এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ডিজাইনার কেট স্পেড এবং তারকা শেফ এন্থনি বুরদিন আত্ম করেছেন গত সপ্তাহে।
যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার হার সতেরো বছরে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সরকারের নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন এমন এক সময় প্রকাশ করা হলো, যখন ডিজাইনার কেট স্পেড এবং তারকা শেফ এন্থনি বুরদিন এর আত্নহত্যার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি ।
১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সতেরো বছরে আত্নহত্যার হার এবং পরিস্থিতি কি দাঁড়িয়েছে, এর চিত্র উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
তাতে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র জুড়েই আত্নহত্যার হার বেড়েছে। বলা যায়, এক লাখ আমেরিকানের মধ্যে ১৬ জন আত্নহত্যা করছেন। ২০১৬ সালে প্রায় ৪৫ হাজার আমেরিকান আত্নহত্যা করেছেন।
সব বয়সের নারী পুরুষ, সব গোষ্ঠী এবং নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যেই আত্নহত্যার হার বেড়েছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন তৈরির সাথে জড়িত অন্যতম একজন গবেষক ড:দেবোরা স্টোন বিবিসিকে বলেছেন,তাদের গবেষণায় অনেকটা সময় ধরে তারা আত্নহত্যা বৃদ্ধির হার অনুসরণ করেছেন।
“আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতে পরিস্থিতি কী, সেটাও তুলে এনেছি আমাদের গবেষণায়। ২৫টি রাজ্যে আত্নহত্যার হার ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, এটি আমাদের গবেষণায় নতুন আবিস্কার বলা যায়।”
আমেরিকায় আত্নহত্যার হার কেন এত বেড়েছে?
আত্নহত্যার হার বৃদ্ধির পিছনে একক কোন কারণ নেই বলে গবেষকরা বলছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,অনেক রকম বিষয় কাজ করে আত্নহত্যা করার ক্ষেত্রে।
তবে গবেষক ড: দেবোরা স্টোন বলেছেন, বেশিরভাগ আত্নহত্যার ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়গুলো এবং অর্থনৈতিক সমস্যাকে তারা বড় কারণ হিসেবে পেয়েছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের রাজ্য, যেগুলোতে এখনও গ্রামীণ পরিবেশ রয়েছে, সেই রাজগুলোতে অতীতের মতো এখনও আত্নহত্যার হার বেড়ে চলছে।
এই রাজ্যগুলোতে অর্থনৈতিক সমস্যা আছে। আর এগুলোতে বসবাসকারী মানুষ এখনও অনেকটা একঘরে হয়ে রয়েছে। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতার কী কোনো যোগসূত্র আছে?
সিডিসি গবেষণায় দেখা গেছে, আত্নহত্যার ৫৪ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতার কোনো বিষয় ছিল না।
ন্যাশনাল অ্যাকশন অ্যালায়েন্স ফর স্যুইসাইড প্রিভেনশন এর ড: জেরি রিদ বলেছেন, গুরুতর অসুস্থতা এবং আত্নঘাতী আচরণের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে বলে তিনি মনে করেন।
তবে মানসিক অসুস্থতাই একমাত্র কারণ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তার বক্তব্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিণতি এবং জীবনধারণের অবনতির সুযোগ মানুষকে আত্নহত্যার ঝুঁকিতে ফেলে।
আরেকজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সিরেল বলেছেন,অনেকে মানুষের যাদের মানসিক অসুস্থতা চিহ্নিত হয়েছে।তারা কিন্তু আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়নি। “এটা সরলীকরণ করা যাবে না যে, মানসিক অসুস্থতার কারণেই আত্নহত্যা করছে।”
পরিস্থিতি সামলাতে সচেতনতা সৃষ্টির চিন্তা : বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষকে শিক্ষা দেয়া বা তাদের সচেতন করার কর্মসূচি নেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।
মানুষ কোনো জটিল সমস্যায় পড়লে কিভাবে তা সামাল দেয়া যায় অথবা আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে? এসব প্রশ্নে শিক্ষা কর্মসূচি নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
ড: রিদ বলেছেন, “কিভাবে পড়তে হবে বা লিখতে হবে, এসব আমরা শিক্ষা নেই।সেখানে মানুষকে তার নিজের সংকট সামাল দেয়ার শিক্ষা আমরা অবশ্যই দিতে পারি।”