এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইসরাইলের স্বার্থে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ছাড়ল যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার কমিশনকে ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের বিরক্তিকর স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করে মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সংস্থাটিকে ‘ইসরাইলবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে। তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে থাকুক। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যায়েদ রা’দ আল হুসেইন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে হতাশাজনক তবে বিস্ময়কর খবর নয় বলে মন্তব্য করেছেন। কাউন্সিল ছাড়ার মার্কিন এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরাইল।
নিকি হ্যালি এই কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই ভণ্ড ও আত্মসেবায় নিয়োজিত গোষ্ঠী মানবাধিকারের চরম উপহাস করছে।’ গত বছরও কাউন্সিলকে ‘ইসরাইলবিরোধী’ আখ্যা দিয়েছিলেন হ্যালি। তার অভিযোগ, মানবাধিকার কাউন্সিল ধারাবাহিক ইসরাইলবিদ্বেষী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এখান থেকে সরে না এলে যুক্তরাষ্ট্র কমিশন ছেড়ে যাবে বলে হুমকিও দেন তিনি। কমিশন ছাড়ার ঘোষণা দিতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হ্যালি বলেন, কাউন্সিলটি ‘মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে খুবই দুর্বল সংগঠন’।
ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিতে মেক্সিকো থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের আটক করায় হাজার হাজার শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যেই মানবাধিকার পরিষদ থেকে দেশটির বেরিয়ে যাওয়ার এ ঘোষণা এলো।
ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল নামের রাষ্ট্র। ১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ইহুদি বসতি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। পরের বছর থেকেই ৩০ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পরবর্তী ছয় সপ্তাহকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। ‘গ্রেট রিটার্ন মার্চ’ নামে অনুষ্ঠিত এবারের সেই বিক্ষোভ কর্মসূচির শেষ দিনের আগে (১৪ মে) জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ জোরালো হয়ে উঠলে এক দিনেই ৬৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী।
৪৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার প্যানেল গত মাসের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর ওই হত্যাযজ্ঞের তদন্তের পক্ষে অবস্থান নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাকটিভিস্ট ও কূটনীতিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ১৭ জুন (শনিবার) গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয়েছিল, ‘ইসরায়েলবিদ্বেষী’ ভূমিকাকে কারণ দেখিয়ে কমিশন থেকে সরে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর এবার জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসাটা ট্রাম্পের চরম জোটবিমুখ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মানবাধিকার পরিষদে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি একেবারে নির্ধারিত স্থায়ী আলোচ্য বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। ওয়াশিংটন চায় এ আলোচ্যসূচি বাদ দেয়া হোক।
মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক হতাশা জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা। জাতিসংঘে স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রদূত ও পরিষদের বর্তমান সভাপতি ভজিস্লাভ সুচ বলেছেন, ‘শক্তিশালী ও ক্রিয়াশীল এ পরিষদকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’ পরিষদের সংস্কারকে ‘প্রয়োজনীয়’ অ্যাখ্যা দিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘ট্রাম্পের মানবাধিকার নীতি একপেশে।’
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। পরিষদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মার্কিন সিদ্ধান্তের পর বেশ কয়েকটি টুইটে ট্রাম্প ও মাইক পম্পেওকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।