এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : হুকুমের বাইরে যাওয়া যাবে না। সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের পরিবারেও কিছু করা যাবে না। বিশ্বের অন্য কারও সঙ্গেও যোগাযোগ নিষিদ্ধ। বিদেশি পর্যটকরাও থাকেন কড়া নিরাপত্তায়। সরকারের সমালোচনা করলে বা বিরোধী কোনো মনভাব প্রকাশ করলেই মৃত্যুদণ্ড বা কারাদণ্ডের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। পান থেকে চুন খসলেই নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করায় শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিজের আÍীয়দেরও ছাড় দেয় না। খ্রিস্টানদের জন্য জলন্ত কারাগার। দেশের কোথাও খ্রিস্টান পাওয়া গেলেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাকস্বাধীনতা দূরের কথা জনগণের মৌলিক চাহিদাও এই পরিবারের মুঠোবন্দি। ১৯৪৫ সালে জাপানের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর থেকে তিন পুরুষ ধরে উ. কোরিয়ায় একনায়কতন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে কিম পরিবার। আর এই সাত বছর ধরেই উত্তর কোরিয়াকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে তারা।
বিগত কয়েক দশক থেকেই উত্তর কোরিয়ায় চলছে পারিবারিক স্বৈরশাসন। কিমের পরিবারের তিন প্রজন্মের কাছেই যুগের পর যুগ ধরে দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা গচ্ছিত আছে। ১৯৪৮ সালে উত্তর কোরিয়ার প্রথম ও ‘চিরন্তন’ প্রেসিডেন্ট কিম ইল-সুং (কিমের দাদা) ক্ষমতায় আসেন। দেশটির সরকারি বর্ষপঞ্জির শুরু কিম ইলের জন্মবর্ষ ১৯১২ সাল থেকে। ১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধের পর দশকের পর দশক ধরে দেশ শাসন করেছেন ইল। ১৯৮০ সালের পার্টি কংগ্রেসে তিনি ঘোষণা করেন, পুত্র কিম জং-ইল (কিমের বাবা) তার উত্তরাধিকারী হবেন। ২০১১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাবার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন কিম জং উন।
উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই দেশটিকে পরমাণু শক্তিধর করে তুলেছেন কিম। অন্য শক্তিশালী দেশগুলোর হুমকিকে তোয়াক্কা না করে একের পর এক অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছেন তিনি। বাপ-দাদার কিছু রীতি ভেঙে ক্ষমতায়নে নারীদের সামনে এনেছেন কিম। প্রথমবারের মতো নিজের স্ত্রী রি সোল জুকে ফার্স্টলেডির মর্যাদা দিয়েছেন। ছোট বোন কিম ইয়ো জংকে দলের কার্যনির্বাহী পরিষদ পলিটব্যুরোর সদস্য পদে বসান। উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের কাছে কিম জং উন ভগবানতুল্য। তবে সেটা বাধ্য হয়ে ও ভয়ের কারণে। সরকারের সমালোচকদের কখনও ক্ষুধার্ত কুকুরের মুখে ঠেলে দিয়ে। কখনও কামানের তোপ। আবার কখনও সামনে থেকে গুলি করে দণ্ড দেয়ার একাধিক নজির রয়েছে কিমের। ‘নৃশংস’ এ শাসক অন্তত তিন শতাধিক অভিজাত লোককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল রি ইয়ং গিলকে কামানের গোলায় উড়িয়ে দেন তিনি। ২০১৪ সালে সরকারবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ক্ষুধার্ত কুকুরের পালে ছেড়ে হত্যা করেন নিজ চাচা জং সাং থায়েককে। জ্যাংয়ের রক্ত সম্পর্কের কাউকে বাঁচিয়ে রাখেননি কিম। রেহাই পায়নি নিরপরাধ শিশুরাও। সামরিক বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে বিমানবিধ্বংসী কামানের গোলায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিওন ইয়ং চলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন কিম।