এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রভাবশালী দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। দলের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ভারত সফরে রয়েছেন। তারা সেখানে কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ বিজেপির প্রভাবশালী নেতা এবং থিঙ্ক ট্যাংকদের সাথে একাধিক বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে আগামীতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সহযোগিতা আশা করছে।
ভারত ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথেও নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বিএনপি। দলটির একটি প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে চীন সফর করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে রয়েছেন বলে কূটনৈতিক তৎপরতার সাথে যুক্ত দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল তিন দিনের ভারত সফরে রয়েছেন। তারা হলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
জানা গেছে, ভারত সফরে বিএনপি নেতারা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) নেতাদের পাশাপাশি বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধীর সাথে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া ভারতের তিনটি থিঙ্ক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সাথে তারা বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে আলোচনার মূল প্রসঙ্গ ছিল বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির নানা দিক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
জানা গেছে, রিলায়েন্স গ্রুপের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা বিজেপির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ থিঙ্ক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের নানা দিক, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। অবজারভার ফাউন্ডেশনের সম্মানিত একাধিক ফেলো এই আলোচনায় অংশ নেন। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন গত ১৮ এপ্রিলে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। বিজেপির ঘনিষ্ঠ একজন ফেলো ও সাংবাদিক মনোজ যোশী এই বিশ্লেষণে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, ভারতের থিঙ্ক ট্যাংক ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আলোচনায় আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের মনোভাবের কিছুটা ইঙ্গিত তারা পেয়েছেন। মনোজ যোশী এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, তাতে মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সেই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এবং সে সময় অনেক সহিংসতা হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশা বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন যেন আগের বারের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য হয়। বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভারতের দিক থেকে এমন অবস্থানের ইঙ্গিত পেয়েছেন। ভারত চায় বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এমনকি আগামী নির্বাচন বিষয়ে বিএনপি ছাড়াও একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে ভারত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
জানা গেছে, ভারতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকে বিএনপি নেতারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে আগামী নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে জন্য ভারতের প্রভাব কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিএনপি নেতারা মনে করেন, আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফাভাবে করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ জন্য ভারতের প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। ভারত সফররত বিএনপি নেতারা দেশটির রাজনৈতিক নেতা ও থিঙ্ক ট্যাংকের সাথে আলোচনায় বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনের গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরেন। গণতন্ত্রের বিজয় হলে ভারতের বিজয় হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে, তার প্রভাব ভারতেও পড়বে এমন ধারণা দেন তারা।
এ দিকে কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে সম্প্রতি চীন সফর করেছেন বিএনপির একাধিক নেতা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর অংশ হিসেবে দেশের বাইরে রয়েছেন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে কয়েক দিনের যাত্রাবিরতি শেষে তিনি লন্ডনে গেছেন। রোববার লন্ডনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি আয়োজিত একটি সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি। নর্থ লন্ডনের হোটেল রয়েল রিজেন্সিতে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মির্জা ফখরুল গত সপ্তাহে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এর মধ্যে কয়েক দিন তিনি ব্যাংককে কাটান। সেখান থেকে লন্ডনে গেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। অপর দিকে চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ঢাকায় প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভারতের ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী বড় দেশ হিসেবে শুধু নয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত ‘সরাসরি হস্তক্ষেপ’ করেছে বলে অনেকে মনে করেন। কারো কারো মতে, ভারতের সমর্থনের কারণে ১৫৩ আসনে কোনো ভোট ছাড়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়ে মেয়াদ পূরণ করতে পারছে আওয়ামী লীগ সরকার।
বিএনপি নেতাদের ভারত সফর আগামী নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপির সাথে ভারতের যোগাযোগ নতুন নয়। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ভারত শুধু ক্ষমতাসীন দল নয়, বিরোধী দলের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। ভারত ছাড়াও আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৎপর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।