এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটের পুরো সিস্টেমের পরীক্ষা শেষে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্বিঘ্নে মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সংকেত দেওয়া নেওয়াসহ সার্বক্ষণিকভাবে সেটির গতিবিধি ও অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্পের পরিচালক মো. মেসবাহুজ্জামান বলেন, “এখনও ফুল সিস্টেমটিকে টেস্ট করা হচ্ছে, আমরা যেভাবে চাচ্ছি সেভাবে ওটা ফাংশনাল কিনা তা দেখা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। এভাবে ফুল টেস্ট শেষ করতে হয়ত সেপ্টেম্বর লেগে যাবে। তারপর আমরা কমার্শিয়াল অপারেশনে যাব।”
বাংলাদেশের একমাত্র উপগ্রহটির পরিষেবা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) সঙ্গে রোববার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি। বাণিজ্যিক সেবা নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে বিসিএসসিএলকে প্রস্তাবও পেয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে চুক্তি হবে।
মেসবাহুজ্জামান বলেন, বেতবুনিয়া ও গাজীপুরে গ্রাউন্ড স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে যত যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়েছে- যেমন এন্টেনা, নেটওয়ার্কিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ছোট ছোট ভাগ করে টেস্টিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গ্রাউন্ড স্টেশন ও এন্টেনা টেস্ট করা শেষ হয়েছে। এগুলো এখন পারফেক্টলি ফাংশনাল। এখন গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বিভিন্ন প্রসেসে স্যাটেলাইট টেস্ট করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর নির্দিষ্ট দূরত্বে (প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে, ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে) স্যাটেলাইটটি অবস্থান করছে।
ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-ইটালি থেকে স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও এখন গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ‘ট্র্যাকিং এবং কন্ট্রোলিং’ করা হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “ট্র্যাকিংয়ের আন্ডারে অনেক অ্যানালাইসিস আছে। কন্ট্রোলিংয়ের সঙ্গেও অনেক বিষয় আছে। স্যাটেলাইট সিগন্যাল যেটা পাঠায় ওটা আমরা রিসিভ করি। ওই সিগন্যাল দিয়ে আমরা তা চেক করি। পরে ওই সিগন্যালের উপর বেসিস করে আবার সিগনাল পাঠিয়ে স্যাটেলাইটটিকে কন্ট্রোল করা হয়।”
আদান-প্রদানের প্রক্রিয়ায় সিগন্যালের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকছে কিনা তা পরীক্ষা করতে ফ্রিকুয়েন্সি অ্যানালাইজার ও স্পেক্ট্রাম এনালাইজারসহ বিভিন্ন জটিল ইকুপমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে এ পরীক্ষা করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। যে পরিমান সিগন্যাল পাঠানো হয়েছে সেই পরিমাণ সিগন্যালই ফেরত পাওয়া গেছে।
গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনে ৩০ জন বাংলাদেশি ও ১০ জন ফরাসি প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
গ্রাউন্ড স্টেশনের কনসালটেন্ট এসএম নুসরাত দস্তগীর বলেন, এই কমিউনিকেশন সাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
“এছাড়াও এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমেআবহাওয়ার পূর্বাভাস, টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-রিসার্চ, ভিডিও কনফারেন্স প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে।”
দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এজন্য বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালুর ফলে অনেকাংশেই কমে আসবে এ ব্যয়। একই সঙ্গে দেশের টাকা থেকে যাবে দেশেই; আয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে নেপাল, মিয়ানমার, ভুটান ও অন্যান্য দেশের কাছে সেবা ভাড়া দিতে পারবে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা যাবে।