, ইংলিশ নিয়ে আমাদের হয়তো দুর্বলতা আছে অনেকের তুলনায়, আবার কিছু দেশের তুলনায় পার্সোনালি আমার মনে হয় অনেক ভালো। ইন্ডিয়ানদের অ্যাভারেজ ইংলিশ আমাদের থেকে বেটার। কিন্তু চাইনিজ, ইরানিদের অ্যাভারেজ ইংলিশ যে আমাদের অ্যাভারেজ ইংলিশ থেকে কোনো অংশে বেটার তা আমি বলবো না। কেউ যদি চেষ্টা করে তবে অবশ্যই TOEFL, IELTS এই জিনিসগুলোতে ভালো করতে পারবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। আর GRE কে ভয় পাওয়া যাবে না।
টেকিজ : বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য কোন কোন দেশগুলোকে প্রথম সারিতে রাখলে ভালো করবে বলে আপনি মনে করেন এবং কেন?
নাঈমুল হাসান : ইউএসএ তে ইঞ্জিনিয়ারিং রিলেটেড জবের সুযোগ মোটামুটি অন্যান্য দেশ থেকে একটু ভালো। আর প্লাস হচ্ছে অনেকেই যারা বিদেশে সেটেল হতে চায় তাদের জন্য ইউএসএ একটা ভালো সুযোগ দেয়, গ্রিনকার্ডের মাধ্যমে সিটিজেন হবার বা স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ থাকে। অন্যান্য দেশে এটা কতটা সহজ আমার ঠিক জানা নাই। তবে কেউ যদি দেশের বাইরে শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে চায় সেক্ষেত্রে আমাদের এশিয়াতে এমনকি সিঙ্গাপুরে কিছু ভালো বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেমন NUS, NTU, সৌদিতেও একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভালো করছে, কাতারেও একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেটা সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভালো করছে, অস্ট্রেলিয়াতে কিছু ভালো বিশ্ববিদ্যালয় আছে, ইউএসএ তে তো আছেই, ইউরোপেও অনেক ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় আছে।
যদি উচ্চশিক্ষাটাই লক্ষ্য থাকে, যদি বিদেশে স্থায়ীভাবে সেটেল হওয়া বা চাকরি করাটা ম্যান্ডেটরি না থাকে সেক্ষেত্রে পছন্দনীয় বিষয়, শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দেখে সেই অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। আর যদি সেটেল হওয়ার চিন্তা ভাবনা থাকে বা বাইরে এসে চাকরি করার চিন্তাভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে দেখতে হবে কারা এই ধরণের সুযোগ সুবিধাগুলো দিচ্ছে। যেমন কানাডা, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া এই ধরণের সুযোগ সুবিধাগুলো বেশি দিচ্ছে যে কারণে আপনি দেখবেন এই দেশগুলোতে মানুষজন বেশি চেষ্টা করে।
টেকিজ : বিদেশে উচ্চশিক্ষার খরচ কেমন? পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুবিধা কতটুকু?
নাঈমুল হাসান : এখানে পড়াশোনা বেশ খরচের। ফান্ডিং না থাকলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া আমাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশীদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোন বিষয়ে পড়ছেন, কি ডিগ্রি নিতে চাচ্ছেন, কোন স্টেটে থেকে পড়তে চান, প্রাইভেট না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, এই সবকিছুর উপর নির্ভর করে পড়ালেখার খরচ।
কেউ যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচের পরিমাণ জানতে চান, তাহলে আমার উপদেশ থাকবে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে একটু খোঁজ নেয়া। সব বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের ওয়েবসাইটে এই তথ্যগুলো রাখে। আর যদি খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে ঐ প্রোগ্রামের সংশ্লিষ্ট ইমেইলে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে।
এখানে টিউশন ফি এর পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার খরচটাও চিন্তা করতে হয়। যেহেতু পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সুবিধা সীমিত, তাই ফান্ডিং না থাকলে এই সব খরচের ব্যবস্থা করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আমেরিকায় একজন ছাত্র সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পায় এবং সেটা অবশ্যই ক্যাম্পাসের ভেতরে হতে হয়। তখন ক্যাম্পাসের বাহিরে কাজ করার অনুমতি নেই। তবে গ্রীষ্মের ছুটিতে ক্যাম্পাসের বাহিরেও ইন্টার্নশিপের অনুমতি থাকে। সেক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশি কাজে বাঁধা নেই। আর পড়াশোনা শেষ হবার পর Optional Practical Training (OPT) এ ১২ মাসের জন্য কাজ করার অনুমতি থাকে। অবশ্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, ও গণিতের শিক্ষার্থীরা এই ১২ মাস সময় শেষ হবার পর আরো ২৪ মাস কাজের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ পায়।
টেকিজ : আপনি তো স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে পড়াশোনা করেছেন। আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে আমেরিকার স্কলারশিপ সম্পর্কে কিছু বলুন।
নাঈমুল হাসান : মাস্টার্স বা পিএইচডি তে স্কলারশিপ ছাড়া পড়তে আসাটা একটু কষ্টকর। ইউএসএ তে থাকা-খাওয়ার খরচ একটু বেশি, ইউরোপেও বেশি। ইউএসএ তে আবার কাজ করার সুযোগ খুব একটা থাকে না। স্কলারশিপ না থাকলে এখানে পড়াশোনা সেভাবে চালিয়ে নেয়াটা কষ্টকর। যদি আসার আগে স্কলারশিপ ম্যানেজ করে আসা যায় তাহলে খুবই ভালো। আর অনেক সময় দেখা যায় যে প্রথম এক সেমিস্টার বা প্রথম দুই তিন সেমিস্টার নিজের খরচে পড়ে তারপর পারফরম্যান্স এর উপর ভিত্তি করে স্কলারশিপ ম্যানেজ করা যায়। কারো কাছে যদি সেই অপশনটা সুবিধাজনক মনে হয় তাহলে সেটাও খারাপ না। ইউএসএ তে স্কলারশিপ সহজলভ্য, আর ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াতেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ভালো ভালো স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।
টেকিজ : উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কেন বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরে না এসে কেন বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ খুঁজে বেড়ায়? আমরা কেন তাদের দেশে আকৃষ্ট করতে পারছি না?
নাঈমুল হাসান : ইউএসএ তে বা দেশের বাইরে সবারই ইচ্ছা থাকে পড়ালেখা শেষ করে একটা বেটার লাইফস্টাইল লিড করা, এখানে হয়তো ট্রাফিক জ্যামে তাকে সময় নষ্ট করতে হচ্ছে না, একই পরিমাণ পরিশ্রম করে সে দেশের চেয়ে বেশি আয় করতে পারছে, নিজে স্বচ্ছলভাবে থাকতে পারছে প্লাস দেশে যারা আছে তাদের সাহায্যও করতে পারছে এই জিনিসগুলোতে যখন তারা এক্সপোজ হয় তখন অনেকেই দেশে ফিরে যেতে চায় না। আবার একই সাথে অনেকে কিন্তু দেশে ফিরে যাচ্ছেও, দেশে থেকে কাজ করার জন্য বা পরিবারের সাথে থাকার জন্য। আমার পরিচিত এক ছোট ভাই এখানে মাস্টার্স করে সে কিছুদিন চাকরি করেছে তারপর কয়েকদিন আগে সে বাংলাদেশে নর্থ সাউথ এ যোগদান করেছে। এমনকি আমার এক সহপাঠীও এখানে বেশ ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে।
আকৃষ্ট করার জন্য একটা ইকো সিস্টেম দরকার। শুধু ভালো বেতনের চাকরি দিয়ে সবাইকে আকৃষ্ট করা যাবে না। অনেকেই আবার বেতনের চেয়ে কাজের পরিবেশ নিয়ে বেশি মোটিভেটেড। যেমন, একজন ভালো ছাত্র সে হয়তো পিএইচডি করলো একটা ভালো টপিক থেকে, তার গবেষণার অভিজ্ঞতা ভালো, তার যোগ্যতা আছে ভালো,তাকে যদি আপনি একটা গবেষণার পরিবেশ দিতে পারেন, বেতন যেটাই হোক, সে কিন্তু বেশি মোটিভেটেড হবে। এই ধরণের জিনিসগুলা আমি বিশ্বাস করি ধীরে ধীরে ইনশাল্লাহ হবে, তখন হয়তো মানুষ আরো বেশি মোটিভেটেড হবে দেশে গিয়ে গবেষণা করার জন্য বা কিছু একটা করার জন্য। আমার শিক্ষকদের মধ্যে এমন অনেককেই দেখেছি যে দেশের বাইরে থেকে ডিগ্রি নিয়ে তারা বাংলাদেশে গিয়ে বেশ ভালো ভালো কাজ করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করছে। যত বেশি আমরা গবেষণার বা অন্যান্য কাজের সুযোগ বাংলাদেশে তৈরী করতে পারবো তত বেশি আমরা মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারবো যাতে করে তারা দেশে ফিরে গিয়ে বিদেশ থেকে যে জ্ঞান অর্জন করেছে তা দেশের কাজে লাগাতে পারে।
টেকিজ : প্রথম কম্পিউটারের সাথে পরিচয় কবে? কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার সিদ্ধান্তটি কখন নিলেন? সিদ্ধান্তটি কি আপনার নিজের ছিল?
নাঈমুল হাসান : যতটুকু মনে পড়ে, কম্পিউটারের সাথে পরিচয় ৫ম বা ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে। ব্রিটিশ কাউন্সিলে যেতাম ইংরেজির উপর একটা কোর্স করার জন্য। তখন সেখানকার লাইব্রেরিতে কম্পিউটার ধরে দেখার সুযোগ হয়। তবে নিজের প্রথম কম্পিউটার হয় তার অনেক পরে। বুয়েটে সুযোগ পাবার উপহার হিসেবে আমার নানু একটা কম্পিউটার কিনে দেন।
বুয়েটের লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পাবার পর ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ১ম পছন্দ আর কম্পিউটার সায়েন্স ২য় পছন্দ হিসেবে সিলেক্ট করেছিলাম। মেধাতালিকার ক্রম অনুসারে ভাগ্যে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে। আল্লাহর কাছে কোটি শুকরিয়া যে এত মজার একটা সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ দিয়েছেন।
টেকিজ : যেসকল কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা পেশা হিসেবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নিতে চায়, তাদের প্রতি আপনার কী পরামর্শ?
নাঈমুল হাসান : বন্ধুদের দেখেছি যে ওরা ভালো ভালো কোম্পানিতে যোগদান করার জন্য বেশ পরিশ্রম করে। ছাত্র অবস্থায় তারা অনেক প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করে নিজেদের প্রোগ্রামিং দক্ষতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে থাকে। কিছু সাইট আছে যেমন লীটকোড, টপকোডার, এই সাইটগুলোতে যে প্রোগ্রামিং সমস্যা দেয়া থাকে তারা সেগুলো সমাধান করে নিজের প্রোগ্রামিং দক্ষতা, অ্যানালিটিক্যাল দক্ষতা বৃদ্ধি করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা যখন ইন্টারভিউতে যায় তখন বেশ ভালো করে। এখানে যারা একাডেমি ফোকাস করে না, যারা আপনার ইন্ডাস্ট্রি ফোকাস করছে, পাশ করার পর তারা বেশ ভালো সময় দিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে মাইক্রোসফট, গুগল, ফেইসবুক, অ্যামাজন এইসব বড় বড় কোম্পানিগুলোতে এপলাই করে এবং আলহামদুলিল্লাহ অনেকেই কিন্তু ভালো করেছে, জয়েনও করেছে। আমার পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই মাইক্রোসফটে আছে, বেশ কয়েকজন ফেইসবুক ও অ্যামাজন এ আছে। তারা এই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যায় যে একটা ভালো সময় ইনভেস্ট করে নিজের প্রোগ্রামিং দক্ষতা, সিস্টেম ডিজাইন করার দক্ষতা ডেভেলপ করার জন্য এবং এগুলো করে আলহামদুলিল্লাহ তারা ভালোই করছে।
আর এছাড়া আমি জানি যে গুগল বাংলাদেশ থেকে সরাসরি রিক্রুট করে। কেউ যদি সেই রুটটা নিতে চায় তাহলে তার প্রোগ্রামিং দক্ষতা, অ্যানালিটিক্যাল দক্ষতা খুবই ভালো থাকতে হবে। দেশে থেকেও তো মানুষ প্রোগ্রামিং কনটেস্ট করছে। ভালো করছে। সুতরাং এগুলোর সাথে যত পারা যায় ইনভলভ হওয়াটা একটা পরামর্শ থাকবে। কনটেস্ট ছাড়াও সে যদি নিজ থেকেও কিছু করতে চায়, নিজের কোনো আইডিয়াতে সে হয়তো টাইম ইনভেস্ট করলো, হয়তো সে স্টার্টআপ নিয়ে কোনো কাজ করলো, এগুলা করে তার পোর্টফোলিওটা ভারী করতে পারে তাহলে সরাসরি হায়ার হওয়ার সুযোগ থাকে।
টেকিজ : বিদেশের সফটওয়্যার ও টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের ছেলেমেয়েরা কেমন করছে?
নাঈমুল হাসান : আমার মনে হয় খুবই ভালো করছে। যারা কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পাশ করছে আমি দেখি নাই খুব বেশিদিন তাদেরকে অপেক্ষা করতে চাকরি পাওয়ার জন্য। গ্রাজুয়েশন শেষ হবার আগে থেকেই তারা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে, বিভিন্ন কোম্পানিতে সিভি ড্রপ করে। তো দেখা যায় শেষ সেমিস্টার থেকেই তারা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেতে থাকে। অনেকে একাধিক জায়গা থেকেও অফার পায়। কারো যদি প্রোগ্রামিং দক্ষতা, অ্যানালিটিক্যাল দক্ষতা ভালো থাকে তাহলে ভালো ভালো কোম্পানি গুলোতে সুযোগ পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে ইন্ডিয়ান ও চাইনিজরা এই মার্কেটটা দখল করে আছে, কিন্তু বাংলাদেশিরাও এখন বেশ ভালো করছে।
টেকিজ : এবার একটু অন্য ধরণের প্রশ্ন করি, আপনার পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমাদের কিছু বলুন? আপনার অবসর কাটে কিভাবে?
নাঈমুল হাসান : আমরা এক ভাই, এক বোন। আমি ছোট। আব্বা-আম্মা, বোন-দুলাভাই, দুই ভাগ্নে, সবাই বাংলাদেশে আছে। সবাইকেই অসম্ভব মিস করি। ছোট বেলা থেকেই চাচাত-খালাতো ভাইবোনদের সাথে মিলে-মিশে বড় হয়েছি। তাদেরও খুব মিস করি।
এখানে আমার স্ত্রী আর আমি একসাথে থাকি। ওর ডাক নাম তিতলি। সে বুয়েট থেকে আর্কিটেকচারে ব্যাচেলর্স শেষ করে এখন এখানে মাস্টার্স করছে।
অবসর সময়ে অনেক কিছুই করা হয়। আমাদের দুজনেরই বাগানের শখ আছে। এখানে অল্প একটু জায়গায় কিছু সবজি আর ফুলের বাগান করার চেষ্টা করছি। একটু বেশি সময় পেলে ভ্রমণে বেরিয়ে যাই। আমেরিকার একটা বৈশিষ্ট্য হলো এখানে নানারকম বৈচিত্র্য দেখতে পাবেন- মানুষ, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দৃশ্য, সবকিছুতেই। অবসরে ঘুরে ঘুরে এসব দেখতে ভালই লাগে। আর এছাড়া ফেইসবুক, ইউটিউব, এগুলোতো আছেই।
টেকিজ : বিদেশে যাওয়ার পূর্বে আপনি তো ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলে, সেখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
নাঈমুল হাসান : ড্যাফোডিলে সময়টা খুবই ভাল কেটেছে। ওখানে দুই সেমিস্টার ছিলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি। এখনও তাদের অনেকের সাথে সামাজিক মাধমে যোগাযোগ হয়। কায়সার ভাই, নাজমুল ভাই, রিয়াজ ভাই, আশিক ভাই, মেহনাজ আপু সহ আরো যে সহকর্মীদের সাথে পেয়েছি, সবাই খুব ভাল ছিলেন। কিছুদিন আগেও কায়সার ভাইয়ের বাসা থেকে ঘুরে এসেছি।
তৎকালীন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর তুলনায় ড্যাফোডিল যথেষ্ট উন্নত ছিলো। এখন আরো উন্নত হয়েছে। নিজস্ব ক্যাম্পাস হয়েছে। আমার দুই কাজিনও এখন ড্যাফোডিলে পড়ে।
টেকিজ : আপনার পিএইচডি -তে গবেষণার বিষয়বস্তু কি ছিল ? এখন কি ধরণের বিষয় নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত আছেন?
নাঈমুল হাসান : সাধারণভাবে বলতে গেলে আমি ডাটা মাইনিং, ডাটাবেজ এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং নিয়ে কাজ করি। পিএইচডি তে আমার গবেষণার মূল বিষয় ছিলো কম্পিউটেশনাল জার্নালিসম। এই বিষয়ের কয়েকটি প্রাথমিক সমস্যা নিয়ে আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, কিভাবে প্রযুক্তি দিয়ে একটি তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়। পিএইচডি -র শেষের দিকে এই বিষয় নিয়েই পুরোপুরি নিয়োজিত ছিলাম।
পিএইচডি শেষ করার পর এখনও আমি ঐ সমস্যাটা নিয়েই কাজ করছি। এছাড়াও আরো নতুন কিছু বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছি, যেমন, প্রযুক্তি এবং মানুষের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে যৌন হয়রানীর সমাধান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে মানুষের বক্তব্য বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিং এর সাহায্যে অনৈতিক সাংবাদিকতার প্রসার নিরোধ, ইত্যাদি।
বাংলা ভাষা নিয়ে আমার কাজ করার খুব আগ্রহ আছে। পৃথিবীতে যদিও বাংলা ভাষা ভাষাভাষীর সংখ্যা বিবেচনায় সপ্তম স্থান অধিকার করে আছে, কিন্তু প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাষা প্রক্রিয়াকরণের (Natural Language Processing বা সংক্ষেপে NLP) দিক থেকে বাংলা অনেক পিছিয়ে আছে। এটা নিয়ে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে এবং এই বিষয় নিয়ে কাজ করা খুবই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমি খুবই খুশি যে বর্তমান সরকার এই ভাষার ডিজিটাইজেশনে মনোযোগ দিয়েছে। আমি আশা করি অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই দিকে অনেকটা পথ এগিয়ে যাব।
টেকিজ : আমাদের দেশের ছাত্র ছাত্রীদের গবেষণার প্রতি আগ্রহ কম। এমনকি শিক্ষকদের মাঝেও এ ব্যাপারে উদাসীনতা কাজ করে। ছাত্র ছাত্রীদের গবেষণাধর্মী কাজে কিভাবে আকৃষ্ট করা যায়?
নাঈমুল হাসান : শিক্ষকদের ব্যাপারে আমি আপাতত না বলি, মাত্র জয়েন করলাম তো। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে বলতে পারি, যদি দেশের বাইরে আসতে চায় কাজ করার জন্য তখন পাবলিকেশন, বিশেষ করে ভালো জায়গাতে পাবলিকেশন খুবই কাজে দেয়। আপনার যদি একটা ভালো কনফারেন্সে একটা ভালো জার্নালে একটা পাবলিশড আর্টিকেল থাকে, তবে তা আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে বাইরে আসার ক্ষেত্রে। গবেষণায় অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য দেশে থেকেই তার যে বিষয়ে ইন্টারেস্ট সেই বিষয়ে যারা দেশে বা দেশের বাইরে কাজ করছে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে পাবলিকেশনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। আমি এখানে দেখলাম যে বুয়েট ও কুয়েট এর কিছু ছাত্র-ছাত্রী, আমরা যারা দেশের বাইরে ফ্যাকাল্টি হিসেবে আছি তাদের সাথে যোগাযোগ করে নিজেদের প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করে কাজ করছে। এই জিনিসটা আমি আগে দেখতাম না। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন দেখি নাই যে বাংলাদেশে বসে কেউ দেশের বাইরের ফ্যাকাল্টিদের সাথে কাজ করছে বা করে থাকলেও হয়তো খুব অল্প পরিমাণে ছিল। এখন আমি দেখছি যে এই জিনিসটা অনেক বেশি কমন। যাদের গবেষণার প্রতি আগ্রহ আছে তারা বসে না থেকে দেশের ভিতরের ফ্যাকাল্টি বা দেশের বাইরে যারা আছে তাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করে পাবলিকেশন করে সেটা নিয়ে এপ্লিকেশনে দাঁড়াচ্ছে, খুব ভালো করছে।
অনেকেরই গবেষণার প্রতি এমনিতেই আগ্রহ থাকে আর আগ্রহ তৈরির জন্য আমাদেরকে সেই আউটকামটা দেখাতে হবে যে তুমি যদি গবেষণায় ভালো করো বা এই পথে অগ্রসর হও তাহলে কি কি সুযোগ তোমার সামনে আছে, সেই জিনিসটা যদি আমরা দেখাতে পারি তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা আরো আগ্রহী হবে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাশ করার পর মানুষ চাকরিতে যোগদান করে বেশ ভালো বেতন পাচ্ছে। এক্ষেত্রে উচ্চ বেতন একটা মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। গবেষণার ক্ষেত্রে বেতনের চেয়ে বেশি যেটা মোটিভেশন হিসেবে আসে সেটা হলো কাজের স্বীকৃতি। আপনি একটা সিস্টেম ডেভেলপ করলেন, ডিজাইন করলেন যেটা অনেকে ব্যবহার করবে বা একটা সমস্যার আপনি সমাধান দিলেন, এইগুলোতে যারা মোটিভেটেড তারাই গবেষণার প্রতি আগ্রহী হবে।
যেমন ধরেন, কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই যারা দেশের বাইরে আছে, তারা কি কি কাজ করছে এবং তাদের কাজের ইমপ্যাক্ট কি হচ্ছে সেগুলো যদি আমরা ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দেখাতে পারি তাহলে তারা খুব সহজেই মোটিভেটেড হবে, আমরা এভাবে শুরু করতে পারি। আমি জানি বুয়েটে এই সংস্কৃতি চালু আছে। বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রী যারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে বা কাজ করছে তারা যখন দেশে যায়, ঘুরতে গেলে বা কোনো কাজে গেলেও তারা বুয়েটে একটা সেমিনার করে তাদের গবেষণা সম্পর্কে বা কাজ সম্পর্কে বলে। এতে বুয়েটের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী যারা আছে তারা অনেক নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে, মোটিভেটেড হয়, এই সংস্কৃতিটা যদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও চালু করে তাহলে আমার মনে হয়ে বেশ ভালো হবে।
টেকিজ : যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চান তাদের প্রতি আপনার শেষ পরামর্শ কী থাকবে?
নাঈমুল হাসান : শেষ পরামর্শ থাকবে সবাই কি করছে সেখানে ফোকাস না করে যার যেটা ইচ্ছা বা প্যাশন, সে যদি সেটা অনুসরণ করে তাহলে মনে হয় ভালো করবে। যেমন, এখন সবাই এআই, ডিপ লার্নিং বা ডাটা সায়েন্স নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, কারো যদি এগুলোতে ইন্টারেস্ট থাকে তাহলে খুবই ভালো, এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে, পরিশ্রম করবে, কিন্তু কারো যদি পছন্দ থাকে ভিন্ন কিছুতে, যেমন, ভিজুয়ালাইজেশন, কম্পিউটার গ্রাফিক্স বা গেমিং বা অন্য কিছু, সে ক্ষেত্রে তার উচিত হবে সবার সাথে গা ভাসিয়ে না দিয়ে তার পছন্দনীয় বিষয় নিয়েই কাজ করা। পছন্দনীয় বিষয়ে কাজ করার সুযোগ পেলে সে হয়তো তার নিজস্ব সৃজনশীলতা, দক্ষতা পরিপূর্ণ রূপে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। এই পরামর্শ সবার জন্যই থাকবে।
টেকিজ : উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে মূল্যবান মতামত দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
নাঈমুল হাসান : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই সুযোগ দেবার জন্য। আশা করছি এই তথ্যগুলো কারো না কারো কাজে আসবে।