এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : বোলিংয়ে ব্যর্থতা শুরু আর শেষে। ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা পুরো ইনিংস জুড়েই। ফিল্ডিংও হলো না খুব দারুণ কিছু। তিন বিভাগেই আফগানদের দাপটে অসহায় বাংলাদেশ পারল না লড়াই করতেও। হতাশার হারে সিরিজ শুরু হলো বাংলাদেশের।তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে দেরাদুনে রোববার বাংলাদেশকে ৪৫ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান।
উদ্বোধনী জুটির গড়ে দেওয়া শক্ত ভিত্তির পর শেষের ঝড়ে আফগানরা ২০ ওভারে তুলেছিল ১৬৭ রান। মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে পারেনি বাংলাদেশ। এক ওভার বাকি থাকতে গুটিয়ে গেছে ১২২ রানে।
অধিনায়ক সাকিবের একটি বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত আর শেষ দিকে পেসারদের বাজে বোলিংয়ে বাংলাদেশের লক্ষ্যটা দাঁড়ায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। ১ ওভারে ২ উইকেট নেওয়া মাহমুদউল্লাহ আর বোলিংই পেলেন না। শেষ দিকে বেদম মার খেলেন পেসাররা। শেষ ৫ ওভারে আফগানিস্তান তুলল ৭১ রান।
রান তাড়ায় যেখানে প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত শুরু। হয়েছে উল্টো। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম গোল্ডেন ডাকের জন্য তামিম ইকবাল বেছে নিলেন এই দিনকেই। মুজিব উর রেহমানকে অতি দুর্ভাবনা থেকেই কিনা, প্রথম বলেই সুইপ করতে চেয়ে পরে মত বদলে ডিফেন্স করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ দৃষ্টিকটু ভাবে।
তিনে নেমে সাকিব শুরু করেছিলেন ভালো। তিনিও উইকেট বিলিয়ে এসেছেন বাজে শটে।
চাপ কাটিয়ে ওঠার প্রয়াস ছিল লিটন দাসের ব্যাটে। খেলেছেন দারুণ কিছু শট। তার ২০ বলে ৩০ রানের সম্ভাবনাময় ইনিংসের অপমৃত্যু আম্পায়ারের ভীষণ বাজে এক সিদ্ধান্তে।
ভরসা ছিল তখন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতায়। দুজনের শুরুটাও ছিল ভালো। কিন্তু মুশফিক ফিরলেন প্রত্যাশাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।
রশিদ খানকে নিয়ে জুজুর ভয়টাই হয়ত কাল হলো। প্রথম বলেই এই লেগ স্পিনারকে সুইচ হিট খেলতে গিয়ে বোল্ড মুশফিক। পরের বলে গুগলিতে পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে আউট সাব্বির রহমান। বাংলাদেশের আশার একরকম সমাপ্তি ওখানেই।
মাহমুদউল্লাহ লড়াই চালিয়ে গেছেন। তাতে ব্যবধান একটু কমেছে। তারপরও শেষ পর্যন্ত সেটা বেশ বড়।
সিরিজ শুরুর আগে যেটা নিয়ে ছিল তুমুল আলোচনা, সেই আফগান স্পিন আক্রমণ যথারীতি ছিল দুর্দান্ত। ১৩ রানে ৩ উইকেট রশিদের। নবি ও মুজিবও বল হাতে ছিলেন উজ্জ্বল।
যদিও বাংলাদেশের কাজ অনেকটা কঠিন হয়ে গেছে ম্যাচের প্রথম ভাগেই। মন্থর উইকেটে ১৬৭ রান তুলেই জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে যায় আফগানরা।
টস হারের পর আসগর স্টানিকজাই হাসিমুখে বলেছিলেন, “টস কোনো ব্যাপার না। আর জিতলে আমরা ব্যাটিংই করতাম। আফগান অধিনায়কের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলনই যেন পড়ে দুই আফগান ওপেনারের ব্যাটিংয়ে। মোহাম্মদ শাহজাদ ও উসমান গনি দলকে এনে দেন দারুণ শুরু।
ম্যাচের প্রথম ওভারে আবু জায়েদকে দুটি বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলেন দুজন। শাহজাদের সহজাত বিস্ফোরক ব্যাটিং এদিন ততটা দেখা যায়নি। তবে দুজনের জুটি ছিল কার্যকরি।
প্রথম ৪ ওভারে বাংলাদেশ রানটা একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও পঞ্চম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপুকে ছক্কা মারেন গনি, টানা দুটি চার মারেন শাহজাদ।
মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা উদ্বোধনী জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙেন দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা রুবেল। তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে উড়ে যায় গনির স্টাম্প। ততক্ষণে আফগানিস্তানের রান উঠে গেছে ৬১।
পরের কিছুটা সময় ছিল বাংলাদেশের। রানের গতিতে বাঁধ দেওয়ায় ধরা দেয় উইকেটও। শাহজাদের ফিরতি ক্যাচ ছাড়লেও সেই ওভারেই পুষিয়ে দেন সাকিব। রানের জন্য অস্থির হয়ে ওঠা শাহজাদ পয়েন্টে ক্যাচ দেন সুইচ হিট খেলে। ৪০ রান করেছেন তিনি ৩৭ বলে।
মন্থর উইকেটে আফগানদের আরও ভোগান মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ। মোসাদ্দেকের ওভারে আসে মাত্র ৩ রান। মাহমুদউল্লাহ ওভারে ১ রান দিয়ে নেন বিপজ্জনক দুই ব্যাটসম্যান নাজিবুল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবির উইকেট।
ম্যাচে তখন দারুণ ভাবে ফিরেছে বাংলাদেশ। ১৫ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৪ উইকেটে ৯৬।
এরপরই পালাবদল। বিস্ময়কর ভাবে মোসাদ্দেক ও মাহমুদউল্লাহকে আর বোলিংয়ে আনলেন না সাকিব। শেষের দিকে উদার হাতে রান বিলিয়ে দিলেন তিন পেসার রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ ও আবুল হাসান। বাজে বোলিং কাজে লাগিয়ে ঝড় তুললেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও শফিকউল্লাহ।
আবু জায়েদের এক ওভারেই দুটি করে চার ও ছক্কা মারেন শেনওয়ারি। ১৮ বলে ৩৬ করে শেনওয়ারি ফেরার পর শুরু করেন শফিকউল্লাহ। প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা রুবেলকে। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি ছক্কা আবুল হাসানের স্লোয়ারে।
পরের বলটি ছিল ফুলটস। ভাগ্যক্রমে লাইন মিস করে বোল্ড হন ৮ বলে ২৪ রান করা শফিকউল্লাহ। ওই ওভারে উইকেট আসে আরও দুটি। কিন্তু শেষ বলে দারুণ এক ছক্কায় শেষ করেন রশিদ। শেষ ৩ ওভারে আফগানরা তোলে ৫২ রান।
মুস্তাফিজুর রহমানের চোটে সুযোগ পেয়ে বিস্ময়কর ভাবে একাদশেও ঢুকে পড়া হাসান ছিলেন সবচেয়ে খরুচে। অতিরিক্ত স্লোয়ার বলের ব্যবহারে অনুমিত হয়ে পড়া বোলিংয়ে ৩ ওভারে হজম করেছেন চার ছক্কা। ৩ ওভারে গুনেছেন ৪০ রান।
খুব ভালো করতে পারেনি আবু জায়েদ, রুবেলরাও। চার স্পিনার মিলে যেখানে ১০ ওভারে দিয়েছেন ৫৫ রান, তিন পেসারের ১০ ওভারে সেখানে এসেছে ১০৬!
শেষ পর্যন্ত সেটিই হয়ে গেছে বড় পার্থক্য। আফগান ব্যাটসম্যানরা ঝড় তুলেছেন। স্পিনাররা রাজত্ব করেছেন। পরদেশে ‘স্বাগতিক’ আফগানিস্তান রাঙিয়েছে দেরাদুনের অভিষেক ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৭/৮ (শাহজাদ ৪০, গনি ২৬, স্টানিকজাই ২৫, নাজিবুল্লাহ ২, নবি ০, শেনওয়রি ৩৬, শফিকুল্লাহ ২৪, রশিদ ৬*, করিম ০, মুজিব ০*; আবু জায়েদ ১/৩৪, নাজমুল অপু ০/৩২, রুবেল ১/৩২, সাকিব ১/১৯, আবুল হাসান ২/৪০, মোসাদ্দেক ০/৩, মাহমুদউল্লাহ ২/১)।
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১২২ (তামিম ০, লিটন ৩০, সাকিব ১৫, মুশফিক ২০, মাহমুদউল্লাহ ২৯, সাব্বির ০, মোসাদ্দেক ১৪, আবুল হাসান ৫, নাজমুল ৪*, রুবেল ০, আবু জায়েদ ১; মুজিব ১/২০, শাপুর ৩/৪০, নবি ২/২০, করিম ১/২৭, রশিদ ৩/১৩)
ফল: আফগানিস্তান ৪৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রশিদ খান